![রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির হারিয়ে যাওয়া জিনিস উদ্ধারের দাবি](uploads/2024/04/17/1713329476.rabindra.jpg)
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ইন্দো-ইউরোপীয় নির্মাণশৈলীর রবীন্দ্র কাচারি বাড়ি বাংলা সাহিত্য ও রবিঠাকুরকে নিয়ে গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও গবেষণার প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়নি এখনো। কিন্তু তারপরেও রবিঠাকুরের স্মৃতিসংবলিত হাজারও উপকরণ স্বচক্ষে দেখতে প্রতিদিনই আসছেন রবীন্দ্র গবেষকদের পাশাপাশি তার ভক্ত, প্রেমী আর দর্শক-পর্যটক।
দর্শনার্থী ও গবেষকরা মনে করেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা গবেষক আর দর্শক-পর্যটকদের জন্য প্রয়োজন গেস্ট হাউস, খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা, লাইব্রেরি আর আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়। কিন্তু রবীন্দ্র কাচারি বাড়িতে এসবের কোনো কিছুই বিদ্যমান নেই।
রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির কাস্টোডিয়ান মো. আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল জানান, প্রতিদিন এ কাচারি বাড়িতে আসেন গড়ে ৭০০ দর্শক-পর্যটক। এর মধ্যে রবীন্দ্র গবেষক আসেন দিনে গড়ে ৩০ জন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘জাদুঘরে রূপান্তর করা কাচারি বাড়ির দোতলায় রয়েছে কবির ব্যবহার করা ১৪৮টি তৈজসপত্র ও আসবাব। এসবের বয়স ১৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। নিচতলায় আছে মহাত্মা গান্ধীর মতো বিশ্ববরেণ্য নেতাদের পাশাপাশি আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীর সঙ্গে তোলা কবির ৬০টি আলোকচিত্র। এসব আলোকচিত্রের মধ্যে রয়েছে কবির বাল্যকাল থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সেরও অনেক ছবি।’
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ জানান, সরকার গুরুত্বপূর্ণ এ প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটটির সমস্যা চিহ্নিত করেছে, সমাধানের কাজও চলছে। খলিল আহমদ বলেন, ‘রবীন্দ্রপ্রেমী, ভক্ত, গবেষক এবং দর্শক-পর্যটকদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব কাজও শুরু করা হবে।’
সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জরাজীর্ণ অবস্থায় পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা করে ১৯৬৯ সালে। কাচারি বাড়িতে আধুনিক ভবনের পাশে কবির স্মৃতিবিজড়িত একটি জরাজীর্ণ ভবন এখনো টিকে থাকলেও তার সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ এ ভবনটিও হতে পারে গবেষণার বিষয়। এমনটা মনে করেন রবীন্দ্রপ্রেমী ও ভক্তরা।
নাটোরের রানী ভবানীর তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহজাদপুরের জমিদারির অংশ রবিঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালে নিলামে ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনে নিলে এই জমিদারি ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী এ বাড়িতে একসময় নীলকর সাহেবরাও বাস করতেন। জমিদারির প্রয়োজনে নোবেলবিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাচারি বাড়িতে যাওয়া-আসা করেছেন ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত। তিনি এ কাচারি বাড়িতে বসেই রচনা করেন সোনার তরী, পোস্টমাস্টার, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি, ছিন্ন পত্রাবলীসহ আরও অনেক বিখ্যাত সব ছোটগল্প, চিঠিপত্র ও কবিতা।
বগুড়া মজিবর রহমান মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ড. মোস্তাফা আহাদ তালুকদার বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরে প্রথম সমবায়ভিত্তিক খামার গড়ে তুলেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা দেখতে পাই ‘মিল্কভিটা’কে। সমবায়ভিত্তিক গবাদিপশুর খামার এখন আর্থিক সচ্ছলতা দিয়ে চলেছে লাখো মানুষকে।’ ড. মোস্তাফা আহাদ তালুকদার বলেন, “১৯১৩ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। এই প্রাপ্তির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মজিবর রহমান মহিলা কলেজ থেকে ‘অর্হণ’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করতে গিয়ে জানা গেছে শাহজাদপুর কাচারি বাড়ি ও রবীন্দ্র স্মৃতিকে কেন্দ্র করে গবেষণা করা যেতে পারে। তার সাহিত্যচর্চা, সমাজ দর্শন, অর্থনীতি ও সমবায় চিন্তাসহ অনেক কিছু নিয়েই।” তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকজন রবীন্দ্র গবেষক তাকে নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণাদিও হয়ে উঠতে পারে রবীন্দ্র গবেষণার মূল্যবান অনুষঙ্গ।
শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু মনে করেন, এ জাদুঘর আরও সমৃদ্ধ হবে যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করা যায়। শাহজাদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা প্রবীণ এ সাংবাদিক জানান, ছোটবেলায় তিনি এ কাচারি বাড়িতে যেসব জিনিস দেখেছেন, তার অনেকটিই এখন আর নেই। জরাজীর্ণ ভবনটি সংস্কারের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিসংবলিত হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া গেলে সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় হতে পারত এ জাদুঘর। হারানো জিনিসপত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিমল কুণ্ডু বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগ সঠিক থাকলে এখনো পাওয়া যেতে পারে কাচারি বাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া অমূল্য সব সম্পদ।’ এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কাঁসাসহ অন্যান্য ধাতব পদার্থের বেশ কিছু তৈজসপত্র তিনি ছোটবেলায় দেখেছেন কাচারি বাড়িতে। এখন আর সেসব এই জায়গায় নেই। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে জরাজীর্ণ ভবনটিতে পাওয়া যায় জমি মাপার চেইন ও পানির পাত্র।