যে ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত, অনির্দিষ্টকালের বন্ধে সেই ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কাঠবিড়ালির পদচারণা আর বাহারি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে থমথমে অবস্থার অনেকটা উন্নতি হলেও ক্যাম্পাসের বেশ কিছু প্রবেশ মুখে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতি।
অন্য দিনগুলোর মতো ক্যাম্পাসের ভেতরে রিকশা-সিএনজি-প্রাইভেট কার চলাচল সেভাবে না থাকলেও গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসের রাস্তায় ছোট এসব যানবাহন চলতে দেখা গেছে। হলগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীশূন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) একেবারেই সুনসান নীরবতায় ডুবে আছে। প্রত্যেকটি হলের প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বুধবার (২৪ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ভিসি-ডাস চত্বরসহ বেশ কিছু প্রবেশ মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের উপস্থিতি। যদিও বিগত দিনগুলোর তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলেছে বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘নোটিশ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার ভবন খোলা ছিল। সকল ধরনের দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলেছে। ওই নোটিশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও যথারীতি সব ধরনের দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। এখন পরবর্তী নোটিশ সাপেক্ষে বলা যাবে, আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম চলমান থাকবে কি না। এ মুহূর্তে নিশ্চিত করেই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে ঢাবির স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল। জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ১ জন শিক্ষকসহ ৩২ জন হল ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘একজন কোরিয়ান শিক্ষকসহ নেপালি, ভুটানি, ফিলিস্তিনি, শ্রীলঙ্কান, মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী সবমিলিয়ে ৩২ জন হল ছেড়েছেন। এর মধ্যে তিনজন ফিলিস্তিনিকে ফিলিস্তিনের অ্যাম্বাসি, কোরিয়ান শিক্ষক যিনি ছিলেন, তিনি তো কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) মাধ্যমে এসেছিলেন, তাকে তারা নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাকিদের সেই দেশের অ্যাম্বাসির লোকজন যোগাযোগ করে নিয়ে গেছেন।’
অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে যারা হলে আছেন, তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন প্রয়োজন ছাড়া বের না হন এবং বহিরাগত কাউকে যেন হলে না আনেন। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তারা যেন অবশ্যই হল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের মতো নিয়োজিত থাকবে এবং হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়াসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর কক্ষগুলো সংস্কার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ লক্ষ্যে কাজ করছে।’
ক্যাম্পাস ও হল খুলে দিতে এরই মধ্যে পাঁচ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেগুলো হলো- ঢাবি ক্যাম্পাসে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে অবস্থান করবেন, যাতে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের মতো নিয়োজিত থাকবে। দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলের কক্ষগুলো সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কাম্য। হলগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরাই থাকবেন। প্রশাসনের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
গত ১৭ জুলাই সিন্ডিকেটের এক জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।
এ ছাড়া হলে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।