
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও হামলা হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন।
আল-জাজিরার খবর বলছে, দক্ষিণ গাজা ও গাজা সিটিতে বেসামরিকদের বাসাবাড়ি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এরই মধ্যে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ।
গত সোমবার দিবাগত রাতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা করে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, নতুন বোমাবর্ষণ শুধু ঘটনার ‘শুরু’। আগামীতে যে হামলা আরও বাড়বে, তারই একটি আভাস দিলেন তিনি।
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয় ১৯ জানুয়ারি। দুই মাস স্থায়ী সেই যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলে ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলমান ছিল। এখনো আলোচনা চলবে। কিন্তু এবার আলোচনা হবে লড়াইয়ের পাশাপাশি।
নতুন করে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মুখে পড়ে তাদের আবারও সরতে হচ্ছে নিজ নিজ আশ্রয় থেকে। আল-জাজিরার খবর বলছে, ফিলিস্তিনিরা বাড়ি ও আশ্রয় থেকে পালাতে শুরু করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪১ জন। তবে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এরও বেশি হবে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের তারা মৃত হিসেবে ধরেছে।
ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
অস্ট্রেলিয়ার ডাক্তার মোহাম্মদ মোস্তফা গাজার হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সেখানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. মোস্তফা জানান, তিনি ইসরায়েলি আক্রমণে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের অবস্থা বেশ গুরুতর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ব্যথানাশক ফুরিয়ে গেছে। আমরা কাউকে এ ধরনের কিছু দিতে পারছি না। আমরা কাউকে ব্যথা উপশমে কিছুই দিতে পারছি না।’
মোস্তফা বলেন, ‘সাতটি মেয়ের পা কেটে ফেলতে হয়েছে কোনো অবশীকরণ ছাড়াই। বোমাবর্ষণ এখনো হচ্ছে। ঘর এখনো কাঁপছে।’
নিহতদের প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, ‘তারা বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তাদের মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সব পুড়ে গেছে। অনেকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, কারও মাথা নেই।’
হামাসের ঘাঁটিতে আক্রমণের দাবি
এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা উত্তর গাজায় হামাসের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ওই নৌযানগুলো হামাস ও ইসলামিক জিহাদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ব্যবহার করত। সূত্র: আল-জাজিরা