ঢাকা ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
English

প্রতিভাগে গোশতকে সমান সমান তিন ভাগ করা কী জরুরি?

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০২:০০ পিএম
প্রতিভাগে গোশতকে সমান সমান তিন ভাগ করা কী জরুরি?
কোরবানির গোশতের ছবি। সংগৃহীত

অনেকে কোরবানির গোস্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রেখে, এক ভাগ আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও এক ভাগ ফকির মিসকিনকে দেওয়া জরুরি মনে করেন। অথচ এভাবে বণ্টন করা জরুরি নয়, তবে উত্তম। কেউ এতে ত্রুটি করলে কোন গুনাহ হবে না এবং কোরবানিরও কোন ক্ষতি হবে না। কেউ কেউ পুরো পশুই ফ্রীজে ঢুকিয়ে রাখে, কিছুই দান করে না। এটাও ঠিক নয়, অনুত্তম। (সুরা হজ ৩৬; বাদায়েউস্ সানায়ে ৪/২২৪; আলমগিরী ৫/৩০০)

লেখক: আলেম,গবেষক ও সাংবাদিক

খাটের ওপর নামাজ পড়লে সামনে দিয়ে হাঁটা কি জায়েজ?

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
খাটের ওপর নামাজ পড়লে সামনে দিয়ে হাঁটা কি জায়েজ?
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায়, কেউ খাটের বা চৌকির ওপর নামাজ পড়ছেন। এমন অবস্থায় তার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে কি গুনাহ হবে? উল্লেখ্য, খাট বা চৌকি দেড়-দুই ফুট উঁচু হয়ে থাকে।


উত্তর: নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া নিষেধ। এটা সমতল ভূমি হোক বা উঁচু স্থান, বিধান একই। নামাজের সময় মুসল্লির সামনে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত অন্য কারোর যাওয়া নিষিদ্ধ। এই স্থানটিকে সুতরা বলা হয়। হাদিস অনুযায়ী, নামাজির সামনে দিয়ে সুতরা (নামাজির সামনে রাখা কোনো বস্তু) ছাড়া অতিক্রম করা গুনাহের কাজ। এই নিয়মটি কেবল সমতল ভূমির জন্য নয়, বরং চৌকি বা খাটের ওপর নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ নামাজরত ব্যক্তি যেখানে নামাজ আদায় করছেন, তার সম্মুখভাগকে সুতরা-স্থানের মধ্যে ধরা হয়।

অতএব, যদি কোনো ব্যক্তি চৌকি বা খাটের ওপর নামাজ আদায় করেন, তাহলে তার সামনে দিয়ে সরাসরি হেঁটে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে যদি একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে নামাজরত ব্যক্তির সামনে কোনো সুতরা রেখে অথবা চৌকির নিচ দিয়ে যাওয়া যাবে।


[তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি (১/৭১), ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/১০৪), ফাতহুল কাদীর (১/৩৪৫), আলবাহরুর রায়েক (২/১৭), এবং আদ্দুররুল মুখতার (১/৬৩৪)]

ছেলের শাশুড়িকে বিয়ে করা কি শরিয়তসম্মত?

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
ছেলের শাশুড়িকে বিয়ে করা কি শরিয়তসম্মত?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

প্রশ্ন: আমার ছেলের শ্বশুর এক বছর আগে মারা গেছেন, আর আমার স্ত্রী মারা গেছেন তিন বছর আগে। এখন অনেকে আমাকে আমার ছেলের শাশুড়িকে বিয়ে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমার জানার বিষয় হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে তাকে বিয়ে করতে কি কোনো বাধা আছে?


