সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন সৌদি হজ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস অফিস রাওয়াফ আল মিনা হজ কোম্পানি সার্ভিস অফিসের প্রধান ও তুর্কি স্টাবলিশমেন্ট মক্কা আল মোকাররমার চেয়ারম্যান শায়খ সামি বিন মোহাম্মদ সাইদ বিন মাহবুব ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শায়খ সামির বিন মোহাম্মদ সাইদ বিন মাহবুব। প্রতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশি হাজিদের হজকালীন অবস্থা এবং আরও ভালোভাবে হজ পালনে করণীয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। সঙ্গে ছিলেন সৌদি আল হিকমা গ্রুপের এমডি কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
হজ মুসলমানদের বিশ্ব সম্মেলন। সেখানে হাজিদের সেবা করতে পারা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আপনারা সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন, এটি কিভাবে উপভোগ করছেন?
হাজিদের আমরা আল্লাহর মেহমান মনে করে সেবা করি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজিদের মন-প্রাণ উজাড় করে খেদমত করি। এটা আমাদের জন্য গৌরবের ব্যাপার। এই সেবা করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই সেবা যেন আমরা আমৃত্যু করতে পারি, সে জন্য আল্লাহর কাছে তাওফিক চাই।
হজের সময় আপনারা কোন ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন বা ব্যবস্থাপনা করেন কীভাবে?
সারা পৃথিবী থেকে যে বা যারা হজে আসেন, তাদের সংখ্যা আগেই আমরা জেনে থাকি। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি হজসেবা অফিসকে পাঁচ হাজার হাজিদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। এভাবে ভাগ করে দেওয়ার ফলে আমাদের কাজ করতে অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। পবিত্র ভূমিতে হাজিদের সর্বোচ্চ মেহমানদারি নিশ্চিত করতে কাজ করি আমরা। যথাসময়ে যথাযথ বাসস্থান, নিরাপদ যাতায়াত, খাবার যাচাই-বাছাই করা, হজের সার্বিক আমলগুলো সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে হচ্ছে কি না তা তদারকি করাসহ জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ও মিনার তাঁবুগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করে থাকি। বিশেষ করে আরাফার দিন আরাফার ময়দানে আমাদের সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে হাজিদের সেবা করতে হয়।
পৃথিবীর সব মুসলিম দেশ থেকেই মুসলমানরা হজ করতে যান। কোন দেশের মুসলিমদেরকে আমল-ইবাদতের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মনে হয়?
বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আফ্রিকার হাজিরা ভালো। আমল-ইবাদতের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। পাকিস্তানিরাও মোটামুটি ভালো। তবে শৃঙ্খলার দিক থেকে সবচেয়ে ভালো ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা। এক প্লেনে আসা, এক হোটেলে থাকা এবং একতাবদ্ধ হয়ে হজের সব আমল পালন করার ক্ষেত্রে তারা সবার চেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল।
বাংলাদেশি হাজিদের অবস্থা ও অবস্থান কেমন?
হাজিরা আল্লাহর মেহমান। তাদের সেবা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। বাংলাদেশি হাজিদের আমরা খুব পছন্দ করি ও ভালোবাসি। যার কারণে আমরা এ দেশে এসেছি। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, বাংলাদেশি হাজিদের চাহিদা কম, তারা কথাবার্তা কম বলেন এবং আমলের প্রতি তাদের আগ্রহ প্রশংসাতুল্য। তাদের সঙ্গে কাজ করে আমরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে শৃঙ্খলার বিবেচনায় বাংলাদেশি হাজিরা কিছুটা অসচেতন। এক কাফেলার বাংলাদেশি হাজিরা ভিন্ন ভিন্ন প্লেনে আসেন, এক হোটেলে ভিন্ন ভিন্ন কাফেলার মানুষ থাকেন অথবা এক কাফেলার হাজি একাধিক হোটেলে থাকেন। ফলে তাদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছুটা অসুবিধা হয়। বাংলাদেশি হাজিরাও এতে মুশকিলে পড়েন।
কোন ধরনের কাজ করলে বাংলাদেশের হাজিদের ব্যবস্থাপনা ভালো হবে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশি হাজিদের উদ্দেশ্যে আপনাদের পরামর্শ কি?
প্রথম কথা হচ্ছে, বাংলাদেশি হাজিদের শৃঙ্খলার প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে এবং এ ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা জানি, বাংলাদেশি হাজিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা বলব–প্রশিক্ষণকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। মক্কা-মদিনায় অবস্থানকালে সব সময় পরিচিতি কার্ডের সঙ্গে কিউআর কোডসংবলিত কাগজ বহন করতে হবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ হজ পালনে যান। তাদেরকে আধুনিক হোটেল ব্যবহারের নিয়মগুলো বিশেষত হাইকমড ও ইলেক্ট্রিক্যাল দরজা ব্যবহারের নিয়ম শেখাতে হবে। বাংলাদেশি হাজিদের সার্বিক অংশগ্রহণ ও অবস্থান ভালো; তবে শৃঙ্খলা ও আধুনিকায়নগত কিছু বিষয়ে আরও উন্নতি ঘটানো সম্ভব হলে তারা হবেন সেরা হাজি।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক