![আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মজয়ন্তী](uploads/2024/05/25/NAZRUL-ART-5-copy-1716611676.jpg)
বাংলা ভাষার কবিতাপ্রেমীদের কাছে কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, চির যৌবনের দূত। সেই সঙ্গে তিনি বিদ্রোহী, গৃহত্যাগী বাউন্ডুলে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠেন ‘দুখু মিয়া’। পিতৃহীন কবি একে একে হারিয়েছেন কাছের স্বজনদের। আর্থিক অসচ্ছলতাও তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল।
নানা বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। সাম্য ও মানবতার চেতনায় শাণিত ও সমৃদ্ধ ছিল তার লেখনী। অন্যায় অসত্য পরাধীনতার বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্যের জন্য তিনি হয়ে ওঠেন ‘বিদ্রোহী কবি’।
নজরুলের কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ বাকশক্তি হারান নজরুল। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানের বিএসএমএমইউ হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কবি নজরুল ইসলামের।
জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘কুসংস্কার আর অন্যায়ের সকল আবরণ বিদীর্ণ করে নজরুল তৈরি করেছেন নতুন প্রেক্ষাপট, নতুন উপস্থাপন কৌশল ও ভিন্নতর ভঙ্গি। তিনি বিশ্বাস করতেন কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের, বিশেষ শ্রেণির কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানে তার পরিচয় নয়। তিনি সব মানুষের, সব সমাজের, সব কালের। তার চেতনা ও মানবতাবোধ বর্তমান সমাজব্যবস্থায় আমাদের সঠিক পথ দেখাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক। কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের নেতৃত্বে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও এদিন শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে। এ আসরে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।
এ ছাড়াও ময়মনসিংহ, জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।