দেশে এক বছরের ব্যবধানে জেলা থেকে জেলায় স্থানান্তরের হার বেড়েছে। একইভাবে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরও বেড়েছে। জেলা পর্যায়ে জনসংখ্যার অভিবাসন ও স্থানান্তরের হার বাড়া-কমার পরিসংখ্যান নিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের টানা ৫ বছরের চিত্র উঠে এসেছে বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এর মধ্যে ২০২১-২০২২ সালের তুলনামূলক ব্যবধান বেশি দেখা গেছে।
মানুষের পরিবারসহ স্থানান্তরের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, মূলত পুশ অ্যান্ড পুল ফ্যাক্টরের কারণে মানুষ নিজের বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করে। সেটা হোক অভ্যন্তরীণ সীমানার মধ্যে কিংবা আন্তর্জাতিক পরিসরে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন, যেখানে বসবাস করছেন সেখানে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেটা উপার্জনকেন্দ্রিক, নিরাপত্তাকেন্দ্রিক কিংবা পরিবেশকেন্দ্রিক যাই হোক না কেন। ফলে ওই পরিস্থিতি থেকে তুলনামূলক ভালো কোনো অবস্থার আশায় মানুষ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যায়।
বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালের চিত্র অনুসারে প্রতি হাজার জনগোষ্ঠীর বিপরীতে সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ (জেলা থেকে জেলা) স্থানান্তরের হার ৩০ দশমিক ৮। ২০২১ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭। এর মধ্যে পুরুষ স্থানান্তরের হার নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে প্রতি হাজারে পুরুষ স্থানান্তরিত হয়েছেন ৩৩ দশমিক ৩ জন, সেখানে নারীদের স্থানান্তরের এ হার প্রতি হাজারে ২৮ দশমিক ৩ জন।
অন্যদিকে গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের মানুষের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের হার ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি। শহরাঞ্চলের মানুষের স্থানান্তরের প্রবণতাও গ্রামের জনগোষ্ঠীর তুলনায় বেশি। প্রতি ১ হাজার জনগোষ্ঠীর বিপরীতে গ্রাম অঞ্চল থেকে স্থানান্তর হার ৫ দশমিক ১ জন। শহরাঞ্চলে প্রতি ১ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে এ বৃদ্ধি ঘটেছে ১৮ দশমিক ৯ জন হারে।
স্থানান্তরের কারণ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জনসংখ্যার একটি বিপুল অংশ তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাসের লক্ষ্যে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে (আগমন ও বহির্গমন উভয়ক্ষেত্রেই)। অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের প্রায় ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে এবং বহির্গমনের প্রায় ৫১ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে আয়ের উদ্দেশ্যে এবং নারীদের ক্ষেত্রে বৈবাহিক কারণগুলো স্থানান্তর প্রক্রিয়ার দুটি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে নারীদের মধ্যে স্থানান্তরের হার সবচেয়ে বেশি ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে। বয়সের এ ক্রমপর্যায়ে পুরুষদের স্থানান্তরের মাত্রা নারীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ০-৪ বছরের শিশুদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে, যার ফলে এ বয়সভিত্তিক শিশুদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উচ্চ হার পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়টি ছেলে ও মেয়ে উভয় শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিএসএসের করা একই প্রতিবেদনে জেলার সীমানার মধ্যে প্রতি হাজার পরিবারের মধ্যে অন্তর্মুখী স্থানান্তরের হারের পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়। ২০২১-২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী, এক বছরে এই অন্তর্মুখী স্থানান্তরের হার হাজারে বেড়েছে ৫১ পরিবার। এতে, পল্লিমুখী স্থানান্তরের হার হাজারে বেড়েছে ২৯টি পরিবার এবং শহরমুখী স্থানান্তরের হার হাজারে বেড়েছে ১১৮টি পরিবার। তথ্যানুযায়ী একই জেলায় শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরের হার বেড়েছে ৭টি পরিবার এবং গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের হার বেড়েছে ২৬টি পরিবার। আবার, শহর থেকে শহরে স্থানান্তরের হার বেড়েছে ৯২টি পরিবার এবং গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তরের হার বেড়েছে ২২টি পরিবার।
পক্ষান্তরে জেলার সীমানার মধ্যে প্রতি হাজার পরিবারের মধ্যে বহির্মুখী স্থানান্তরের হারে এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬২ পরিবার। পল্লি থেকে বহির্গমনের হার হাজারে বেড়েছে ৫৯ পরিবার এবং শহর থেকে বহির্গমনের হার হাজারে বেড়েছে ৭১ পরিবার।