উত্তর: আপনার জন্য আপনার ছেলের বিধবা শাশুড়িকে বিয়ে করতে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। এই বিবাহ সম্পূর্ণরূপে বৈধ।
সাধারণত, একজন পুরুষের জন্য তার নিজের শ্বশুরকে (স্ত্রী থাকা অবস্থায়) বা শাশুড়িকে (স্ত্রীর মৃত্যুর পর) বিয়ে করা নিষিদ্ধ। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। আপনার স্ত্রী তিন বছর আগে মারা গেছেন, এবং তার সাথে আপনার বৈবাহিক সম্পর্ক আর নেই। আপনার ছেলের শাশুড়ি আপনার জন্য সরাসরি কোনো রক্তের সম্পর্কের কারণে মাহরাম (যাকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ) নন। আপনার স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় তার মাকে বিয়ে করা আপনার জন্য হারাম ছিল। তবে এখন যেহেতু আপনার স্ত্রী আর জীবিত নেই, তাই তাদের মায়ের সাথে আপনার সরাসরি কোনো বৈবাহিক সম্পর্কজনিত প্রতিবন্ধকতা নেই।

[তথ্যসূত্র: ফাতহুল কাদির (৩/১২০) রদ্দুল মুহতার (৩/৩১)]

উ দিয়ে ছেলে শিশুর শ্রুতিমধুর আধুনিক ও অর্থপূর্ণ নাম—পর্ব ১

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২২ এএম
উ দিয়ে ছেলে শিশুর শ্রুতিমধুর আধুনিক ও অর্থপূর্ণ নাম—পর্ব ১
ছেলে শিশুর ছবি । সংগৃহীত

ইসলামিক নাম নির্বাচনে অর্থের গভীরতা ও শ্রুতিমধুরতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। উ অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া এমন কিছু চমৎকার ইসলামিক নাম এখানে তুলে ধরা হলো, যা আপনার পুত্র সন্তানের জন্য হতে পারে এক অনন্য পছন্দ। এই নামগুলো কেবল সুন্দরই নয়, বরং প্রতিটি নামের সঙ্গেই রয়েছে বিশেষ অর্থ ও তাৎপর্য।

নাম (আরবি)

উচ্চারণ

অর্থ

প্রাসঙ্গিক তথ্য/মন্তব্য

عُويم

উওয়াইম

প্রিয় বছর

একটি সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর নাম, যা প্রিয়তার ইঙ্গিত দেয়।

عقبة

উকবা

পরিণাম, প্রতিদান

এই নামটি একটি ভালো ফল বা পুরস্কারের অর্থ বহন করে।

عكاشة

উক্কাশা

মাকড়সা

একজন বদরি সাহাবি, যিনি সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য পরিচিত।

عتبة

উতবা

সন্তুষ্ট, উপত্যকার বাঁক

ইসলামের অন্যতম শত্রু আবু লাহাবের পুত্র, যিনি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করে একজন মহান সাহাবি হয়েছিলেন।

أبي

উবাই

মন্দ প্রত্যাখ্যানকারী

ওহি লেখক এবং নবিজির (সা.) সঙ্গে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন প্রসিদ্ধ সাহাবি।

عُبَيْدٌ

উবাইদ

প্রিয় বান্দা

আল্লাহর প্রিয় ও অনুগত বান্দা অর্থে ব্যবহৃত হয়।

عُبَيْدَ

উবাইদা

প্রিয় বান্দা

উবাইদ-এর সমার্থক, যা আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশ করে।

عُبَادَةُ

উবাদা

ইবাদত, আনুগত্য

আকাবার উভয় বাইআতসহ নবিজির (সা.) সঙ্গে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন মহান সাহাবি, যিনি আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত ছিলেন।

عمر

উমর

জীবন

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, যিনি তাঁর ন্যায়বিচার ও সুশাসনের জন্য সুপরিচিত।

عُمَير

উমাইর

প্রিয় জীবন

একটি সুন্দর নাম যা জীবনকে ভালোবাসার এবং ইতিবাচকতার ইঙ্গিত দেয়।

عمارة

উমারা

নির্মাণশ্রমিকের মজুরি

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শত্রুহামলা থেকে রক্ষা করতে উহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া একজন বীর শিশুর নাম।

