দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে বিজয়ীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত গেজেটে বিজয়ী নারী এমপিদের নাম প্রকাশ করা হয়।

গেজেট অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপিরা হলেন-

রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দ্রৌপদী দেবি আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর), জারা জেবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মে ফারজানা সাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিরা বিনতে আমির (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), পারভীন জামান কল্পনা (ঝিনাইদহ), আরমা দত্ত (কুমিল্লা), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), মুন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), শবনম জাহান (ঢাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), শাম্মী আহমেদ (বরিশাল), নাহিদ ইজহার খান (ঢাকা), ঝর্ণা আহসান (ফরিদপুর), ফজিলাতুন নেছা (মুন্সীগঞ্জ), সাহেদা তারেক দীপ্তি (ঢাকা), অনিমা মুক্তি গমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নরসিংদী), তারানা হালিম (টাঙ্গাইল), শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর), অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), হাসিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), নাজমা আক্তার (গোপালগঞ্জ), ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর), আশরাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর), কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী), দিলারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), ডরথি তঞ্চঙ্গা (রাঙ্গামাটি), সানজিদা খানম (ঢাকা), নাছিমা জামান ববি (রংপুর), নাজনীন নাহার রোশা (পটুয়াখালী), ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম) ও রুমা চক্রবর্তী (সিলেট)।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন নাহার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

বিজয়ী প্রার্থীদের নামসহ প্রকাশিত এ গেজেট জাতীয় সংসদের সচিবালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সংসদ সচিবালয় এই সদস্যদের শপথ গ্রহণের আয়োজন করবে। শপথ গ্রহণ শেষে সংসদে যোগ দেবেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য আবেদনকারী কোনো প্রার্থীই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ছিল নারী আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

সংরক্ষিত নারী আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুনিরুজ্জামান তালুকদার সে সময় বলেছিলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় নির্বাচনি আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী আবেদনকারী প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করার প্রবিধান রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। জোট শরিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনে ৪৮টি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের ৯ কোটি (৯০ মিলিয়ন) পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। শুক্রবার (২৩ মে) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারি নথি অনুযায়ী এনসিএ মোট ৯টি সম্পত্তি জব্দের আদেশ পেয়েছে। এর ফলে এসব সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর আপাতত সম্ভব নয়। জব্দ করা সম্পত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অ্যাপার্টমেন্ট এবং উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসের বাড়ি।

সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। বলা হয়ে থাকে শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে আত্মগোপেনে ছিলেন সালমান এফ রহমান। পরে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।

ব্রিটিশ সরকারের নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষমতা হারানো বাংলাদেশের সাবেক শাসকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পদের অনুসন্ধানে সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ বাড়তে থাকার মধ্যেই এনসিএ সম্পদ জব্দের ৯টি আদেশ দিয়েছে।

এসব আদেশের মধ্যে রয়েছে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। জব্দ করা সম্পদের মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ যাদের যুক্তরাজ্যে সম্পদ রয়েছে, তা নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে এই দুজনের নাম পাওয়া গেছে।

কাগুজে কোম্পানি খুলে লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ১৩ মার্চ দায়ের করা ওই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ৭৬ কোটি টাকা পাচার এবং ব্যাংকঋণের ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে, যাতে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাতজন কর্মকর্তা রয়েছেন। দুদকের আবেদনে আদালত গত ১০ মার্চ সালমান ও তার ছেলে শায়ানের নামে লন্ডনে থাকা দুটি বাড়ি জব্দের আদেশ দেন।

খবরে বলা হয়েছে, দুই দিন আগে শায়ান রহমানের লন্ডনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট অবরুদ্ধের আদেশ পায় যুক্তরাজ্যের এনসিএ।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুই সম্পত্তির মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ২০১০ সালে ৬৫ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়। এখন শায়ানের সঙ্গে তার চাচাতো ভাই শাহরিয়ারের সম্পদ জব্দেরও খবর পাওয়া গেল।

