
কবিতা : তাহারেই পড়ে মনে
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: প্রিয়জন হারানোর বেদনা কীভাবে মানুষের মনে চিরজাগ্রত থাকে? ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা অবলম্বনে তা লেখ।
উত্তর: প্রিয়জন হারানোর বিষাদঘন বেদনা মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়, অব্যক্ত শূন্যতায় ভারাক্রান্ত করে। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় তার ব্যক্তিজীবনের এমন বেদনার স্মৃতিকেই তুলে ধরেছেন।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিষণ্ন ও উদাস করে তোলে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি ও কবিভক্তের সংলাপে কবির নিরাসক্ত উদাস ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি শীতের রিক্ততা ভুলতে পারেননি, এ রিক্ততা আসলে প্রিয়জন হারানোর বিষাদরূপ। কারণ তার মনোজগতে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা গভীর হয়ে বারবার উঁকি দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর বেদনা কবিকে জীবনবিমুখ করে তুলেছে, কেননা তিনি নিরাসক্ত বিষণ্ন এক মানুষ। হৃদয়ের গভীর ক্ষতকে চাইলেই ভোলা যায় না- এ তারই প্রমাণ।
প্রশ্ন: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে বিষাদঘন একাকিত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কবির শোকের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে, যেখানে একাকিত্বের গভীর বিষাদ-সুর প্রকট হয়েছে।
স্বজন হারানোর বেদনা বা মৃত্যুজনিত হাহাকার মানুষকে কেমন বদলে দিতে পারে, তা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির অনুভূতি থেকে দেখা যায়। প্রিয়জন হারিয়ে একাকী জীবনযাপন করতে থাকা কবি এতটাই উদাসীন হয়ে পড়েন যে, প্রকৃতিতে শীত চলে গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবি তা অনুভব করেননি। কবিভক্ত কবিকে বসন্ত বন্দনামূলক গান রচনা করতে অনুরোধ করলেও সাড়া দেন না কবি। কারণ কবির মনে যে বিষাদময় স্মৃতি বারবার ফিরে আসে, তা কিছুতেই ভুলতে পারেন না কবি। কবির এই বিষাদময়তা ও একাকিত্বের প্রভাব তার কাব্য সৃষ্টিতেও বাধা দিয়েছে।
আরো পড়ুন : তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ৪টি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ৫ম পর্ব
প্রশ্ন: ‘অলখের পাথার বাহিয়া’-কথাটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার এ চরণে সুদূরতম কোনো স্থানের ইঙ্গিত দেওয়ার লক্ষ্যে কবি ‘অলখের পাথার বাহিয়া’ চিত্রকল্পের অবতারণা করেছেন।
‘অলখের পাথার বাহিয়া’-বাক্যটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় দৃষ্টিসীমার বাইরে সমুদ্রপথ থেকে ছুটে আসা কোনো কিছু। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় স্মৃতিভারাক্রান্ত কবির মনে বসন্তের আগমনের দৃশ্যের দূরত্ব বোঝাতে এই চিত্রকল্পটি ব্যবহৃত হয়েছে। বসন্তে আসা হাওয়া যে অতি দূর সমুদ্র থেকে আমাদের প্রকৃতিতে প্রবেশ করে, তা কবি জানতেন। কবির হৃদয়ে যেন বসন্তের আগমনের মতোই সুদূর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে কোনো এক সুখকর স্মৃতি দুয়ারে এসে হানা দেয়। এখানে প্রিয়-মানুষটির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার প্রতিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতি আর মানবমন এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে যার সঙ্গে তুলনা করেছেন, তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা কবির রিক্ততার অনুভূতিকেই প্রকাশ করেছে।
শীত মানেই রিক্ততা, ফল ও ফসলশূন্যতা। শীত ঋতুতে নিঃস্বতা ও রিক্ততার যে ছবি দেখা যায় তাতে প্রকৃতিকে সন্ন্যাসীর মতো অলংকারহীন মনে হয়। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ত ও জরাজীর্ণতাকে বোঝাতে শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলে উল্লেখ করেছেন। শীত ঋতুতে চারদিকে পাতাবিহীন গাছে যে প্রাকৃতিক রুক্ষতা তৈরি হয়, তা দৃশ্যত সন্ন্যাসীর মতোই মনে হয়। আসলে প্রিয়হারা কবিও তার ভগ্ন হৃদয়কে শীতরূপী সন্ন্যাসীর মতোই ভেবেছেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কবীর