![বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা](uploads/2024/03/02/1709381300.gree-cozi.jpg)
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (২ মার্চ) পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মামলায় ভবনের মালিক প্রতিষ্ঠান আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ ছাড়াও এই ভবনে থাকা ফাস্ট ফুডের দোকান ‘চুমুক’-এর দুই মালিক আনোয়ারুল হক (২৯) ও শফিকুর রহমান রিমন, ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল সিরাজ (৩৪) এবং ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুলকে (৪০) আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানা-পুলিশ।
কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জয়নুদ্দিন জিসান এবং ভবনের ম্যানেজার মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল।
মামলার তথ্য নিশ্চিত করে রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, বেইলি রোডে আগুন লাগার ঘটনায় ভবনের মালিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। এখন দুর্ঘটনার আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় করা মামলার এজাহারে ভবনের মালিকসহ চারজনের নাম উঠে এসেছে। তদন্ত করে অন্যদের আটক করা হবে।
এর আগে শুক্রবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে কেউ অভিযোগ না দিলে, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ভবনটির মালিক ও ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং দোকান ভাড়া দেন। রেস্টুরেন্টগুলো যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া রান্নার কাজে গ্যাসের সিলিন্ডার এবং চুলা ব্যবহার করে। রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য ভবনের মালিক ও ম্যানেজারের যোগসাজশে চুমুক, কাচ্চি ভাই, মেজবানী রেস্টুরেন্ট, খানাস ফ্ল্যাগশিপ, স্ট্রিট ওভেন, জেষ্টি, হাক্কা ঢাক্কা, শেখহলি, ফয়সাল জুসবার (বার্গার), ওয়াফেলবে, তাওয়াজ, পিৎজা-ইন, ফোকো এবং এম্ব্রোশিয়া রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবনটির নিচ তলায় বিপুল পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করেন। তারা জননিরাপত্তা তোয়াক্কা না করে অবহেলা, অসাবধানতা, বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে এই গ্যাস সিলিন্ডার এবং গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে আসছিলেন। এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই আগুনের তাপ ও প্রচণ্ড ধোঁয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্ট ও দোকানে অবস্থানকারী লোকজন আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়া শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান এবং গুরুতর আহত হন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবনটি আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে মালিক ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ব্যবসায়িক কাজে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়। ভবনটির যেসব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল, সেগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেয়নি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট সিঁড়িও নেই।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভবনের মালিক, ম্যানেজার ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মানেননি। তারা আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ভাড়া দিয়েছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শকদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ স্থাপন করে, গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ৪৩ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনের মরদেহ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
অমিয়/