ঢাকা ৩ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামে ‘অকালমৃত্যু’ বলতে কিছু নেই

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১৯ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৭ এএম
ইসলামে ‘অকালমৃত্যু’ বলতে কিছু নেই
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত লাশের ছবি

আমরা অনেক সময় বলে থাকি বা লিখি ‘লোকটার অকালমৃত্যু ঘটেছে’ বা ‘সে অকালে প্রাণ হারালো’। ইসলামে ‘অকালমৃত্যু’ বলতে কিছু নেই। মৃত্যু চিরন্তনমৃত্যুর চেয়ে চির সত্য পৃথিবীতে খুব বেশি নেইমৃত্যু থেকে পালানোর সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাতে চাও, সে মৃত্যুর সঙ্গে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তারপর তোমাদের সেই মহান আল্লাহর কাছে ফেরত পাঠানো হবে; যিনি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সব বিষয় জানেন এবং তিনি তোমাদের আমল ও কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৮)

 

আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগালে পাবেই; এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৮)

 

কার কখন মৃত্যু হবে, এ ব্যাপারে কারও জানা নেই। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই কখন কিয়ামত হবে; তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনিই মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী আছে। অথচ কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্য কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ৩৪)

 

অকালমৃত্যু’ বলতে ইসলামে কিছু নেই। কারণ সবার মৃত্যুর দিন-ক্ষণ, তারিখ সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত। এর আগে-পরে কারও মৃত্যু হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের এক মুহূর্ত আগে বা পরে কারও মৃত্যু হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কোনও জনপদকে ধ্বংস করিনি, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল। কোনও সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায় না এবং দেরিও করে না।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৫)

 

মৃত্যুর দুটি অবস্থা রয়েছে। ১. ভালো মৃত্যু। ১. মন্দ মৃত্যু। মানুষের আমল ভেদে মৃত্যু সহজ ও কঠিন হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, এবং যদি তুমি দেখতে মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা কাফেরদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের নফস হরণ করছে এবং বলছে তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৫০) 

 

আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘ফেরেশতারা মৃদুভাবে মুমিনের প্রাণ কবজ করবে পবিত্র থাকা অবস্থায় এবং বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা যে আমল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৩২)

 

মৃত্যু উপস্থিত হলে মানুষের অন্তরের চোখ খুলে যায়সে তখন ভালো কাজ করার জন্য সময় প্রার্থনা করেতবে তার প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে নাবিপদাপদে প্রায় মানুষই বলে ওঠে, ‘আয় মাবুদ আমারে উঠিয়ে নাও। মরণ দাও আমাকে।’ এমনটা বলা একেবারেই উচিত নইসলামে মৃত্যু কামনা নিষেধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিপদের কারণে তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই মৃত্যু প্রত্যাশা না করে। কারও যদি মৃত্যু প্রত্যাশা করতেই হয়, তাহলে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচিয়ে রাখো, যতক্ষণ আমার জন্য জীবন কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৭১)

 

অনেকে মনে করেন, পুনর্জন্ম হবেএটা ভ্রান্ত ধারণামৃত্যুর পর কেউ দুনিয়ায় আসতে পারবে না। মৃত্যুর পর সৎকর্মশীল মানুষের রুহ বা আত্মা ‘ইল্লিয়িন’ নামক স্থানে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে সেখানে অবস্থান করবে এবং হাশরের দিন বিচারকার্য শেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর অবিশ্বাসী ও পাপী লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক স্থানে থাকে। এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুরা মুতাফফিফি, আয়াত : ৭-১৮)

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির গোসল দেখলে যা হয়

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির গোসল দেখলে যা হয়
কবরস্থানের ছবি। ইন্টারনেট

মৃত ব্যক্তির নিজে নিজেই গোসল করতে দেখা তার নিকটাত্মীয়দের দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া এবং তাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার আলামত। মৃতকে গোসল দিতে দেখলে ওই লোকের হাতে এমন এক ব্যক্তি তওবা করবে, যার দ্বীনি কাজে ত্রুটি রয়েছে। 

