ঢাকা ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
English

কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতার গন্তব্য কত দূর?

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতার গন্তব্য কত দূর?
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার স্নাতক নাথান বম একসময় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএসের ছাত্রসংগঠনে যুক্ত ছিলেন। তবে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে পরে স্বতন্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কুকি-চিন জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা। এরপর ২০১৭ সালে বম সম্প্রদায়ের দুই হাজার কর্মী নিয়ে গড়ে তোলেন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ। মূলত বম জনগণের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সংগঠনটি। আর রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ৯টি উপজেলা নিয়েই হবে এর ভৌগোলিক সীমানা। 

এরপর নিজেদের সামরিক শক্তি জানান দিতে একের পর এক অপরাধ তৎপরতায় নামে সংগঠনটি। তবে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি থেকে সম্প্রতি সরে এসেছে কেএনএফ। নতুন দাবি ‘কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল বা কেটিসি গঠন। এর মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার সাতটি উপজেলায় পৃথক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। অবশ্য কেএনএফের এই দাবি ও অপতৎপরতাকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জুম্মল্যান্ড’ বানানোর নীল নকশারই অংশ’ বলে মনে করছে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র তৎপরতা বিরোধী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।

থামছে না অপতৎপরতা
২০২২ সালের জুনে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে জেএসএসের একটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করে সামরিক শক্তির কথা জানান দেয় কেএনএফ। ওই বছরের নভেম্বরে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করলে ২৭০ জন কুকি ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কেএনএফের ১৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কেএনএফ ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। র‌্যাবের সঙ্গে দিনব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের পর কেএনএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার হয় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৭ জন কর্মী এবং কেএনএফের ৩ সদস্য। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। 

২০২৩ সালের মার্চে কেএনএফের হামলায় সেনাবাহিনীর একজন মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন ও দুই সেনা আহত হন। এপ্রিলে রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনী ও আরেক আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের আটজন নিহত হয়। ১৭ মে রুমার সুংসুংপাড়ায় সেনাবাহিনীর টহল টিমের ওপর গুলিবর্ষণ করে কেএনএফ। এতে সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা নিহত হন। 

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে বৈঠক
পাহাড়ে কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতায় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ও বাসিন্দাদের শান্তি বিঘ্নিত হতে থাকে। প্রশাসনের অভিযানে কিছুটা থেমে আবার শুরু হয় অপরাধ কর্মকাণ্ড। এর পরই পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত নিষ্পত্তির জন্য গঠন করা হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। উদ্যোগ নেওয়া হয় বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে কেএনএফের বৈঠকে বসার। সেই উদ্যোগের প্রাথমিক সাফল্যও আসে। ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল সংলাপ হয়। এরপর বান্দরবান জেলা পরিষদের সভাকক্ষে ৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফা ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠকে বসে কেএনএফ-শান্তি কমিটি। সমঝোতা হয় সন্ত্রাস বন্ধে। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে কেএনএফ বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, বিদেশে অবস্থানকারীদের ফিরিয়ে আনা এবং কেএনএফ সদস্যদের পুনর্বাসন করাসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে এই এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আবারও শান্তি কমিটির সঙ্গে কেএনএফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যেই রুমা ও থানছিতে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও অস্ত্র লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটল।

যে দাবিতে এগোচ্ছে কেএনএফ
সর্বশেষ বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে কেএনএফ। গত ১২ মার্চ একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেএনএফের চেয়ারম্যান নাথান বমের উপদেষ্টা লালএংলিয়ান বম বলেছেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতি আস্থা আছে বলেই পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি থেকে সরে এসেছে কেএনএফ। নতুন দাবি ‘কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল বা কেটিসি গঠন। এর মধ্যে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার সাতটি উপজেলায় পৃথক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

আর এ দাবির তিন সপ্তাহ না যেতেই বান্দরবানের রুমা রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি ও ব্যবস্থাপককে অপহরণ এবং পুলিশের অস্ত্র লুণ্ঠন করে। আবার এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল প্রকাশ্য দিবালোকে আরেক উপজেলা থানচিতেও সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির দুঃসাহস দেখাল কেএনএফ। 

যা বলছে পাহাড়ের মানুষ
তবে এ ঘটনাকে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বলে মনে করছেন পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র তৎপরতাবিরোধী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। সংগঠনটির মহাসচিব আলমগীর কবির বলেন, ‘কেএনএফের এ ধরনের দুঃসাহস রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বলে মনে করি। তারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বন্ধ রেখে শান্তি বৈঠক চলায় কেএনএফ অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। শান্তি বৈঠক চলা অবস্থায় কেএনএফের এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বলছে শান্তি বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জুম্মল্যান্ড’ বানানোর নীল নকশারই অংশ। তাই পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তামিল টাইগারদের মতোই রাষ্ট্রীয় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। আমরা ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুঠের তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজারের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাই।’

তফসিলি ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীকে ২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
তফসিলি ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীকে ২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে এর আমানতকারীর জন্য সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা প্রাথমিক পর্যায়ে ২ লাখ টাকার বেশি নির্ধারণের বিষয় পুনর্বিবেচনা করছে সরকার। 

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অবশ্য এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো খসড়া প্রস্তাবের চতুর্থ অধ্যায়ে সুরক্ষিত আমানত পরিশোধের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক আমানতকারীর জন্য সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা প্রাথমিক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া এ-সংক্রান্ত পর্ষদকে প্রতিবছর একবার সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরি আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রস্তাবিত খসড়ায় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, দেশের কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে এর আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে আমানত সুরক্ষা তহবিল (ব্যাংক কোম্পানি) ও আমানত সুরক্ষা তহবিল (ফাইন্যান্স কোম্পানি) নামে দুটি আলাদা তহবিল গঠনের জন্য প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ায় দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্ত করা সম্পর্কিত অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ব্যাংক আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এর আগে ব্যাংক ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স অর্ডিনেন্স, ১৯৮৪ জারি করে সরকার। পরে আবার এই অধ্যাদেশকে সংশোধন করে ব্যাংক আমানত বিমা আইন, ২০০০ প্রণয়ন করে। তবে ব্যাংক ব্যতীত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কোনো বিধান না থাকায় আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ ছাড়া এই আইনে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি বা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতের মতো আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা দিতে নতুন অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এই অধ্যাদেশের আওতায় তহবিল পরিচালনা, বিনিয়োগ, প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও সুরক্ষিত আমানত পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট ‘আমানত সুরক্ষা পর্ষদ’ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে খসড়া অধ্যাদেশে। 

খসড়া প্রস্তাবের দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমানত সুরক্ষা তহবিল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমানত সুরক্ষা তহবিল ‘ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি’র ক্ষেত্রে এই অধ্যাদেশ নির্ধারিত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। তহবিলগুলো আলাদা আলাদা হিসাবের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক ও স্বতন্ত্র তহবিলের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়-সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিলাম স্থগিত: ২৪ দামি গাড়ি হাতিয়ে নিতে চায় সিন্ডিকেট

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১১:৫১ এএম
আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
নিলাম স্থগিত: ২৪ দামি গাড়ি হাতিয়ে নিতে চায় সিন্ডিকেট
চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের গাড়ি। ছবি: খবরের কাগজ

সাবেক এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪টি গাড়ি হাতিয়ে নিতে কারসাজি করেছে একটি সিন্ডিকেট। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরবর্তী নিলাম স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে গাড়িগুলোর ই-নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নামমাত্র দর দেন ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কারণ পরবর্তী নিলামে প্রথম নিলাম থেকে একটু বেশি দর দিলেই গাড়িগুলোর মালিক বনে যেতেন তারা।

চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ই-নিলামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এমপিদের ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলাম দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। নিলামে ৪৪টি লটে ১৩৩টি দরপত্র পড়েছিল। এর মধ্যে ১১ লটের দরপত্র জমা পড়েনি। এর আগে ১০ কোটি টাকা মূল্যের প্রতিটি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাস করতে পারেননি দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন ও দ্রুততম সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় ‘কপাল পুড়েছে’ ওই এমপিদের। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি হলে ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব পেত সরকার।

প্রথম নিলামে কাস্টমস কর্মকর্তারা দেখেন, ১০ কোটি টাকা দামের নামিদামি ব্র্যান্ডের এসব গাড়িতে দর পড়েছে নামেমাত্র। কোনো কোনো গাড়ির দর দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অনেক গাড়ির দরই দেওয়া হয়নি। বেশ কিছু গাড়ির সর্বোচ্চ দর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে। অথচ গাড়িগুলোর প্রকৃত দাম ১০ কোটির ঘরে। 

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, প্রথম নিলামে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে যা দর পড়েছে, সেগুলো দ্বিতীয়বার নিলামে তোলা হলে বিক্রির সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর দিতে হবে এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। এ হিসাবে আগামীবার নিলামে তোলা হলেই বিক্রি হতে পারে গাড়িগুলো।

এদিকে কাস্টমসের আইনে নিলামের ক্ষেত্রে লটের বেঁধে দেওয়া মূল্যের ৬০ শতাংশ পূর্ণ হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রথম নিলামে ওই শর্ত পূর্ণ না হলে দ্বিতীয় নিলামে ওই একই লটে প্রথম নিলাম থেকে বেশি দর দিলেই পণ্য চালান খালাস দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগায় নিলামে অংশ নেওয়া সিন্ডিকেট। এবার শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এমপিদের গাড়ির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করতে চেয়েছিল সিন্ডিকেটটি। তাই প্রথম নিলামে নামেমাত্র দর দিয়ে পরবর্তী দ্বিতীয় নিলামে গাড়িগুলো হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ছিল তারা। 

নড়েচড়ে বসেছে কাস্টম হাউস

সিন্ডিকেটের কারসাজি বুঝতে পেরে এবার নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এমপিদের গাড়িগুলো হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা আঁচ করতে পেরে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মতামত চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম) মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। গত ১১ মার্চ বিষয়টির মতামত চেয়ে চিঠি দেওয়া হলে ২৪ মার্চ এনবিআর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, গাড়ি নিলামের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এর ফলে এমপিদের গাড়িসহ সব ধরনের গাড়ির নিলাম স্থগিত হয়ে যায়। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সাবেক এমপিদের গাড়ির নিলামে সিন্ডিকেটের কারসাজি বুঝতে পেরেই দ্বিতীয় নিলাম দেওয়া হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে মতামত চেয়ে এনবিআরে পত্র দেওয়া হয়েছে। এনবিআর থেকেও মতামত এসেছে। এতে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকার দামের গাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। শিগগিরই এ গাড়িগুলোর আর নিলাম হবে না। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআর থেকে পুনরায় নির্দেশনা আসতে হবে। তবে গাড়িগুলো সরকারি কোনো দপ্তরে দেওয়া যেতে পারে। তাও সরকারি সিদ্ধান্তমতে। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখা সূত্র জানায়, নিলামে টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ সাদিক, ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক এমপি এ বি এম আনিসুজ্জামান, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মজিবুর রহমান ও জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, এস এম কামাল হোসেন, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), তারানা হালিম, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, আখতারউজ্জামান, মো. আবুল কালাম আজাদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, এস এ কে একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ ও মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ।

কোন গাড়িতে কত দর

নিলামে নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল) ও খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনের গাড়িতে সবচেয়ে বেশি দর পড়েছে। দুই গাড়িতে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা করে দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এস এম আরিফ নামে একজন দরদাতা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর পড়েছে রংপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আসাদুজ্জামানের গাড়িতে। এই গাড়িতে তিন দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছে ল্যাবএইড লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. এয়াকুব চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়িতে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা বলা হলেও এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। কারণ অনলাইন নিলামে দেশের যেকোনো স্থান থেকেই অংশ নেওয়া যায়। ফলে এখানে সিন্ডিকেট কীভাবে সম্ভব? নিলামের আইন অনুসারে বেঁধে দেওয়া মূল্যের ৬০ শতাংশ পূরণ করতে গেলে একেকটি গাড়ির দাম আসবে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। কিন্তু ওই দামে গাড়িগুলো বিক্রি করা যাবে না। গাড়িগুলো এখন পুরোনো হয়ে যাচ্ছে, লাইফটাইম চলে যাচ্ছে। ফলে এসব গাড়ি বাজারে বিক্রি হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারজট

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১১:৪০ এএম
আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারজট
চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে কনটেইনারের সারি। বন্দরের ৪ নম্বর জেটি থেকে তোলা  ।খবরের কাগজ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা- এই দুই ভাগে ভাগ করে সম্প্রতি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি শুরু করেন; যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে বাড়ছে কনটেইনার জট।

মঙ্গলবার (১৩ মে) এনবিআরের আওতাধীন কর অঞ্চল, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম দিন গত ১৪ মে চট্টগ্রাম কাস্টমসে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালিত হয়।

এরপর ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে কলম বিরতি। গত ১৬ ও ১৭ মে ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর গত ১৮ ও ১৯ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কাস্টমসে কোনো কাজ হয়নি। তবে মঙ্গবার (২০ মে) এক দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও বুধবার (২১ মে )সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একই দাবিতে কলম বিরতি পালন করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে ২০ ফুট ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের মোট ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (একক) কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৩০ থেকে ৩২ হাজার টিইইউএস কনটেইনারকে স্বাভাবিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ১১ মে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৮০৯ টিইইউএস। তবে গত ১৪ মে থেকে কলম বিরতিতে যান কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর থেকে কনটেইনার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে বন্দরে কনটেইনার সংখ্যা ৪৩ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, গত ১৪ মে বন্দরে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৮৭০ টিইইউএস, ১৫ মে ৪০ হাজার ৭০৮, ১৬ মে ৪১ হাজার ৭৭৫, ১৭ মে ৪১ হাজার ৪৮২, ১৮ মে ৪১ হাজার ৬৯৫, ১৯ মে ৪৪ হাজার ২১১, ২০ মে ৪৪ হাজার ২৩১ টিইইউএস এবং সবশেষ গতকাল বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ১২ টিইইউএস। 

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে সিঅ্যান্ডএফ কর্মীরা আমদানি-রপ্তানির কাগজপত্র নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব, যথাসময়ে পণ্য জাহাজীকরণ ও পণ্য খালাস নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। 

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কলম বিরতির কারণে অবশ্যই আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে পোশাক খাত বর্তমানে শঙ্কার মধ্যে আছে। দেশে কী হতে যাচ্ছে বা কী হবে- এসব নিয়ে আমরা চিন্তিত। আবার বিদেশি বায়াররাও আস্থা রাখতে পারছেন না। অবশ্যই দাবি-দাওয়া পূরণে কথা বলা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে রাখতে হবে, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই সরকারের নীতিনির্ধারক যারা আছেন, তারা যদি এসব বিষয়ে নজর দেন, তাহলে সবার উপকার হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই শঙ্কিত। একদিকে বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে না দিতে নানা কর্মসূচি চলছে, অন্যদিকে কাস্টমসে কলম বিরতি। এটা অবশ্যই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় বাধা। কলম বিরতির কারণে সিঅ্যান্ডএফ কর্মীরা নথি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানিকারককে যথাযথভাবে আমরা সেবা দিতে পারছি না। এ কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সরকারকে বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানাই। যেন সবাই বন্দরকে যথাযথ ব্যবহার করার পরিবেশ তৈরি করতে পারি।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব মো. ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাস্টমসে কলম বিরতির কিছুটা প্রভাব বন্দরে পড়েছে। তবে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক আছে। প্রতিদিন গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। সামনে আরও বাড়বে। আমরা আশা করছি, আমাদের আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে, সবার সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কনটেইনার জট কমে আসবে।’

বিএনপি-এনসিপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ১১:০৮ এএম
বিএনপি-এনসিপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

বেশ কয়েক মাস পরস্পরকে চাপে রাখার কৌশল অবলম্বন করা হলেও অবশেষে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে। বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব এখন জনমনে স্পষ্ট হয়েছে। কারণ ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার পক্ষে কৌশলগতভাবে সমর্থন দিচ্ছে বিএনপি। আর সরকারের একটি অংশের পাশাপাশি এনসিপি মনে করছে, এটি তাদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। এই কারণে এনসিপিও সরাসরি বিএনপির বিরুদ্ধে মাঠে নামতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের দাবি করছে।

এদিকে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইশরাকের মেয়র পদে শপথের দাবি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ছাত্রদলের আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজধানী ঢাকার একাধিক স্থানে কর্মসূচি পালিত হওয়ায় নগরীর যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তিন বাহিনীর প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠককে কেন্দ্র করে আবার নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার ইসির পদত্যাগ দাবিতে এনসিপির ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অস্থিরতা যোগ হয়। কারণ এতদিন বিএনপি, এনসিপিসহ যেসব দল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে একসঙ্গে কাজ করেছে, নির্বাচন প্রশ্নে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। ফলে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, এ নিয়ে নতুন করে আবারও নানা আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা এতদিন বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে।

এনসিপি গতকাল প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে, বর্তমান ইসি ও প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান জোরালো করতে ইসি ভবনের সামনের সমাবেশ থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল- এই তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপিপন্থি’ হিসেবে অ্যাখায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে এনসিপি।

অন্যদিকে ইশরাকের কর্মসূচিতে সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই দলের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থান ও পদত্যাগের দাবিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়ে উঠছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্ররা নতুন বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব হবে কেন? তাদের শত্রু ভাবব কেন? বিএনপির বয়স ৪৭ বছর, কিন্তু ওদের (ছাত্র) দল এনসিপির বয়স ৪৭ দিনও হয়নি। আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারেও বিএনপি একমত। তবে সব বিষয়ে কেউই একমত হতে পারে না। কখনো কখনো একমত হবে, আবার কখনো হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে ছাত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। তাহলে দ্বন্দের প্রশ্ন আসবে কেন? সরকারের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব হতে পারে। কারণ সরকারই সব চাওয়া পূরণ করবে। ছাত্ররা নির্বাচন কমিশনের ঘেরাও করে ইসি পুনর্গঠনসহ তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো এই সরকারের আমলেই গঠন হয়েছে। কার ইশারায় এসব হচ্ছে, এটা কিন্তু বিএনপি জানে।’ 

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন খবরের কাগজকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপি অভ্যুত্থানবিরোধী ও জনগণের বিরুদ্ধে একটা জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সংস্কারবিরোধী দল হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যার প্রমাণ সম্প্রতি ইশরাক ইস্যুতে একটা অযৌক্তিক দাবি তুলে কয়েক দিন ধরে টালবাহানা করছে। বিএনপিদলীয় লোকজনদের বড় পদে বসানো ছাড়া তাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি তাদের লোকজন বসিয়েছে। কিন্তু কৌশলে দায় চাপাচ্ছে ছাত্র উপদেষ্টাদের ওপর।’

সামান্তা শারমিন বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরে বিএনপি ঢাকা শহরে অচলাবস্থা তৈরি করেছে, কিন্তু জনগণ তাদের আর সহ্য করতে চাচ্ছে না। ঢাকা কবজায় নেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে তারা একটা নির্বাচনি শোডাউনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু দেশের জনগণের জন্য কতগুলো সংস্কার জরুরি। বিএনপি যদি কম্প্রোমাইজ না করে, তাহলে খুব বেশি আলোচনার সুযোগ থাকবে না। বিএনপি তাদের ৩১ দফা অনুযায়ী কাজ করছে না। মোটাদাগে, বিএনপি ৩১ দফার বিরোধী, তারা নিজেরাই একটা কনফিউশন তৈরি করেছে এবং সংস্কার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএনপি। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যু নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির বৈরিতা স্পষ্ট হয়। কিন্তু বিএনপি এ বিষয়ে সমর্থন না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি তার পদে টিকে যান। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন- কোনটি আগে এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়। 

এরপর সংবিধান বাতিল, জুলাই সনদ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান, সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণভোট; মোটাদাগে এসব বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির মতপার্থক্য দেখা দেয়। কিন্তু ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু এবং ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর কয়েকটি সড়ক স্থবির হয়ে পড়লে এনসিপির পাশাপাশি সরকারের একটি অংশও বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিবেচনা করে। বিশেষ করে ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়। ইশরাক হোসেনকে দলগতভাবে বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি দুই পক্ষের জন্যই মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখা দিয়েছে। আট দিন ধরে ইশরাকের ঘটনায় নগর ভবন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও এর আশপাশের এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে ও ইসি পুনর্গঠনের দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয় এনসিপি। এতে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির মতবিরোধ জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়ে। 

গতকাল ইসি ভবনের সামনে তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘আমরা যতদিন বেঁচে আছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। এই দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে এই ইসিকে পুনর্গঠন করেই ছাড়ব।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন, তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। আসিফ নজরুল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও টালবাহানা করছেন। জুলাই ঘোষণাপত্র না দিলে আপনি দেশে থাকতে পারবেন না।’

যা বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা

জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী এই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়ায় রাজনীতিতে একধরনের অশনিসংকেত তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ খবরের কাগজকে বলেন, সামনে ক্ষমতা, এখন ক্ষমতার লোভে এই দ্বন্দ্ব। আগামী দিনে ক্ষমতায় কে যাবে, অংশীদার কে হবে- সেটাও একটা প্রশ্ন। বিএনপি একটা বড় দল, আর এনসিপি ঘিরেও আগ্রহ, আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে। যদিও তারা সরকার থেকেও সমর্থন পাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্পষ্ট, এ কারণেই তাদের মধ্যেও আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতার আগ্রহ আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের জন্য ভালো হবে না, সংঘাত-সহিংসতা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে, সে বিষয়েই সব পক্ষেরই ভাবা উচিত।

তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চান তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। জনগণ যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন, তারাই ক্ষমতায় যাবেন। নির্বাচনটা যেন ঠিকঠাক মতো হয়, সে জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিএনপি ও এনসিপির দ্বন্দ্ব খুবই দুঃখজনক ও হতাশাজনক। যেখানে ঐকমত্য দরকার ছিল সেখানে আজকে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও এনসিপির নিজেদের মধ্যেও কোনো ঐক্য নেই। রাজনৈতিক দর্শন ও কৌশল নিয়েও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আবার অনেকে বলে এনসিপি ‘কিংস পার্টি’।’

তিনি বলেন, ‘আগে দেখা গেছে, এনসিপি যা চেয়েছে সরকারও তাই করেছে। এখন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ইসি পুনর্গঠন চাইছে। মূলত, দলটি নানা ইস্যু সামনে এনে জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে। আর বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চাইছে। ১০ মাস পর কেন জুলাই ঘোষণাপত্র আসবে? দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।’  

কী বলছে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো

বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম খবরের কাগজকে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলই ঐকবদ্ধ থাকুক। দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে ফ্যাসিবাদী-বিরোধী শক্তির মধ্যে ফাটল ধরলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ফ্যাসিবাদ যেন পুনরায় প্রশ্রয় না পায়, সেই বিষয়ে সবার একযোগে কাজ করা উচিত হবে। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স খবরের কাগজকে বলেন, দেশের চলমান এই সংকট তৈরির জন্য দায়ী অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই ক্রমেই দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। অহেতুক কিছু ইস্যু সামনে এনে এই সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত হবে দ্রুতই জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা, না হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদের দ্বন্দ্ব যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে পুরো দেশকেই মাশুল দিতে হতে পারে।’