عثمان

উসমান

হুবারা (Chlamydotis) পাখির ছানা

ইসলামের তৃতীয় খলিফা, যিনি তাঁর উদারতা ও জ্ঞানচর্চার জন্য প্রসিদ্ধ।

عُصَين

উসাইন

প্রতিরোধক

যিনি প্রতিরোধ করেন বা রক্ষা করেন এমন অর্থ বহন করে।

أسامة

উসামা

সিংহ

তাঁর উপাধি হলো হববুর রাসুল অর্থাৎ রাসুলের (সা.) ভালোবাসার পাত্র। নবিজি (সা.) তাঁকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন এবং বলেছেন, যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে সে যেন উসামাকেও ভালোবাসে।

 লেখক: আলেম ও সাংবাদিক 

পীর, মাওলানা ও শায়েখ কাকে কি ডাকবেন?

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২২ এএম
পীর, মাওলানা ও শায়েখ কাকে কি ডাকবেন?
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

‘পীর’ এটি ফারসি শব্দ। অভিধানে যার অর্থে লেখা হয়েছে—মুসলমান সাধুপুরুষ, পুণ্যাত্মা। মানে যিনি দুনিয়াত্যাগী পুরুষ। আল্লাহভীতি আছে যার মনে। ইবাদত-বন্দেগিতে মত্ত এমন মহান ব্যক্তি। ‘শায়েখ’ আরবি শব্দ। যার বহুবচন মাশায়েখ এবং ‘বুজুর্গ’- এ দুটোর অর্থও সম্মানিত ব্যক্তি, ধর্মীয় পণ্ডিত ও বয়োবৃদ্ধ মানুষকেই বোঝায়। যিনি বয়সে বা ইলম-জ্ঞানের দিক থেকে বড়ো ও শ্রদ্ধাভাজন। 


সাধারণত আরব জাহান এবং ইরান-ইরাক প্রভৃতি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষাসম্পন্ন করা একদল নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিগণই হলেন পীর-মাশায়েখ। যেমন—শাহ জালাল ইয়ামেনি (রহ.)। যিনি সুদূর ইয়ামেনের অধিবাসী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জন্মস্থান ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের সিলেটে আমৃত্যু ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। ঠিক এভাবেই যারা ইসলাম, ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির দাওয়াত নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে; ছুটে গিয়েছেন শহরে নগরে হাটে বাজারে গ্রামে বন্দরে। তাদের হাত ধরেই অসংখ্য মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসেছে। ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছে। ইসলাম ধর্ম শিখেছে। আর পীর-মাশায়েখরাই পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাই বলে। ঐতিহাসিকরা এমন ইতিহাসই রচনা করেছেন। তবে তৎকালীন সময়ের আধ্যাত্মিক ধর্মীয় নেতা বা পীর-বুজুর্গরা ছিলেন সত্যিকারার্থে আল্লাহভীতির গুণে গুণান্বিত। আপাদমস্তক ইসলামের আলোয় উজ্জীবিত। তাদের আমল আখলাক প্রভৃতি ছিল সুন্নতের নমুনায় উদ্ভাসিত।