গোসলকারী দেখা, সফল ব্যবসায়ীর লক্ষণ; যার দ্বারা অনেক লোক চিন্তামুক্ত হবে। অথবা ভদ্র লোকের আলামত; যার হাতে অনেক বদকার তওবা করবে।

নিজেকে গোসলদাতার হাতে অর্পিত দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে এবং চিন্তামুক্ত হবে। মুর্দাকে তার কাপড় ধুয়ে দেওয়ার জন্য লোক সন্ধান করতে দেখা মুর্দার দোয়া, দান, ঋণ পরিশোধ, বিবাদীকে রাজি করা বা অসিয়ত ইত্যাদির প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার আলামত। 

কোনো মৃত ব্যক্তির কাপড় খুলে দিতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টার পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির জন্য কিছু নেক কাজ বা সওয়াব পৌঁছাবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। অন্য দিনে রোজা রাখা সুন্নত। পবিত্র কেরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু রমজান মাসেই রোজা রাখতেন, এমন নয়। বরং রমজান ছাড়া অন্যান্য সময়ও তিনি রোজা রাখতেন। যেমন প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখেন? উত্তরে তিনি বলেন, নিশ্চয় এ দুটি দিনে আল্লাহ পরস্পর বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনকারী দুই ব্যক্তি ছাড়া সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। (ফেরেশতাদের তিনি বলেন) তারা আপস-মীমাংসা করা পর্যন্ত তাদের ত্যাগ করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৪০) 

হাদিসে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজার বিষয়ে বিশেষ ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। এর পর আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তবে ভাইয়ের সঙ্গে যার শত্রুতা বিদ্যমান, তাকে তিনি ক্ষমা করেন না। এরপর বলা হয়, আপস করা পর্যন্ত এ দুজনকে অবকাশ দাও, আপস করা পর্যন্ত এ দুজনকে অবকাশ দাও, আপস করা পর্যন্ত এ দুজনকে অবকাশ দাও।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৫) 

কখনো কখনো রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসের তিন দিন রোজা রাখতেন। হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিমাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৫১)

বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে না পারলেও সোমবারের রোজা ছাড়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃহস্পতিবারের চেয়ে সোমবারের রোজায় অধিক নিয়মিত ছিলেন। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেছেন, এদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আর এ দিনই আমার ওপর কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬২) 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য
মসজিদ নববি, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি: ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) সব নবি-রাসুল থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁর মতো মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ জগতে আগমন করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। তার আগে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না, একমাত্র তাঁর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। তিনি জগতের শেষ নবি। তার পরে কোনো নবির আগমন হবে না। এটা মহান অধিশ্বর আল্লাহর শাশ্বত বিধান। তার ওপর অর্পিত রিসালাত বা আল্লাহর বার্তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রিসালাত। তার রিসালাতের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নবি-রাসুলের রিসালাত থেকে অনন্য। তার রিসালাতের সংক্ষিপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো—


আদম (আ.) সৃষ্টির আগেই তিনি নবি
পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর সৃষ্টির আগেই মহানবি (সা.) নবি ছিলেন। যখন আদম (আ.) পানি ও মাটির সংমিশ্রণে ছিলেন, তখন তিনি নবি ছিলেন। সৃষ্টির প্রথম ভোরেই আল্লাহ তার আত্মা পরম যত্ন সৃষ্টি করেন। আদম (আ.) মানুষের অস্তিত্বে আসার পরই মোহাম্মদ (সা.)-এর নামের ঝলক দেখতে পান। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তখনো নবি ছিলাম, যখন আদম আত্মা ও শরীরের মধ্যে অবস্থান করছিলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৯)


পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে সত্যায়ন ও সুসংবাদ
মুহাম্মাদ (সা.) নবি হবেন, মানুষকে হেদায়াতের দ্যুতিময় পথ দেখাবেন। তার আবির্ভাবে তার আনীত ধর্ম পালন করাই হবে একমাত্র সফলতা; আল্লাহতায়ালা এ ঘোষণা পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন তাওরাত কিতাবেও। একজন নবির আগমন অপর একজন নবির মাধ্যমে তাঁর ওপর অবতীর্ণ কিতাবের ইশতেহার প্রমাণ করে মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবি; যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আ.) বলেছিলেন, হে বনি ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসুল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন যার নাম আহমদ।’ (সুরা সফ, আয়াত : ০৬)