যেসব সম্পদ জব্দের আদেশ হয়েছে সেগুলো ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইলম্যান অথবা জার্সির মতো কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।

গত বছর দ্য গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে শায়ান ও শাহরিয়ারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। সেই অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পদের খোঁজ মেলে।

এনসিএ যেসব সম্পদ জব্দ করেছে তার মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস শায়ানের যে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের আদেশ পায় তার মধ্যে গ্রেশাম গার্ডেনসের একটি অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে জানা যায়, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও লন্ডনের একটি জব্দ হওয়া বাড়িতে বসবাস করেছেন। শেখ রেহানা হচ্ছেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের মা। সাম্প্রতিক সময়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই দুটি সম্পদ ৭৭ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছিল ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের নীতিবিষয়ক পরিচালক ডানকান হেমস বলেন, ‘আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালু রাখতে এবং অবিলম্বে সব সন্দেহজনক সম্পদ জব্দের আহ্বান জানাই।’

এনসিএর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি, চলমান সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ বেশ কয়েকটি জব্দ আদেশ পেয়েছে।’

তবে এর আগে শায়ানের একজন মুখপাত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের মক্কেল কোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, এসব অভিযোগ তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যেকোনো ধরনের তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের নীতিনির্ধারণ পরিচালক ডানকান হেমস বলেন, যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত, সংশ্লিষ্ট সব সন্দেহভাজন সম্পদের ওপর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

এনসিএর এক মুখপাত্র বলেন, ‘একটি বেসামরিক তদন্তের অংশ হিসেবে আমরা বেশ কিছু সম্পত্তি জব্দের আদেশ জারি করেছি।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আহমেদ শায়ান রহমানের পক্ষে একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের মক্কেল জোরালোভাবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে এবং বহু মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি যুক্তরাজ্য এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে।’

দ্য গার্ডিয়ান এ বিষয়ে সালমান এফ রহমানের পারিবারিক করপোরেট গ্রুপ বেক্সিমকো ও রহমান পরিবারের আইনজীবীদের মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করেছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী ভাবনা, সৃজনশীলতা ও সংগ্রামী চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথিরা এ আহ্বান জানান। 

শনিবার (২৪ মে) রাজধানী ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হয় ‘গাহি সাম্যের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি। রেডিয়েন্ট পাবলিকেশন্সের প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’ ও অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘দেশকাল নিউজ ডটকম’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল রেডিয়েন্ট কেয়ার। 

‘গাহি সাম্যের গান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। জাতীয় কবির জীবন, সাহিত্যকর্ম ও সমাজদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন নজরুল গবেষক ও শিক্ষক ড. তাহা ইয়াসিন। সভাপতিত্ব করেন সাম্প্রতিক দেশকাল ও দেশকাল নিউজের সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ।

অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন খ্যাতনামা শিল্পী শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, নাশিদ কামাল, ইউসুফ আহমেদ খান, প্রিয়াংকা গোপ এবং বিজন মিস্ত্রি। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী টিটো মুন্সী। উপস্থাপনায় ছিলেন শান্তা জাহান।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ও তা ফেরত আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ তৈরি হয়েছে। সেই চাপের কারণেই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সম্পদ জব্দ হতে দেখা গেছে।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) কার্যালয়ে ‘ঋণ সক্ষমতা বৃদ্ধি’ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের ঘটনায় আমরা খুবই উৎসাহিত (এনকারেজড) বোধ করছি। এটিকে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির (পাচার করা) সম্পদ যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আশা করছি, সেগুলোকেও চিহ্নিত করে জব্দ (ফ্রিজ) করা সম্ভব হবে।’

প্রসঙ্গত, লন্ডনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ কোটি পাউন্ডের (১৬৪ টাকা ধরে যা প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। যাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও সালমান এফ রহমানের ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান। জব্দের আদেশে বলা হয়েছে, আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। 