পশুর হাট চালুর আগেই তৎপর অজ্ঞান পার্টি

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ০৪:০৫ এএম
পশুর হাট চালুর আগেই তৎপর অজ্ঞান পার্টি
ছবি: সংগৃহীত

মিজানুর রহমান মাতবর (৫৬) পটুয়াখালীর একজন ঠিকাদার। অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে ঢাকা আসেন। গত শনিবার মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশে ফার্মগেট থেকে বাসে ওঠেন। এরপর বাসের ভেতরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। তারা তাকে অজ্ঞান করে সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল নিয়ে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় বাসে পড়ে থাকতে দেখে অন্য যাত্রীরা তাকে মতিঝিলে নামিয়ে রাখেন। পরে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে। গত কয়েকদিন তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। তবে গতকাল অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বাসে হকারদের কাছ থেকে তিনি একটু আচার খেয়েছেন। এরপরই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

শুধু মিজানুর রহমান নন, সম্প্রতি আরও অনেকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন। গত মঙ্গলবার পল্টনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ২ লাখ টাকা খুইয়েছেন কসমেটিকস ব্যবসায়ী মো. ফাহাদ আহমেদ (২৮)। তার আগে ১০ এপ্রিল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সামনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন ফ্লেক্সিলোড দোকানের কর্মচারী হোসাইন ইসলাম লিমন (২৩)। তাকে অচেতন করে কাছে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর বাইরেও গত সপ্তাহে এমন আরও একাধিক ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা খবরের কাগজকে বলেছেন, বছরজুড়েই অজ্ঞান পার্টির তৎপরতার কথা শোনা গেলেও ঈদুল আজহার সময় বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাট শুরু হলেই তাদের ব্যাপক তৎপরতা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার যেন কোরবানির পশুর হাট চালু হওয়ার আগেই রাজধানীতে তৎপরতা বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির। বাস, লঞ্চ, ট্রেন স্টেশনসহ মানুষের ভিড় থাকে- এমন জায়গায় তাদের নানা বেশে উপস্থিতি বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাইকারী, জালনোট চক্রের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও হাসিলের টাকা নিয়ে যেন গ্রুপিং বা চাঁদাবাজি কেউ করতে না পারে সে বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সংশ্লিষ্ট থানাগুলো কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে এসব অপরাধের কারণে যাদের নামে মামলা রয়েছে বা যারা চিহ্নিত তাদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এসব কাজে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া পশুর হাটে যেন জাল টাকা ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা প্রথমে কোনো ব্যক্তিতে টার্গেট করে। পরে চা, ডাব, পানীয় বা অন্যকোনো খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। এ ছাড়াও তারা গুল, মরিচের গুঁড়া বা মলম চোখে মাখিয়ে, স্প্রে করে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর থেকে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে আসেন সোলাইমান ব্যাপারী। গত বছর ১০টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছরও ১৫টি গরু তিনি দিন-রাত খেটে যত্ন করছেন হাটে তোলার জন্য। গত বছর হাটের শেষ দিনের কেনাবেচার সময় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে লাখ টাকা খোয়ান তিনি।

পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে গতকাল মুঠোফোনে সোলাইমান ব্যাপারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিবছরই পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপর থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে তারা তাদের কাজটি করে চলে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হন।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরের ওই দিন ছিল প্রচণ্ড গরম। হাটের পাশেই ডাব খেতে যাই। ডাব খেয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি পকেটে থাকা ১ লাখ টাকা নেই। লাভ হারিয়ে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে আর ঈদ করাও হয়নি। তাই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

গাবতলীর হাট থেকে নিয়মিত কোরবানির পশু কেনা সোহরোয়ার্দী হোসেন রাজিবের সঙ্গেও গতকাল মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের ঈদের আনন্দও মাটি হয়ে যায়। অনেক সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তাই হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। পশু কেনার পর ক্রেতা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীসহ পেশাদার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো তৎপরতা থাকতে হবে।’