![টানা তাপপ্রবাহের রেকর্ডের পথে বাংলাদেশ](uploads/2024/04/19/1713507907.Temparature.jpg)
স্বাভাবিকভাবেই অন্য মাসের চেয়ে আবহাওয়া উষ্ণ থাকে এপ্রিল মাসে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বয়ে যায় তাপপ্রবাহ। কখনো কখনো সেটি থাকে একটানা। দেশে ১৫ থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত লাগাতার তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য রয়েছে। অপরদিকে চলতি এপ্রিল মাসের ১৮ দিনই টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাই চলমান তাপপ্রবাহকে টানা তাপপ্রবাহের রেকর্ড হিসেবে দেখছেন আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ২০২০ সালের শেষের দিকে টানা ১৩ দিন তাপপ্রবাহের রেকর্ড ছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই চলছে তাপপ্রবাহ। বৃহস্পতিবারও (১৮ এপ্রিল) ২১ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ ছিল। চার জেলায় ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। সে হিসাবে গত কয়েক বছরের মধ্যে এটা বেশি দিন টানা হিট ওয়েভের রেকর্ড হতে যাচ্ছে।
আবহাওয়া-সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর বাংলাদেশের আবহাওয়া ছিল অস্বাভাবিক। ২০২৩ সালে জুন মাসেও টানা ১৫ দিন হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহের তথ্য রয়েছে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হলো ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু চলতি মাসের ১৭ দিনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোনো দিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল না। টানা রেকর্ড হচ্ছে ৩৬ ডিগ্রি সে. এর বেশি। গত ১৩ এপ্রিল থেকে টানা ৪০ ডিগ্রির ওপর থাকছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। যার কারণে প্রতিদিনই দেশে বিক্ষিপ্তভাবে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। গত বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, যা মৌসুমের সর্বোচ্চ। যা তাপপ্রবাহের ধরনে তীব্র। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহের বিস্তৃতি হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই দুই দফা সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তাপমাত্রা রেকর্ডের স্থান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাঙামাটিতে ৫ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৪ দিন, রাজশাহীতে ৩ দিন, ঈশ্বর্দীতে ২ দিন, খেপুপাড়ায় ২ দিন ও কক্সবাজারে ১ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ১৭ দিনের মধ্যে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ১৬ এপ্রিল। এদিন স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল তাপমাত্রা। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ৮ এপ্রিল। ১১ দিন ৩৬ ডিগ্রির ওপরে ছিল তাপমাত্রা। যেখানে ঢাকার এপ্রিল মাসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অধিকাংশ দিনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির সম্ভাবনার মধ্যেও অস্বস্তি বাড়ার পূর্বাভাস
দেশের পাঁচ বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনার মধ্যেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়ার কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে নিয়মিত পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।