গত ৫৩ বছরে রাষ্ট্রীয় অবহেলায় ও অতিলোভী লঞ্চ মালিকদের চলাচলের অযোগ্য নৌযান দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৯ বছরে ৫৭০টি নৌ দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬৫৪ জন মারা গেছেন। এ সব ঘটনায় ৫১৬ জন আহত ও ৪৮৯ জন নিখোঁজ হন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা ২৩৬টি। ২০১৯ সালে ২৬টি নৌ দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন, ৩৩ জন আহত ও ২০ জন নিখোঁজ হন। ২০১৭ সালে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৫০ বছরে দেশে নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ হাজার ৫০৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নোঙর ট্রাস্টের আয়োজনে ‘ঢাকা নদী সম্মেলন-২০২৪’ প্রস্তুতি সভায় এ সব কথা জানানো হয়।
এ সভায় দেশের নৌপথে নিহত সব শহিদের স্মরণে এবং নদী ও নৌযানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৩ মে ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং নদী সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণের দাবি জানানো হয়।
নোঙর ট্রাস্টের সভাপতি সুমন শামসের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মো. আওলাদ হোসেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সভায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একসময় আমাদের দেশে প্রায় ১২শ’ নদী ছিল। এখন আমরা বলি ৭০০ নদী আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা কমে কত হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশে নদীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পেছনে বড় একটা কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। ৫০ বছর আগেও হিমালয় থেকে যে পরিমাণ পানি আসত, এখন তা আসে না। আরেকটি কারণ হলো জনসংখ্যার বৃদ্ধি। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর কারণে পানির ব্যবহার বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে নদীতে। সবার জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক সহায়তা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু অসাধু ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা নদী দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। দেশে নদী দখলকারী ও বালি খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। একইসঙ্গে নদীতে যারা শিল্পবর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষণ করছে তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
নোঙর ট্রাস্টের সভাপতি সুমন শামস বলেন, ‘দেশের ৪৩ শতাংশ নৌ দুর্ঘটনা ঘটে অন্য নৌযানের সঙ্গে ধাক্কায়, ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে এবং ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঘটে। নৌ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। ত্রুটিপূর্ণ, সার্ভেবিহীন ও অনিবন্ধিত লঞ্চসহ সব ধরনের অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, দুর্যোগ মৌসুম বিবেচনায় ঈদের আগে অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে নৌপথে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখার বিকল্প নেই। লঞ্চের চালক এবং স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্স প্রাপ্ত হতে হবে। যাত্রীবাহী বৈধ লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নততর লঞ্চ সার্ভিস চালু করতে হবে।’