বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও দুর্বৃত্তদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিনোদন বিটসহ অন্যান্য বিটের সাংবাদিকরা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসির সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল এফডিসির সামনে থেকে শুরু হয়ে আবার এফডিসির সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। এই মানববন্ধনে ভিকটিমসহ ৪ শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। নইলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এদিন সকাল থেকেই এফডিসি প্রাঙ্গণ ছিল থমথমে। গত মঙ্গলবারের ঘটনায় ভিকটিম ও তাদের সহকর্মীরা এফডিসির প্রাঙ্গণে গিয়ে জড়ো হন। আমরা সংবাদকর্মী ও টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও দুটি ব্যানারে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা। দুই পক্ষের মধ্যে যাতে আবার উত্তেজনা না হয়, সেই লক্ষ্যে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে আজ হামলাকারীদের এফডিসি চত্বরে দেখা যায়নি। তবে এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কিছু সদস্যকে ভোজে অংশ নিতে দেখা গেছে। হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে একাধিক সংগঠনের নেতারা বিবৃতি প্রদান করেছেন।
মানববন্ধনে বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘আজকে আমাদের এখানে সমবেত হওয়ার কথা ছিল না। আমরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন স্থানে থাকতাম। কিন্তু এফডিসিতে যেভাবে সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে, তা কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন, তাদের আমরা মননশীল মনে করি। এই এফডিসির সামনে আগে অনেক মানুষ শিল্পীদের দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন আর এখানে কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন না। গেটের সামনে ভিড় করেন না। কারণ, এখনকার শিল্পীরা দেশের মানুষকে নির্মল বিনোদন দিতে ব্যর্থ। এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এতে প্রমাণিত হয়েছে, এরা এখন আর শিল্পী নন, এরা মাস্তান। এরা শিল্পী নামের কলঙ্ক। যারা হামলা করে কলঙ্ক রচনা করেছেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ, এসব মাস্তান দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের কোনো উন্নতি হবে না।’
বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধাবিপত্তি ও লাঞ্ছনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এরপরও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এফডিসিতে হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা কোন কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, কোন দল করতেন, কার বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ আছে, তা আমরা সবাই জানি। অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, এফডিসির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সবাই স্পষ্ট করে জেনেছেন কীভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত কাজেই এফডিসিতে কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে এসেছিলেন। তারা কী নির্যাতনের শিকারের জন্য এফডিসিতে এসেছিলেন? শিল্পী সমিতির উদ্দেশে এ প্রশ্ন করেন তিনি। এই হামলা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
বাচসাসের সভাপতি রাজু আলীম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।’ যদি এর মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
বাচসাসের সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়ব।’
টিভি জার্নালিস্টস ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের (টিসিএ) সভাপতি ফারুক হোসেন তানভীর জানান, এফডিসিতে যেসব সহকর্মীর ওপর হামলা করা হয়েছে, তাদের চিকিৎসা ব্যয়ভার শিল্পী সমিতিকে বহন করতে হবে। যেসব ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে, তারও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে শিল্পী সমিতিকে।
মানববন্ধনে ভিকটিম দৈনিক খবরের কাগজের বিনোদন প্রতিবেদক মিঠুন আল মামুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা পেশাগত কাজের জন্যই এফডিসিতে দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমাদের ওপর কীভাবে হামলা করা হয়েছে তা সবাই দেখেছেন।’ তিনি হামলাকারী শিবা সানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোসহ যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু, টিসিএর সাবেক সভাপতি শেখ মাহবুব আলম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, টিসিএর সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক জীবনসহ ও অন্য নেতারা।
এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও তাদের আহত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিন এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, ঘটনার পর এফডিসিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক আছে।
গতকাল মঙ্গলবারের কলঙ্কিত ঘটনা তদন্তের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচজন করে রাখা হয়েছে। উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল মঙ্গলবার। তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে আচমকা সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২২ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫ জন।