২০২৫-২৬ অর্থবছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের (জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৩১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিভাগের জন্য উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যার মধ্যে জননিরাপত্তায় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা ও সুরক্ষা সেবায় ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘পরিচালন ও উন্নয়ন’ সংক্রান্ত বাজেট থেকে এই তথ্য জানা যায়। তবে নতুন এই বাজেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ও র্যাবের অভিযানের সক্ষমতা বাড়ানো ও বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। তবে গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও উন্নয়ন বাজেটে সেভাবে বরাদ্দ উল্লেখ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ২৭ হাজার ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার অধীনে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা এবং উন্নয়নে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগের জন্য ৪ হাজার ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য বলা হয়েছে, যার অধীনে রয়েছে কারাগার, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা এবং উন্নয়নে ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৩১ হাজার ১২ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২৭ কোটি টাকা বেশি। তবে বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বা অনুমোদিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছিল ২৯ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
এবারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে যেসবখাতে ব্যয় করা হবে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনা, বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আর্ন্তজাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, ‘সেফার সাইবারস্পেস ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ: এনহান্সিং ন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশন ক্যাপাবিলিটি অব বাংলাদেশ পুলিশ’, দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ, ‘প্রিভেনশন অ্যান্ড রেসপন্স টু জেন্ডার বেজড্ ভায়লেন্স এগেইনস্ট ওম্যান অ্যান্ড গার্লস’, র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণ, র্যাবের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, র্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, সীমান্ত এলাকায় ৭৩টি আধুনিক/কম্পোজিট বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ, বিজিবির নতুন নারায়ণগঞ্জ (৬২ বিজিবি) ব্যাটালিয়ান অবকাঠামোগত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, বিজিবির নতুন গাজীপুর ব্যাটালিয়ানের (৬৩ বিজিবি) অবকাঠামোগত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, বাংলদেশ কোস্টগার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা, কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিস্থাপক জাহাজ সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার (১ম পর্যায়ে ৪০টি) নির্মাণ (১ম সংশোধিত) করা হবে।
এছাড়া, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে যেসব ব্যয় ধরা হয়েছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্প, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনঃনির্মাণ প্রকল্প, নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প, জামালপুর জেলা কারাগার পুনঃনির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এ্যাম্বুলেন্স সেবা সম্প্রসারণ (ফেইজ-২)।
আলমগীর হোসেন/