টাঙ্গাইলের সখিপুরের কালিয়া বাজার থেকে নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে শুরু হওয়া এই কাজের সুবিধার জন্য সড়কের পাশের কালিয়াপাড়া মাজেদা মজিদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইটের স্তূপ রাখা হয়। তখন বলা হয় অল্প কয়েকদিন পরই এই ইট সরিয়ে নেওয়া হবে।
কিন্তু প্রায় এক বছর হতে চললেও ইটের ওই স্তূপ এখনো সরানো হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুল মাঠে নির্বিঘ্নে খেলাধুলা করতে পারছে না। এ ছাড়া ইটের স্তূপের ধুলোবালিতে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, ইটের স্তূপ সরাতে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কালক্ষেপণ করছেন। যদিও অভিযোগ স্বীকার করে ঠিকাদারের দাবি, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ইটগুলো সরানো যায়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে বিষয়টি আনা হলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাময়িক সময়ের জন্য মাঠ ব্যবহারের কথা বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঠের বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছে। এ ছাড়া ইট আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন একাধিকবার ভারী যানবাহন এখানে যাতায়াত করে। এতে এই স্কুলসহ পার্শ্ববর্তী আরও তিন স্কুলের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কালিয়াপাড়া মাজেদা মজিদ উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় গোপন রেখে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ইটের স্তূপ থাকায় তাদের মাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা নির্বিঘ্নে খেলাধুলা করতে পারছে না। ইটের সঙ্গে পা লেগে ছিটকে পড়ে একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
মাঠ দখল করে ইট রাখায় অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, আমরা বাচ্চাদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। খেলাধুলা করতে গিয়ে তারা যেকোনো সময় মারাত্মক জখম হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী ইটের স্তূপের ওপর উঠে পড়ে। ইটবাহী ভারী ট্রাকও স্কুলের মাঠ দিয়ে চলাচল করে। ফলে মাঠের একটি অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা এলে মাঠের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। সড়ক নির্মাণের এসব খোয়া দ্রুত সরিয়ে মাঠটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
সদ্য অবসরে যাওয়া স্কুলটির সাবেক প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অল্প কয়েক দিনের জন্য আমাদের এখানে ইটের খোয়া রাখতে চেয়েছিল। উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আমরা রাখতে দিয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের সরে যেতে বলা হলেও তারা কথা শুনছেন না। ইটের খোয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে খেলাধুলা করতে পারছে না।’
ওই স্কুলের শিক্ষক কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঠিকাদারকে বারবার ইটের স্তূপ সরিয়ে নিতে বলা হলেও তিনি কালক্ষেপণ করছেন। দিনের বেলায় অল্পকিছু সরিয়ে নিলেও রাতে যখন কেউ থাকেন না তখন আবারও ইট রেখে যান।’
অভিযোগ স্বীকার করে ঠিকাদার সজিব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আশপাশে তেমন জায়গা না পাওয়ায় আমরা ১৫ দিনের জন্য স্কুলমাঠের একটি অংশ ব্যবহার করার অনুমতি নিয়েছিলাম। পরে আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর সরাতে পারিনি। দুয়েক দিনের মধ্যেই আমরা ইটের খোয়াগুলো সরিয়ে নেব।’
এদিকে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে ইটের খোয়ার স্তূপ বানানোকে বেআইনি উল্লেখ করে সখিপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব। সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘বিষয়টি শুনলাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইটের স্তূপ অপসারণ করতে বলে দিচ্ছি।’
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের নজরে বিষয়টি আনা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো অপসারণে ব্যবস্থা করছি।’