![একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নতুন কমিটির আত্মপ্রকাশ](uploads/2024/05/21/71_ghatok_nirmul_commitee-1716281182.jpg)
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের পর মঙ্গলবার (২১ মে) নতুন কমিটির সদস্যদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি শহিদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়। তিনি আগের কমিটির আইসিটি সেলের প্রধান।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা করেন আগের কমিটির সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
নতুন কমিটিতে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে আছেন আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
সাতজন সহসভাপতির মধ্যে রয়েছেন তিন শহিদসন্তান ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, শমী কায়সার। সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার।
৫৫ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতির পদে রয়েছেন শাহরিয়ার কবির। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অনুপম সেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সংসদ সদস্য ও শহিদ পরিবারের সন্তান মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্তসহ আরও অনেকে।
কমিটির উপদেষ্টা মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘নির্মূল কমিটিকে পরিচালনা করতে গিয়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। উচ্চ পর্যায় থেকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে আমাদের। আমাদের পরিত্যাজ্য করার একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। অথচ সরকার যখন বিপদে পড়ে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে শাহরিয়ার কবিরকে অনুরোধ জানায় তাদের পক্ষে যেন বিবৃতি দেয়।’
নবনির্বাচিত সভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে যেকোনো অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আমরা পদের দাবিদার না। নিজের লাভের জন্য কারও দরজায় দরজায় ঘুরি না। আমরা সেই কাজটি করি যাতে সমাজ উপকৃত হয়।’
নবনির্বাচিত কমিটির নতুন কর্মসূচি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন নতুন কমিটির সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘দেশে সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষায় সরকারের কর্মসূচি পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছি। সরকার যদি তা করতে না পারে, তবে আমরাই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করব।’
এ বিষয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশে যদিও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তবে তাদের তেমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। আমরা এখনো সরকারের কাছে বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংখ্যালঘু কমিশনের দাবি জানাই। সরকার যদি না পারে, তবে আমরা নিজেরাই এ কমিশন গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেব।’
একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র এবং নথিপত্রগুলোকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি নিয়ে কাজ করবে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিষদ। সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের বিস্তার ঘটছে উল্লেখ করে নবনির্বাচিত কমিটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে সক্রিয় হবে বলে জানান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ রসূল।
দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় নির্যাতিত নারীরা যেন আইনি সহায়তা পান, সে জন্য কাজ করার কথা জানিয়েছে কমিটি।
সারা দেশে ৬২টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিটি। এসব এলাকায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করতে শুরু করবে। কারণ ব্যাখ্যায় কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার নারীদের মাত্র ১০ ভাগ বিচার চাইতে যান। তখন অনেকাংশে দেখা যায়, ঘটনার আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বা ভুক্তভোগীদের শারীরিক পরীক্ষার সময় পেরিয়ে যায়। তখন মামলার কার্যক্রমে জটিলতা দেখা দেয়। এজন্য আমাদের টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করবে।’
নির্মূল কমিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানির শিকার ভিকটিমদের আইনি সহায়তা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসিফ মুনীর তন্ময় জানান, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত করতে একাত্তরের ১১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নামে তরুণ বিগ্রেড গঠন করা হয়েছে৷ নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পাঠদান কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
জয়ন্ত সাহা/সালমান/