এর বাইরে অতীতে এবং বর্তমানেও কতক নামধারী ভণ্ড প্রতারক পীর বা আলেম রয়েছেন, যারা ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও আদর্শ লালন না করলেও ইসলামের অপব্যাখ্যায় তারা সিদ্ধহস্ত। কাজেই এমন দু-চারজন ভণ্ড প্রতারক দেখে বাকি সব বুজুর্গ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করা কিছুতেই সঠিক ও সমীচীন হতে পারে না। এ জন্য চুন খেয়ে জিহ্বা পুড়ে গেলে দইয়ের প্রতি ভয়ের কারণ নেই। তেমনি ভণ্ড প্রতারক পীর দেখে সত্যিকার পীর-বুজুর্গ আলেম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কোনো অর্থ হতে পারে না। মূলকথা হলো, পীর মানে ধর্মীয় নেতৃত্বদানে সক্ষম এমন নেতৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তি। আর আরবিতে যা হুবহু শায়েখ শব্দেই ব্যক্ত করা যায়। কিংবা বলা যায়, ধর্মীয় মুরব্বি। অনুসরণীয় নেতা। অভিভাবক অর্থেও হতে পারে। অনুরূপ মাওলানার বেলায়ও একই কথা। যার অর্থ হলো, আমাদের বন্ধু বা অভিভাবক। আর অভিভাবক মাত্রই নেতৃত্ব দিতে সক্ষম- এমন কাউকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করা উদ্দেশ্য। তবে তার মধ্যে সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় শিক্ষা ও আদর্শ থাকা জরুরি। নয় তো তিনিই হতে পারেন ঈমান আমল ধ্বংসের কারিগর। 


বাস্তবিক অর্থে অতীতে যারাই ধর্মীয় বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন—এমন আলেমই হলেন, পীর ও শায়েখ, মাশায়েখ। আর যারাই ধর্মীয় নেতা হবেন, ইসলামের নেতৃত্ব দেবেন, তারাই মূলত দেশ ও এলাকাভেদে এই পীর মাওলানা শায়েখ জাতীয় লকবগুলো বহন করে থাকেন। কেউ একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণ করে, তালিম-তারবিয়ত হাসিল করে। কেউবা এমনিতেই। আবার কেউ কেউ কারও অতিভক্তি, অজ্ঞতা, ভুলভাল প্রচারণার শিকার হয়ে বয়ান বক্তৃতা; কিংবা জনসমাগমে প্রভাবিত হয়ে এই কাজটি করেন। ভক্তরাও তা অন্ধবিশ্বাসে গেলেন। তাই তারা, বলেন- লেখেন ও দাবি করেন- পীর মাওলানা ও শায়েখ। অনেকে বাপ-দাদার বংশের ধারায় নিজেকে পীরজাদা পরিচয় দেন। নামের শুরুতে পীর যুক্ত করেন। এমন লোকজন থেকেও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। 


আর আজকাল তো ‘পীর’ শব্দটি অনেকটাই পৈতৃক হয়ে গেছে। বাবা পীর ছিলেন। ব্যস, ছেলেও পীর। তবে হক্কানি পীর এক জিনিস। আর ভণ্ড প্রতারক ধর্মব্যবসায়ী পীর আরেক জিনিস। একাডেমিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক সোহবত সান্নিধ্য ছাড়া যারা পীর, তারা কোন্ স্তরের পীর? কেমন পীর? যা-ই হোক, সেই ধারাবাহিকতায় দাড়ি টুপি লেবাস সুরত দেখেই কোনো ইউটিউবারও যদি কাউকে পীর-মাওলানা শায়েখ দাবি করে, রীতিমতো প্রচার করতে শুরু করে- তাতে আপাতত অবাক হওয়ার কিছু নাই!

 
এ জন্য পীর মাওলানা শায়েখ ইত্যাদি ধর্মীয় পরিভাষার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। সঠিকভাবে এগুলোর প্রয়োগ তথা ব্যবহার করতে হবে। হুট করে কাউকে পীর মানা যাবে না। যদি তিনি কোরআন-হাদিসের সঠিক অনুসরণ না করেন, তবে এমন পীর বুজুর্গ শায়েখ ইত্যাদি পরিহারযোগ্য। এদেরকে পরিহার করে হক্কানি আলেমদের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষাগুলো বুঝেশুনে, সঠিকভাবে এগুলোর মর্ম বোঝার তাওফিক দান করুন। প্রতারক পীর শায়েখ ইত্যাদি ধর্মীয় পরিভাষা ব্যবহারকারী চক্র থেকে আমাদের দ্বীন ঈমান আমল রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। 

 

