জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রায় শেষ। বাজারে হালি (নতুন) পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এর ফলে আড়ত ও পাইকারিতে কমেছে দাম। বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা কেজি। কিন্তু সেই তুলনায় খুচরা পর্যায়ে কমেনি। বিভিন্ন বাজারে খুচরায় ১১০-১২০ টাকার কমে পাওয়া যায় না। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ এলে সরবরাহ বেড়ে যাবে। দাম আরও কমবে।
এদিকে আমদানি শুল্ক কমানোর পরও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। ছোলার দামও তেমন কমছে না। চিনি ও খেজুরের দামও বাড়ছে।
অন্যদিকে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। শসার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার বলছে, রমজানের পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তাহলে বাজারে দাম বাড়ছে কেন? গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। এ কারণে বছরে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে থেকে ৬-৭ লাখ টন আমদানি করতে হয়। ভারত সরকার নিজেদের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ৭ ডিসেম্বর চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপরই হুট করে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে ১ লাখ টন চিনি ও ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার সে বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এ তথ্য ছড়িয়ে পড়লে আমদানিকারকরা এলসি করতে গেলেও ভারতের রপ্তানিকারকরা সাড়া দেননি। তাই কমছে না পেঁয়াজের দাম।’
অন্যদিকে খেতের মুড়িকাটা পেঁয়াজও প্রায় শেষ। তবে হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এ জন্য আড়ত ও পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর মাতৃভাণ্ডারের কালাম শেখ খবরের কাগজকে বলেন, আগের চেয়ে দাম কমেছে। ১০০-১০৬ টাকা কেজি। ভারতের পেঁয়াজ এখনো আসেনি। দেশি ও ভারতের পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে যাবে।
পাইকারিতে কিছু কমলেও খুচরা পর্যায়ে সেভাবে কমছে না। বিভিন্ন বাজারে এখনো ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের রফিকুল ইসলামসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা জানান, ভারতের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে ১১০-১২০ টাকা কেজি। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতেও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারেও খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, মাংস বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতা জসিম বলেন, ‘১০৫ টাকায় কেনা পেঁয়াজ। ১১৫ টাকা বিক্রি। এর কমে বিক্রি করলে লাভ হয় না।’ অন্য খুচরা ব্যবসায়ীরাও জানান, ১১০-১২০ টাকা কেজি। আল্লাহর দান স্টোরের মো. শাহ আলম বলেন, সরকার তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোম্পানি কমায়নি। ১ মার্চ থেকে কমাবে। আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে প্রতি লিটার ১৭০ টাকা, ৫ লিটার ৮২০ টাকা। কিছু দিন আগে বাড়লেও ছোলার দাম কমেনি। তাই ১০৫-১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
রমজান উপলক্ষে সরকার চিনিতে শুল্ক কমালেও বাজারে তার প্রভাব নেই। আগের মতোই বেশি দামে ভোক্তাদের চিনি কিনতে হচ্ছে। সরকার লাল চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকা কেজি ঘোষণা দেওয়া মাত্র পাইকারিতে বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা বেড়ে যায়। এ নিয়ে হইচই শুরু হলে বাড়তি দামের ঘোষণা প্রত্যাহার করে ১৪০ টাকা কেজি বলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন জানায়। তারপরও কমেনি দাম। টাউন হল বাজারের দিপক স্টোরের দিপক বলেন, চিনির দাম কমেনি। আগের দামেই খোলা চিনি ১৪০ ও প্যাকেট চিনি ১৪৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ডাল ১১০-১৩৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরকার খেজুরে শুল্ক কমালেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি। বস্তা ভরা খেজুরের কেজি ২৫০ টাকা, ভালো মরিয়ম ১২০০-১৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানের ফাহিম বলেন, দাম কমেনি। আগের মতোই বেশি দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশি দামেই কেনা। আড়তে বলছে কমবে না দাম।’ এ সময় সোহরাব নামে এক ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার রমজান উপলক্ষে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমালেও ভোক্তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। শবে বরাত চলে গেল। রমজান ঘনিয়ে আসছে। তারপরও বেশি দামে পেঁয়াজ, চিনি, পেঁয়াজ, খেজুর কিনতে হচ্ছে।
এদিকে বাড়তি দামেই মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। শবে বরাতকে কেন্দ্র করে গরুর সঙ্গে খাসির মাংসের দামও কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। ৭৫০ টাকার কমে গরুর মাংস, ১ হাজার ১৫০ টাকার কমে খাসির মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা মোরতেজা মন্টু বলেন, আগে কম থাকলেও শবে বরাত থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে বিক্রি করেও লোকসান হচ্ছে। কারণ মোকামে প্রতি গরুতে ১০-১৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। টাউন হল বাজারের মাংস বিক্রেতা গুড্ডুও বলেন, দাম বেড়ে গেছে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি। এত দাম কেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, বিভিন্ন উৎসব চলছে। সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি। মুরগির দামও কমেনি। আগের মতো পোলট্রি মুরগি ২০০-২২০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক ৩১০-৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি ও ডিম ১৩৫-১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
১৫ দিন বাকি থাকলেও রমজান মাসের ইফতারির উপকরণ শসার দামও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে শসার কেজি ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল হাইব্রিড শসা ৭০-৮০ ও দেশিটা ১২০-১৩০ টাকা কেজি, খিরা ৫০-৬০ টাকা বলে বিক্রেতারা জানান। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, শসার দাম অনেক বেড়ে গেছে। বেশি দামে কেনা। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।