![কুসিকে মেয়র পদে উপনির্বাচন: প্রচারে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ](uploads/2024/03/02/1709389769.comilla-city-election.jpg)
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার ততই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অভিযোগ-পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। বিরামহীন প্রচারের ফাঁকে গণমাধ্যমের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থীই পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, হুমকি-ধমকি ও হামলার অভিযোগ এনেছেন।
তবে তাদের বেশির ভাগ অভিযোগই যাচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘বাস’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা ও তার কর্মী-সমর্থকদের দিকে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সূচনা বলছেন, বিএনপি ঘরানার দুই প্রার্থী নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে উল্টো তার দিকে অভিযোগ ছুড়ছেন, বিষয়টি সত্য নয়। কুমিল্লায় নির্বাচনি প্রচার মাঠ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে কুমিল্লা মহানগরী। প্রার্থীদের গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও গানে গানে প্রচারে সর্বত্রই নির্বাচনি উৎসবের আমেজ। পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। প্রচারের ৯ম দিনে গতকাল শনিবার গণসংযোগসহ ৪ প্রার্থী প্রচার ও উঠান বৈঠক করছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
শনিবার (২ মার্চ) সকাল থেকে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা ও দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নগরীর চকবার থেকে কান্দিরপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। প্রচারে নেমে মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেন, আগের দিন শুক্রবার বিকেলে নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিলের উপস্থিতিতে বিকেলে নগরীর কাটাবিল ও বালুধুম এলাকায় উঠান বৈঠকে হামলা করে চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর ও পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে কাউন্সিলর জলিল বলেন, ‘আমি বাস মার্কার প্রচার চালানোর সময় হঠাৎই চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ পাই। গিয়ে দেখি দেয়াল ঘড়ি প্রতীক আর ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীরা মারামারিতে জড়িয়েছেন। আমি কাউন্সিলর হিসেবে সেখানে গিয়ে বিষয়টি শান্ত করি।’
এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘ঘটনাস্থলে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর কোনো সমর্থক ছিলেনই না। মূলত বাস প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক সাইফুলসহ অন্যরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমার কাছে সবকিছুর প্রমাণ আছে, আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করব।’
‘ঘোড়া’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার গতকাল প্রচার চালান নগরীর ফৌজদারি এলাকায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিভিন্ন জায়গার আমার ‘ঘোড়া’ প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ওই জায়গায় আরেকটা প্রতীকের পোস্টার লাগানো হচ্ছে। রাতের বেলায় মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে ভয়ভীতি দোখানো হচ্ছে। আমরা চাই এসব বন্ধ হোক, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকুক।”
‘হাতি’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম গতকাল প্রচার চালান নগরীর রাজগঞ্জ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ভয়-ভীতি দেখানো এবং হুমকি প্রদর্শন দিন দিন বাড়তে থাকবে। এই সময়ে এসে যদি নির্বাচন কমিশন দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ৯ তারিখের নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে। আমার দাবি, যারা ভাঙচুর করছে, পোস্টার ছিঁড়ছে, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তারা সবাই চিহ্নিত, তারাই ঘুরে ঘুরে সব জায়গায় হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমি জানি না তাদের প্রার্থী তাদের এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন কি না। আমার মতে কোনো প্রার্থীই চান না নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হোক।’
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘বাস’ প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ‘প্রচারে আমি কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখের পড়িনি। কিন্তু দেখছি, আমার বিরুদ্ধেই সবার অনেক বেশি অভিযোগ। আমি সারা দিন কাজ করছি, অতিথি পাখির মতো হঠাৎ করে আসিনি। আগেও জনসম্পৃক্ত ছিলাম, এখনো আছি।’
সূচনা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা মারামারি করে অভিযোগ তোলেন আমার ওপর। এখানে দুই প্রার্থী একই দলের। তারা একজন আরেকজনকে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন। তাদের সেসব অভিযোগ ঘুরেফিরে আমার ওপর আসছে। আমার মনে হয়, তাদের নির্বাচনি প্রচার বন্ধ করে আগে গোলটেবিলে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত আসলে তাদের অভিযোগটা কার দিকে। প্রকৃত পক্ষে এ নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’