সংসদ সদস্যদের বেতন ও সরকারি বরাদ্দ কত? এমন তথ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় গতকাল মঙ্গলবার (৭ মে) স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের ভাতা ও উন্নয়নকাজে বরাদ্দ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এমপি সুমনের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ওই নালিশ করেন।
স্পিকারের কাছে ওই অভিযোগের পরদিন বুধবার (৮ মে) সংসদের বাইরে আবার চুন্নুর কঠোর সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার সুমন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, ‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর। তার মুখে সমালোচনা মানায় না। এমপিরা কত বরাদ্দ পান, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমি সেটা প্রকাশ করেছি। এতে চুন্নু সাহেবের সমস্যা কোথায়? সংসদে চুন্নুর অবস্থান পরিষ্কার নয়।’ তিনি দাবি করেন, বিরোধী দল, কিন্তু থাকেন সরকারি দলের ভেতরে। এখন এসেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মুখ বন্ধ করতে। এ সময় সংসদ সদস্য হিসেবে এমপিদের বরাদ্দ পাওয়ার বিষয় তিনি ফেসবুকে আগামীতেও তথ্য প্রকাশ করে যাবেন- এমন ঘোষণাও দেন ব্যারিস্টার সুমন।
এর আগে মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এমপি সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ইঙ্গিত করে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাদের একজন সংসদ সদস্য। নামটা বলতে চাই না। তিনি নতুন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ফেসবুকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। তিনি (সুমন) বলেছেন, এমপিরা কত টাকা বেতন পান? তারা তো বলেন না, গোপন করেন। ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা বেতন (মাসিক) পেয়েছেন। আমরা কত টাকা বেতন পাই ,তা লুকানোর কিছু নেই, ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে। তিন মাসের মধ্যে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। সেটা কীভাবে পেলেন? ৩ কোটি টাকা গমের জন্য, আর বাকি ২৫ কোটি টাকা পেয়েছেন রাস্তার জন্য।’
স্পিকারকে উদ্দেশ করে চুন্নু বলেন, ‘এই ২৮ কোটি টাকা কি শুধু আমি পেয়েছি? আপনি পেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীও পেয়েছেন? এরই মধ্যে ফেসবুকে দেখে আমাকে অনেকেই বলছেন, ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন, সেই টাকা কই- আমরা তো পাইনি।’
স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ৫ বছরে ২০ কোটি টাকা এমপিদের বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, ‘এবার বলেছেন ৫ বছরের জন্য ২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের নাম দেওয়ার জন্য। আগামী ৫ বছরে কয়টা প্রকল্প করব, তার নাম দিয়েছি আমরা। টাকার সঙ্গে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ জরিপ করে টেন্ডার করে, তারপরে বাস্তবায়ন করে। কিন্তু তিনি বলছেন, আমরা ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। শুধু তা-ই না! তিনি আরও বলেছেন, এমপি হলে যদি এত লাভ হয়, তাহলে আরও আগে এমপি হতাম।
আপনি এই সংসদের অভিভাবক। আমাদের কোনো সদস্য যদি এমন কোনো কথা বলেন, যে কথায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ ৩৪৯ জন এমপি (সায়েদুল হক সুমন ছাড়া) সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। তার (সুমনের) সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন কবার জন্য যদি এ ধরনের কথায় ভুল বার্তা যায়, বিষয়টি আপনি দেখতে পারেন। আমরা এখানে অনেক কথা বলব, বিতর্ক করব। তবে এমন কথা বলবার অধিকার কারও নেই, যাতে ৩৪৯ এমপির সম্মান নষ্ট হবে। তাদের সম্পর্কে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’ তাই অভিভাবক হিসেবে ওই সংসদ সদস্যকে ডেকে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।