আসিফ ইসলাম
গত মাসে রাশিয়ার মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘নির্বাণ’। পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া, সিনেমাটির বিষয়বস্তু ও পরের কাজ নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বললেন পরিচালক আসিফ ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাসেল মাহ্মুদ
পুরস্কার পেয়ে যাবেন, সেটা কি ভেবেছিলেন?
একদম ভাবিনি। এই ছবিতে একটা এলজিবিটিকিউ ইস্যু আছে। সংবাদ সম্মেলনের আগে গম্ভীর স্বরে আমাদের জানাল, এই ইস্যু নিয়ে যেন কোনো কথা না বলি, কেউ প্রশ্ন করলে যেন জবাব না দিই। রাশিয়ায় এটা নিষিদ্ধ জানতাম না। পুরস্কার পাওয়ার ন্যূনতম যে আশাটুকু ছিল, সেটাও চলে গেল। তা ছাড়া মানের দিক থেকে অন্য সিনেমাগুলো ছিল অসাধারণ। পুরস্কার ঘোষণার দিনে একের পর এক সিনেমার নাম ও পুরস্কার ঘোষণা করছিল। সবশেষে যখন আমাদের ছবির নাম বলল, আমি এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
দর্শক হিসেবে সিনেমাটা কেমন লেগেছে?
আমাদের ছবির প্রদর্শনী যেদিন হবে, ভেবেছিলাম ছবিটা ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিতে দেখব। কারণ আমি যেখানে এডিট করেছি, সেই পর্দাটা ততটা বড় ছিল না। বড় পর্দায় দেখলে বোঝা যাবে যে, ছবিটা কেমন হলো। কিন্তু হলে ঢুকে আমি হতবাক। এত বড় পর্দা আমি জীবনেও দেখিনি। পর্দার সামনে দর্শকদের পিঁপড়ার সমান মনে হচ্ছিল। আমাদের ছবি এত বড় পর্দায় দেখাবে ভেবে নিজেই দর্শক হয়ে গেলাম। তখন সাধারণ দর্শক হয়েই সিনেমাটা দেখেছি।
রাশিয়ায় প্রদর্শনীর পর সেখানকার দর্শকরা কী বলল?
অনেক প্রশংসা করল। রুশ ভাষা জানি না, কেবল তাদের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল যে, ছবিটি তাদের ভালো লেগেছে। অনেকে বলছিল, শহুরে জীবনের চাপ থেকে ৯০ মিনিটের জন্য যেন মুক্তি পেয়েছিলেন। একটা অন্যরকম প্রশান্তি নিয়ে হল থেকে বেরিয়েছেন তারা। সতেরো বছরের এক তরুণী আমার সঙ্গে ছবি তুলল। সে রাশিয়ার তরুণতম ফিল্ম ক্রিটিক। সে বলল, ছবিটা নিয়ে লিখবে। সত্যি বলতে, প্রথমবার ছবির স্কোরিং শোনার পর আমিও অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। ছবির চেয়ে আবহসংগীতের মান অনেক বেশি ভালো হয়েছে।
এই সিনেমার পরবর্তী ভ্রমণ কোথায়?
সিনেমাটি চলতি বছর আরও কয়েকটি উৎসবে যাবে। তারপর দেশে মুক্তি দেওয়া যায় কি না, দিলে কোথায়-কীভাবে দেব- ভাবতে হবে। এটা আসলে অন্য দশটা হইচই ফেলে দেওয়ার মতো সিনেমা নয়। সাদা-কালো সিনেমা, সংলাপ নেই। এটা মানুষের কান ও মনকে আরাম দেবে, উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারবে না। এই ছবি কোনো ওটিটিও নেবে কি না আমার সন্দেহ আছে।
আপনার পরের কাজ নিয়ে কী ভাবছেন?
পরের কাজ নিয়ে ভাবনা শেষ। একজন ভালো অভিনেতা খুঁজছি, যে সত্যিকার অর্থে ডিরেক্টরস আর্টিস্ট। অনেক স্যাক্রিফাইস করে তাকে কাজটা করতে হবে। যারা অনেক ব্যস্ত আর্টিস্ট, তারা হয়তো এ রকম ছবিতে আসতে চাইবেন না। আমাদের প্রি-প্রোডাকশনের কাজ প্রায় শেষ। অভিনেতা পেয়ে গেলেই কাজ শুরু করব।
জাহ্নবী