রহমতের নবি
আল্লাহতায়ালা ইসলামের নবি মোহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। বিশ্বমানবতার পরিপূর্ণ কল্যাণের জন্যই তাঁকে পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীতে  তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান পুরুষ। যিনি পুরো দুনিয়ার মানুষের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য আগমন করেছেন। শান্তি-সম্প্রীতি ও সুখের বাতাস বইয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর ঘরে ঘরে। তার আগে কেউ ব্যাপক বিপুল রহমত নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেননি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবি, আমি তোমাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, ‘একবার কিছুসংখ্যক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করার জন্য আবেদন করল! তাদের আবদার রাসুলুল্লাহ (সা.) অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি অভিসম্পাতকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি, আমি রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৩২)

বিশ্ববাসীর নবি
আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে আগত নবিদের শুধু নির্দিষ্ট গোত্র জাতিকে কেন্দ্র করে পাঠিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সা.) কোনো বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি, কোনো বিশেষ দেশ ও অঞ্চলের জন্য প্রেরিত হননি, তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তিনি আরব ও অনারবের নবি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে লাল ও কালো জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘জিন ও মানুষের কাছে’। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ‘আরব ও আজমের দিকে পাঠানো হয়েছে’। (শরহে তাহাবি, ১৫/১৭)

স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন
পৃথিবীতে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না। একজন নবি এক অঞ্চলের পথপ্রদর্শক হিসেবে আগমন করতেন। অন্য অঞ্চলের জন্য আগমন করতেন আরেকজন। দুজনের দ্বীন ও শরিয়ত বা বিধিবিধান ছিল ভিন্ন রকম। কারও শরিয়ত পূর্ণাঙ্গ ছিল না। মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বীন একমাত্র পরিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ০৩)

হাউজে কাওসারের অধিপতি
কিয়ামতের দিন হাউজে কাওসারের পানি পান করে মুমিনরা পরিতৃপ্ত হবে। জান্নাতে পৌঁছানো পর্যন্ত তাদের আর কোনো তৃষ্ণা আসবে না। হাউজে কাওসারের পানি পানকারী আল্লাহর পছন্দের বান্দা হবে। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মাদ (সা.)-কে হাশরের দিন হাউজে কাওসার দান করবেন, যা অন্য কোনো নবিকে দান করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে হাউজে কাওসার দান করেছি।’ (সুরা কাওসার, আয়াত : ০১)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে হাউজে কাওসারের বর্ণনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি হাউজের পাশে তোমাদের আগে থাকব।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬১০৬)

পাঁচটি বিশেষ অধিকার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এমন পাঁচটি বিশেষ জিনিস দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি। পাঁচটি বিষয়ের অধিকার একমাত্র তাঁকেই দান করা হয়েছে। জাবের (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমাকে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগের অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি—

  • আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, এক মাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়।
  • সমস্ত জমিন আমার জন্য পবিত্র ও নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ ওয়াক্ত হলেই (পবিত্র জায়গায়) নামাজ আদায় করতে পারবে।
  • আমার জন্য গনিমতের সম্পদ হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারও জন্য হালাল করা হয়নি।
  • আমাকে (ব্যাপক) শাফায়াতের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • সব নবি প্রেরিত হতেন শুধু তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য।’ ( বুখারি, হাদিস : ৩৩৫)

সর্বশেষ নবি
মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের আগে প্রত্যেক নবির পর নবি আগমন করেছেন। মুহাম্মাদ (সা.) হলেন শেষ নবি। তারপর আর কোনো নবি পৃথিবীতে আগমন করবেন না। তার মাধ্যমে রিসালাতের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবি।’  (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)। মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রিসালাত ও অন্য নবির রিসালাতের পার্থক্য বিধান তৈরি করতে গিয়ে এভাবে উপমা দেন যে, ‘এক ব্যক্তি অনেক সুন্দর করে একটি ঘর নির্মাণ করল। তবে একটি স্বর্ণের পরিমাণ জায়গা খালি রাখল। মানুষ তা দেখে আশ্চর্যবোধ করল এবং বলল, কেন এ ইটটি বসানো হলো না? তিনি বলেন, আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবি।’ ( বুখারির সূত্রে মিশকাতুল মাসাবিহ)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