গভর্নর মনসুর বলেন, ‘পাচারের টাকা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমাদের চুরি করা অর্থ আমরা ফেরত নিয়ে আসব, সব সরকারেরই এটা পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট থাকা উচিত। এটারই পার্ট হিসেবে আমরা এখন দেখছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কিন্তু একটা চাপের মধ্যে আছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলি, লন্ডন টাইমস বলি বা আল-জাজিরা- এরা কিন্তু বাংলাদেশের এই অর্থ পাচার নিয়ে বড় বড় আর্টিকেল লিখছে। আগামীতে আরও লিখবে।’

জব্দ হওয়া সম্পদ কতদিনের মধ্যে দেশে ফেরত আসতে পারে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জব্দের ঘটনা দেশে ফেরত আনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। এটি আসবে বিচারের পর। কিন্তু জব্দের ফলে বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এই সম্পদগুলো আর বিক্রি করতে পারবেন না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এখন বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন যে সেই সম্পদ তার (যুক্তরাজ্যের), না বাংলাদেশের। আমরা এখন আইনি প্রক্রিয়াটা শুরু করব।’

যুক্তরাজ্য ছাড়া আরও কিছু দেশে এ ধরনের সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় সংবাদে উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। গত সপ্তাহে আমি দুবাই গিয়েছিলাম। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। লন্ডনে আবার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলন করারও পরিকল্পনা রয়েছে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি স্মরণ করে দিতে হবে যে এই সম্পদ রাখা নৈতিকতাবিরোধী, এটি রাখা ঠিক নয়। এটি যার সম্পদ, যে জনগণের টাকা, তাদের ফেরত দিয়ে দেওয়া উচিত। সেই ব্যাপারে তারা যেন তাদের তৎপরতা দেখায়, এটিই আমাদের আশা।’

ঈদে আসছে নতুন টাকা, থাকছে না কোনো ব্যক্তির ছবি

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের আগেই বাজারে ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট আসছে। তবে টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের টাকা ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তিনটা নোট আসছে শিগগিরই। সেটা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট, ৫০ টাকা ও ২০ টাকা। এই নতুন নোট ঈদের আগেই আমরা পাব। এখানে কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না। নতুন নোটে থাকবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।’

 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দল-মতকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (২৪ মে) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ শিরোনামে এক কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার দাবিতে এবং তাকে আরও ৫ বছর ক্ষমতায় রাখতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

কর্মসূচিতে মোট পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করা; জাতীয় সরকার গঠন; সংবিধান সংস্কার করা; জুলাই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন এবং ড. ইউনূসকে পাঁচ বছর সময় দেওয়া। 

এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ওয়ালি-উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যানার নেই, আমরা জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এই কর্মসূচি থেকে ছাত্র উপদেষ্টাদের স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অবিলম্বে অপসারণ করে ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করা হোক এবং ১৭ বছরের নিপীড়িত সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হোক। আওয়ামী লীগের বিচার করে আগামী নির্বাচনের আগে সব সংস্কার যেন সম্ভব করা হয়, এটিই আমাদের মূল চাওয়া।’

এতে অন্যদের মধ্যে ৩৬ জুলাইয়ের আহ্বায়ক শহিদুল হক মিন্টু, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের সদস্যসচিব আলামিন আটিয়াসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা ইউনূস তুমি ঐক্য গড়ো, বাংলাদেশ রক্ষা করো; বাংলাদেশ তৈরি করো, ইউনূস তুমি ঐক্য গড়োসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

 

 

সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) বর্তমানে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা জমা রয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে। 

শনিবার (২৪ মে) সিআইডি সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে এ তথ্য জানান।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি জানান, মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতার পেশাকে ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছেন অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় তদন্ত শুরু করা হয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডি জানতে পেরেছে, মুন্নী সাহা ও তার স্বামীসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি হিসাব খোলা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি চালু রয়েছে। এসব হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৮ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা সিআইডির কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। এ কারণে তদন্ত কর্মকর্তারা সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। সিআইডির আবেদনে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের আদেশে মোট ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। 

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা ও প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।