![ফুটপাতে ঈদবাজার: ‘চাই লন ৫০০, বাছি লন ৫০০’](uploads/2024/04/02/1712034055.eid-market-photo.jpg)
‘ভালো শার্ট’, ‘৫০০’, ‘কালার আছে’, ‘৫০০’, ‘চাই লন’ (দেখে নিন), ‘৫০০’, ‘বাছি লন’ (বেছে নিন), ‘৫০০’। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে ফুটপাতে বেশ কিছু শার্টের পসরা সাজানো একটি দোকানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এভাবে হাঁকডাক দিয়ে (একজনের নেতৃত্বে তালে তালে ছন্দ মিলিয়ে) যাচ্ছিলেন দোকানকর্মীরা।
পল্টনে অবস্থিত অভিজাত বিপণিবিতান পল্টন চায়না টাউনে একটু পরপরই সাউন্ড সিস্টেমে বেজে চলছে, একটি দোকান থেকে ১ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই মিলবে একটি কুপন। এভাবে প্রতি হাজার টাকার কেনাকাটার জন্য কুপন মিলবে একটি করে। এসব কুপন থেকে লটারির মাধ্যমে ২০টি কুপনের মালিককে পুরস্কৃত করা হবে। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে ২০তম পুরস্কার নন-স্টিক ফ্রাইপ্যানের সেট পর্যন্ত।
ফুটপাত থেকে অভিজাত বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরাসহ অনেকেই মনে করছেন ক্রেতাদের হাতে গত রবিবার থেকেই ঈদকেন্দ্রিক অর্থের সর্বোচ্চ জোগান আসতে শুরু করেছে। তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে তাদের তোড়জোড়ও বেড়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত পীর ইয়ামেনী মার্কেটে এসেছেন কিছু পাঞ্জাবি কেনার জন্য। সাধারণ দামের কিছু পাঞ্জাবি কিনে ঈদের আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে চান অসচ্ছল স্বজন-প্রতিবেশীদের জন্য। গতকাল সোমবার বেলা ২টার দিকে দৈনিক খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় তার।
বললেন আজ থেকে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা আসতে শুরু করবে। সে কারণে বলা যায় ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হবে আজ থেকেই। অর্থপ্রবাহ কেন বাড়বে প্রশ্নে তিনি দেন আইনি ব্যাখ্যা। বললেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয় অনিয়মিত। কিন্তু তারা এটাও মনে রাখে, তিন মাসের বেশি বেতন বাকি পড়লে কর্মীর পক্ষে তা শক্ত আইনি অবস্থান হয়। তাই বছরের প্রথম তিন মাসের শেষ দিনে ৩১ মার্চ ওই সব প্রতিষ্ঠান এক মাসের হলেও বেতন দেবে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান আছে মাসের শেষ দিনই পরবর্তী মাসের বেতন দিয়ে দেয়। যে কারণে ভালো ও মন্দ মানের এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হাতে এখন টাকা-পয়সা আসার কথা।
তার কথার মধ্যে যুক্ত হন এই বিপণিবিতানের মৃত্তিকা পাঞ্জাবি ফ্যাশনের আবদুস ছবুর। বললেন, ‘ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো তো এপ্রিল মাসের প্রথম দিন থেকেই বেতন-বোনাস দেওয়া শুরু করবে। আবার কেউ আলাদা আলাদাভাবে বেতন ও বোনাস দেবে। এ ছাড়া বাংলা নববর্ষের ভাতাও দেবে। সব মিলে একে একে মানুষের হাতে অর্থকড়ি আসতে শুরু করবে, তাতে আমাদের বেচাকেনাও বাড়বে।’
তবে এসব হিসাব-নিকাশে কান দেন না খদ্দর মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন সরকার। পীর ইয়ামেনী মার্কেটের পূর্ব পাশে রাস্তার উল্টো দিকের এই মার্কেটের আসিক ফেব্রিকসের স্বত্বাধিকারী তিনি। তার ব্যবসা থান কাপড়ের। দৈনিক খবরের কাগজকে বললেন, হাতে টাকাকড়ি এলেও মানুষ শেষ দিকে আর থান কাপড় কিনতে চায় না। কারণ দর্জির কাছে পোশাক তৈরি করতে দিলে তারা তা ঈদের আগে বানিয়ে দিতে পারবে কি না, এই অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আবার যদি দিতে পারেও, তা তাড়াহুড়ার কারণে নিম্নমানের হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই থান কাপড়ের বেচাকেনা এখন থেকে ক্রমেই কমবে।
তবে পল্টনের গাজী ভবন, পলওয়েল মার্কেট, জোনাকী সুপার মার্কেট, সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সসহ গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার দোকানগুলোতে ভরদুপুরেই ক্রেতাসমাগম বাড়তে দেখা যায় গতকাল সোমবার। এর মধ্যে শিশুদের পোশাক, জুতা, নারী-পুরুষের পোশাকসহ সব ধরনের দোকানেই ক্রেতাদের সমাগম বাড়তে দেখা যায়।