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর 

নবির (সা.) শিক্ষা করো না ভিক্ষা

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২২ এএম
নবির (সা.) শিক্ষা করো না ভিক্ষা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ভিক্ষুকের ছবি

ইসলাম মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে। জাগিয়ে তুলেছে আত্মমর্যাদাবোধ।‌ দেখিয়েছে আত্মনির্ভরতা ও হালাল জীবিকার পথ। ইসলাম চায় প্রতিটি মানুষ সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করুক। পরিশ্রম করুক এবং নিজের উপার্জনে গর্ববোধ করুক। মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে জীবনের শুরু থেকেই কর্মমুখী ছিলেন। কখনো তিনি ব্যবসা করেছেন, আবার কখনো গবাদিপশু চরিয়েছেন। তার জীবনযাপন ও সাহাবায়ে কেরামকে দেওয়া নির্দেশনা যুগে যুগে পরিশ্রমী মুসলিম সমাজের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। 


আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যক্তি নবি কারিম (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার ঘরে কি কিছু নাই? সে বলে- হ্যাঁ, আছে একটি মাত্র কম্বল, যার অর্ধেক আমি পরিধান করি এবং বাকি অর্ধেক বিছিয়ে শয়ন করি। আর আছে একটি পেয়ালা, যাতে আমি পানি পান করি। তিনি বলেন, উভয় বস্তু আমার নিকট নিয়ে আস। নবি বলেন, সে তা আনয়ন করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা স্বহস্তে ধারণপূর্বক (নিলামের ডাকের মতো) বলেন, কে এই দুটি ক্রয় করতে ইচ্ছুক? এক ব্যক্তি বলে, আমি তা এক দিরহামের বিনিময়ে গ্রহণ করতে চাই।

অতঃপর তিনি বলেন, এক দিরহামের অধিক কে দেবে? তিনি দুই বা তিনবার এইরূপ উচ্চারণ করেন। তখন এক ব্যক্তি বলে, আমি তা দুই দিরহামের বিনিময়ে গ্রহণ করব। তিনি সেই ব্যক্তিকে তা প্রদান করেন এবং বিনিময়ে দুইটি দিরহাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা আনসারীর হাতে তুলে দিয়ে বলেন, এর একটি দিরহাম দিয়ে কিছু খাদ্য ক্রয় করে তোমার পরিবার-পরিজনদের দাও; আর বাকি এক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার নিকট আসো। লোকটি কুঠার কিনে আনলে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বহস্তে তাতে হাতল লাগিয়ে তার হাতে দিয়ে বলেন, এখন তুমি যাও এবং জঙ্গল হতে কাঠ কেটে এনে বিক্রি কর। আর আমি যেন তোমাকে পনেরো দিন না দেখি। অতঃপর সে চলে গেল এবং কাঠ কেটে এনে বিক্রি করতে থাকে। অতঃপর সে (পনেরো দিন পর) এল। সে তখন প্রাপ্ত হয়েছিল দশটি দিরহাম, যা দিয়ে সে কিছু কাপড় এবং কিছু খাদ্য ক্রয় করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির চাইতে এটা তোমার জন্য উত্তম। কেননা ভিক্ষাবৃত্তির ফলে কিয়ামতের দিন তোমার চেহারা ক্ষত-বিক্ষত হতো। ভিক্ষা চাওয়া তিন শ্রেণির ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের জন্য হালাল নয়। ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য, প্রচণ্ড ঋণের চাপে জর্জরিত ব্যক্তির জন্য এবং যার ওপর দিয়াত (রক্তপণ) আছে, অথচ তা পরিশোধের অক্ষমতার কারণে নিজের জীবন বিপন্ন। এ ধরনের ব্যক্তিরা ভিক্ষা করতে পারে। ( আবু দাউদ, ১৬৪১) 


ভিক্ষাবৃত্তি শরিয়তে কেবল নির্দিষ্ট ও জরুরি পরিস্থিতিতেই বৈধ। স্লোগান হোক–নবির শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সবে।

 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক