
গত ১৩ জুন সকালে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাচারিঘাটের খানে মোহাম্মদ আলী নার্সারিতে। ওখানেই পেয়ে গেলাম কাঁটামুকুটের দেখা। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট। কাঁটামুকুট কাষ্ঠল উপগুল্ম। এটি ইংরেজিতে crown of thorns, Christ plant, Christ thorn ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Euphorbia milii, এটি Euphorbiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এদের আদি নিবাস মাদাগাস্কার। মাদাগাস্কারের পূর্ব দিকে অবস্থিত ভারত মহাসাগরের ফরাসি দ্বীপ লা রিইউনিয়নের (প্রাক্তন বোরবন দ্বীপ) গভর্নর Baron Milius এই প্রজাতিটিকে ১৮২১ সালে ফ্রান্সে নিয়ে আসেন। তার প্রতি সম্মানার্থে প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। অনুমান করা হয় যে যিশুখ্রিষ্টকে এ গাছের কাঁটার মুকুট পরানো হয়েছিল। বিভিন্ন বর্ণের ও গঠনের কাঁটামুকুট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বাগানে ও টবে স্থান পেয়েছে।
গ্রিক চিকিৎসক Euphorbus-এর প্রতি সম্মানস্বরূপ এই উদ্ভিদ গণের নাম রাখা হয়েছে Euphorbia। নেপালে ও ভারতের কেরালা রাজ্যে এই গাছ পাওয়া যায়। কথিত আছে, কেরালায় যে ইহুদিরা বাস করেন তারা ইসরায়েল থেকে কাঁটামুকুট ভারতে এনেছেন।
কাঁটামুকুট বিরূপ পরিবেশে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সক্ষম। বলতে গেলে যত্নআত্তি ছাড়াই ঘরে ও আঙিনায় বেড়ে ওঠে। এ জন্য শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে এর কদর রয়েছে। এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও প্রচুর।
এই গাছ পানি ও সরাসরি সূর্যের আলো পছন্দ করে। তাই নিয়মিত পানি দিতে হবে। গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পুরোনো ও বাদামি পাতা, পাতা ছাড়া ডাল কেটে ফেলতে হবে। তবে ফাঙ্গাস রোগ এড়ানোর জন্য মাটিতে পড়া মৃত ও ঝরে পড়া পাতা সরিয়ে ফেলতে হবে। ডাল কাটার সময় একদম ডালের গোড়া থেকে কাটতে হবে। এর জন্য অবশ্যই প্লাস্টিকের গ্লাভস পরতে হবে আর লম্বা কাঁচি ব্যবহার করতে হবে।
এর কাণ্ড বা ডাল ভাঙলে অথবা কেটে ফেললে কিংবা ফুল ছিঁড়লে যে কষ বের হয় তা দুধের মতো ধবধবে সাদা। কষ দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝরতে থাকে। এই কষ বিষাক্ত এবং ত্বকের সংস্পর্শে এলে জ্বালা ও অস্বস্তির সৃষ্টি হয়।
কাঁটামুকুটের কাঁটাও বিষাক্ত। কাঁটা শরীরে ফুটলে বা কাঁটার খোঁচা লাগলে ত্বকে ও মাংসে যন্ত্রণা হয়। সাদা কষ বন্ধ করার জন্য কেটে ফেলা বা ভেঙে ফেলা জায়গায় বরফ বা ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে।
সারা গায়ে কাঁটাভরা এ গাছটি ধীরে ধীরে বৃক্ষপ্রেমীদের মন কেড়ে নিচ্ছে। বাসগৃহের সামনে, ঘরের বারান্দায়, ভবনের ছাদে কেউ গাছ লাগালে কাঁটামুকুট লাগাতে ভুলেন না। গাঢ় সবুজ পাতাবিশিষ্ট গাছটি চোখজুড়ানো ফুল দিয়ে থাকে। ফুল ফোটে সারা বছর। কাটিং থেকে এর বংশবৃদ্ধি (Propagation) করা সহজ ও সুবিধাজনক।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