হজের ফরজ কয়টি

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
হজের ফরজ কয়টি
কাবা ঘর ঘিরে তাওয়াফ করছেন হাজিরা। পুরনো ছবি

হজ মুসলমানদের বৃহত্তম মিলন মেলা। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ হজের উদ্দেশে মক্কা-মদিনায় যান। ইসলামি বিধিমতে হজের ফরজ চারটি। কেউ যদি এই চারটির কোনো একটি পরিপূর্ণভাবে পালন না করে, তা হলে তার হজ সহিহ হবে না।

এক. ইহরাম বাধা:  হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি হজের নিয়ত করবে না তার হজ হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমলসমূহ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়ত করে।’( বুখারি, ১)

দুই. আরাফায় অবস্থান: রাসুলুল্লহা (সা.) বলেছেন, ‘হজ হচ্ছে আরাফা।’ (এরওয়াউল গালিল, ৪/২৫৬)

তিন. বায়তুল্লাহর তাওয়াফ: বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা ফরজ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ২৯)

সাফিয়া (রা.) যখন ঋতুবতী হলেন, তখন নবিজি (সা.) বললেন, ‘সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে? আয়েশা (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, সে তো ইফাজা অর্থাৎ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছে। তাওয়াফে ইফাজার পর সে ঋতুবতী হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা হলে এখন যাত্রা করো।’ (বুখারি, ৪২৮)

চার. সাফা-মারওয়া সাই: হজের সময় সাফা ও মারওয়ায় সাই করা ফরজ। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাই করো। কেননা আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর সাই ফরজ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, ৪২১)। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার জীবনের কসম, আল্লাহ কখনো সে ব্যক্তির হজ পরিপূর্ণ করবেন না, যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাই করে না।’ (মুসলিম, ৯২৮)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

রোগমুক্তির দোয়া

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
রোগমুক্তির দোয়া
প্রার্থনারত ব্যক্তির ছবি। ফ্রিপিক

সুস্থতা যেমন আল্লাহর নেয়ামত, তেমনি অসুস্থতাও। তবে অসুস্থতার নেয়ামত মানুষকে কখনো পীড়িত করে। আল্লাহ অসুস্থতা দিয়ে পরীক্ষা নেন কখনো। অসুস্থ হলে অধৈর্য হওয়া যাবে না। আল্লাহ সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য করা যাবে না। এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যা ঈমানের ক্ষতিসাধন করে। অসুস্থতায় আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। দোয়ার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ হয়। দোয়ার মাধ্যমে মানুষের জীবনের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ খুশি হন। এখানে আরোগ্য লাভের কয়েকটি দোয়া তুলে ধরা হলো—

এক.
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইজা মারিজতু, ফা হুয়া ইয়াশফি নি।
বাংলা অর্থ: যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই (মহান আল্লাহই আমাকে) আরোগ্য দান করেন। (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৮০)

দুই. 
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল কোরআনি মা হুয়া শিফাউও, ওয়া রাহমাতুল্লিল মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: আমি (আল্লাহ) কোরআনে এমন কিছু নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৮২)

তিন. 
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইয়াশফি সুদুরা কাওমি মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ, তুমি মুমিনদের অন্তরকে রোগমুক্ত করে দাও। (সুরা তওবা, আয়াত: ১৪)

চার.
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া শিফা উল্লিমা ফিস সুদুর, ওয়া হুদাও ওয়া রহমাতুললিল মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: (কোরআন হচ্ছে) মুমিনদের জন্য অন্তরের রোগগুলোর প্রতিষেধক। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭)

পাঁচ.
সুরা ফাতিহাকে সুরাতুশ শিফা বলা হয়। সুরা ফাতিহা পাঠ করে রোগীর শরীরে ফুঁ দিলে বা পানিতে ফুঁ দিয়ে রোগীকে খাওয়ালে আল্লাহ সুস্থতা দান করবেন। আবদুল মালেক ইবনে উমায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা ফাতেহা সব রোগের মহোষুধ।’ (দারেমি, হাদিস: ৩৪১৩)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক