ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

রংচটা বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে মালিকদের গড়িমসি

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৪, ০২:২০ পিএম
রংচটা বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে মালিকদের গড়িমসি
রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ছবি: খবরের কাগজ

ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়কে রংচটা বাস চলাচল করতে পারবে না বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির গড়িমসিতে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। এদিকে যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সড়কে পরিবহনব্যবস্থা সমন্বয় না করে বিদ্যমান গণপরিবহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে নগরে পরিবহনসংকট আরও তীব্রতর হবে।

গত মার্চ মাসে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা শহরে চলাচলকারী ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত ২০ বছরের বেশি বয়সী বাস প্রত্যাহার করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে এপ্রিলের মধ্যে ঢাকা শহরে চলাচলকারী ওই বয়সী বাসের তালিকা পাঠাবে। পরিবহন মালিক সমিতিকে এপ্রিলের মধ্যে ২০ বছরের বেশি বয়সী বাস প্রত্যাহারের পরিকল্পনা দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এসব নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল বিআরটিএ ভবনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। ওই সভায় মালিক সমিতির নেতারা মে মাস পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। সভায় বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার তাদের সেই দাবি মেনে নেন। সড়কে রংচটা বাসগুলো তুলে নিতে তিনি ৩০ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সেই সঙ্গে রংচটা বাসগুলোর কতটা নতুন করে রং করা হলো, আনফিট গাড়িগুলো ফিটকরণ প্রক্রিয়ায় কতটা এগিয়ে এসেছে, মালিক সমিতিকে তার তথ্য দেওয়ার তাগাদা দেন।

কিন্তু ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক থেকে রংচটা বাস উঠিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াতে খুব বেশি সাড়া নেই পরিবহন মালিকদের। বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকদের অনেকের বাসে টেকসই রং করার মতো সামর্থ্য নেই বলে পরিবহন সমিতি দাবি করলেও জানা যায়, আসলে এতে আগ্রহই নেই বাস মালিকদের। কেননা সড়কে রেষারেষি করতে গিয়ে রংচটা হয়ে পড়া বেশ কয়েকটি বাস নতুন করে রং করা হলেও তার স্থায়িত্ব বড়জোর ২ মাস।

যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলাচল করা তুরাগ পরিবহনের একজন বাসচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংচটা বাসগুলোতে হালকা রং করতেও খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা, যার স্থায়িত্ব বড়জোর ১ মাস। ২-৩ মাস স্থায়ী হবে এমন রং করতে গেলে খরচ পড়ে ২০-৩০ হাজার টাকা। মালিকরা সেই টাকা ব্যয় করতে রাজি নন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গাড়ির যন্ত্রাংশ, জ্বালানির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমাদের পরিবহন খাতের খরচ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক বাস মালিকের বাসে দীর্ঘস্থায়ী রং করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তা ছাড়া মেট্রোরেল চালু হওয়ার পরে বাসে যাত্রীসংকট তো আছেই। আমার বিকল্প অটো সার্ভিসে (যাত্রাবাড়ী-মিরপুর ১২ রুটে) গত ঈদে ৫৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’

সড়ক থেকে আনফিট বাস তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াতেও বাস মালিকরা নানা অনিয়ম করতে চান বলে জানা গেছে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীবাহী বাসগুলোর গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ যেমন ব্রেক, হেডলাইট ইত্যাদি বিকল থাকে। সেসব বিকল যন্ত্রাংশ মেরামত বা প্রতিস্থাপন না করেই দ্রুততম সময়ে গাড়ি ফিট করিয়ে নিতে চান। এ নিয়ে বিআরটিএর কর্মকর্তাদেরও চাপ দেওয়া হয় মালিক সমিতির পক্ষ থেকে- এমন অভিযোগও মিলেছে।

অভিযোগ আছে বিআরটিএর বিরুদ্ধেও। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা অভিযোগ করেন, ঢাকায় ৪২৮টি নতুন গাড়ি নামানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করলেও এখনো বিআরটিএর রুট পারমিট বিভাগের অনুমোদন মিলছে না। তবে বিআরটিএর রুট পারমিট ও রোড সেফটি বিভাগের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মালিক সমিতি যেসব গাড়ি নতুন বলে দাবি করছে তার অধিকাংশ পুরোনো বাস। তারা এগুলোকে নতুন করে রং করে, কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে সড়কে নামাতে চায়।

গত রবিবার বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিআরটিএ কিন্তু নিজেরা কোনো সময় বেঁধে দেয়নি বাস মালিকদের। তারাই সময় নিয়েছে। এখন তারা যদি গড়িমসি করে আমরা আর সময় বাড়াব না। আমরা ১ জুন থেকেই সড়কে নামব। ঢাকার সড়কে রংচটা বাস চলতে দেওয়া হবে না। সিটি করপোরেশন, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সহযোগিতায় আমরা জোরদার অভিযানে যাব।’

তবে ঢাকা নগর পরিবহনকে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রেখে এমন উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে এক করিডরে একাধিক বাস অপারেটরদের রেখে দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর যে উদ্যোগ নিচ্ছে বিআরটিএ, তাতে জনদুর্ভোগ বাড়বে। বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিকে যদি কার্যকর করা না হয়, তবে সড়ক থেকে রংচটা বাস বা ফিটনেসবিহীন বাস উঠিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। আমাদের সামনে হাতিরঝিল আর গুলশানের বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির উদাহরণ রয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা ঢেলে সাজাতে পারি ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা।’

এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাজিব সিদ্দিক জানান, মার্চ মাসের সিদ্ধান্ত কতদূর বাস্তবায়ন করেছে বিআরটিএ, তা নিয়ে শিগগিরই আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করবে মন্ত্রণালয়। এই সভায় বাস মালিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

দুদকের গণশুনানি: পরিকল্পনা গত বছরের, বাস্তবায়ন এ মাসেই

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
দুদকের গণশুনানি: পরিকল্পনা গত বছরের, বাস্তবায়ন এ মাসেই

সরকারি সেবা পেতে হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার ব্যক্তি এবং অভিযোগসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দায়িত্বশীলের বক্তব্য শুনে আইনের আলোকে তাৎক্ষণিক ও দ্রুততম সময়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে সময়ে সময়ে গণশুনানির ব্যবস্থা করে আসছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এ কার্যক্রমে কখনো ভাটা পড়েছে, আবার কখনো জোরদার করতে দেখা গেছে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের চারটি জেলায় দুদকের গণশুনানি। 

এই শুনানির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল গত বছর। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে এই কর্মসূচি একাধিকবার স্থগিত করা হয়। সেই স্থগিত গণশুনানিগুলো চলতি মাসে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে আজ রবিবার কুড়িগ্রাম সদর পৌরসভার শেখ রাসেল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে গণশুনানি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা এতে অংশ নেবেন।  

এ ব্যাপারে শনিবার (১ জুন) দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুদকের ব্যাপক জনপ্রিয় কার্যক্রমের অন্যতম হলো গণশুনানি। এ কার্যক্রম গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। স্থগিত করা সেই গণশুনানি এ মাসেই কুড়িগ্রাম জেলাসহ চারটি জেলায় অনুষ্ঠিত হবে।’

রবিবার কুড়িগ্রামে, সোমবার ঠাকুরগাঁও, ৬ জুন নারায়ণগঞ্জ এবং ১২ জুন চাঁদপুরে গণশুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১টি গণশুনানির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫টি গণশুনানি ওই বছর সম্পন্ন হয়। স্থগিত করা হয়েছিল ৬টি শুনানি। স্থগিত করা শুনানির মধ্যে গোপালগঞ্জ ও নওগাঁয় ইতোমধ্যে গণশুনানি সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রামে গত বছর ১৬ নভেম্বর এবং ২১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে শুনানি ধার্য ছিল। সবশেষ গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে গণশুনানি হওয়ার কথা ছিল। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর গণশুনানির জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী মাসে (জুলাই) এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

৪ মে দেশ ছাড়েন বেনজীর, এখন দুবাইয়ে

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
৪ মে দেশ ছাড়েন বেনজীর, এখন দুবাইয়ে
বেনজীর আহমেদ

এক সময়ের প্রতাপশালী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর নানামুখী চাপে রয়েছেন তিনি। দেশের গণমাধ্যমগুলোতে তার নামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এর মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বেনজীর আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। গত ৪ মে রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে তিনি সিঙ্গাপুরে গেছেন। ফ্লাইটে ওঠার আগে তিনি বিমাবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ চামিলি লাউঞ্জে কিছুক্ষণ ছিলেন। তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে গেছেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নয়, ব্যক্তিগত ভ্রমণে তিনি সেখানে গেছেন। 

শনিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় বেনজীর আহমেদের সাবেক এক ব্যক্তিগত পিএস জানান, সিঙ্গাপুরে কিছুদিন থাকার পর তিনি এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে তার এক বন্ধুর বাসায় তিনি রয়েছেন বলে জানা গেছে। দুবাইয়ে তার একাধিক ব্যবসা রয়েছে। সপরিবারে গেছেন তিনি। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ঢাকার বোটক্লাবসহ একাধিক ক্লাবে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তবে জানা গেছে, দুদক ও আদালতে তিনি আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনটেন্ট আকারে দেওয়ার জন্য তার একদল যুবক কাজ করছেন বলে জানা গেছে। শিগগিরই সেগুলো তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়াসহ বিভিন্ন গ্রুপভিত্তিক ফেসবুক পেজে দেওয়া হবে। সেগুলোতে তার আগের মতো বক্তব্য থাকবে। 

গত ৩১ মার্চ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তার বক্তব্য জানার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যম যোগাযোগ করলে তিনি কোনো তথ্য দেননি। গত ২০ এপ্রিল তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই মিথ্যা বলে দাবি করেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২৫ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় এ দাবি করেন বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেবেন।

বিমানবন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা শনিবার জানান, একটি কালো কাচের গাড়িতে তিনি গত ৪ মে আসেন। তার সঙ্গে তার পরিবার ছিল। তবে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ চামেলিতে বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে বিমানবন্দর এসেছিলেন। তার সঙ্গে যাতে কেউ কথা বলতে না পারেন এ জন্য তার দেহরক্ষীরা তৎপর ছিলেন। 

তার সাবেক পিএস জানান, তিনি দু-একদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করেছেন। আইনজীবীরা তার জন্য কাজ করছেন। আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছে। আর ৯ জুন তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ডেকেছে দুদক। 

হজযাত্রার শুরু ভালো হলেও নির্বিঘ্ন হলো না শেষটা

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১০:৩২ এএম
হজযাত্রার শুরু ভালো হলেও নির্বিঘ্ন হলো না শেষটা
হজ এজেন্সিগুলোর কঠোর অবস্থানের পরও শেষ সময়ে দেখা দিচ্ছে নানান জটিলতা ও অনিশ্চয়তা। ছবি: খবরের কাগজ

শুরু থেকেই হজ এজেন্সিগুলোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থেকে এবার অনেকটাই লাগাম টানা গেছে হজযাত্রীদের হয়রানি, ভোগান্তি আর প্রতারণার। কিন্তু শেষ সময়ে এসে এখনো কিছু হজযাত্রীর ভিসা না হওয়ায় তাদের সৌদি যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, শেষ সময়ে ভিসা পাওয়া হজযাত্রীদের টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম শনিবার (১ জুন) বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা গত বৃহস্পতিবার যে ৯ এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং চাপ দিচ্ছি, যেন তারা দ্রুতই নিবন্ধিত বাকি হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের কাজ শেষ করেন। তারা আমাদের জানিয়েছে, ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত, তা হলো শেষ সময়ে ভিসা পেলেও তখন তাদের টিকিট পাওয়াটা অনিশ্চিত হবে।’

এ অবস্থায় আগামী ১২ জুন শেষ হচ্ছে হজ ফ্লাইট। কিন্তু এখনো নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে ২১০ জনের ভিসা হয়নি। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিমানবন্দরস্থ আশকোনা হজ অফিস থেকে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, এ বছর গাইডসহ ৮৫ হাজার ১৮৫ জন নিবন্ধিত হজযাত্রীর মধ্যে ৮৪ হাজার ৯৭৫ জনের ভিসা হয়েছে। অর্থাৎ এখনো ভিসা হয়নি ২১০ জনের।

হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভিসা হয়নি এমন কেউ আমাদের এখানে এখনো অভিযোগ করেননি। তবে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন এবং মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ 

তবে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম খবরের কাগজকে বলেন, কিছু হজযাত্রী অসুস্থতা, মৃত্যু এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যার কারণে যাত্রা করবেন না। তাদের সংখ্যা কত, তা এখন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা এই ২১০ জনের মধ্যে পড়বেন। 

এ বছরের নিবন্ধিতরা ছাড়াও হজে পাঠানোর নামে ২০২৩ সালে ৪৪ জন হজযাত্রীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল ‘সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টাকা নিয়ে ওই বছর প্রাক-নিবন্ধন করলেও চূড়ান্ত নিবন্ধন না করেই তারা আত্মগোপনে চলে যায়। যার কারণে হজযাত্রীরা আর হজে যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগীদের মামলায় গ্রেপ্তার হন এজেন্সি মালিক। পরে সেসব হজযাত্রীকে চলতি বছর (২০২৪) হজে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিনে তিনি বের হন। কিন্তু বের হয়ে ফের পলাতক রয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় এজেন্সি মালিককে গ্রেপ্তার এবং ওই হজযাত্রীদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে মতিউল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর অভিযোগের ভিত্তিতে এই এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু ভুক্তভোগীরা পরে এজেন্সি মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করায় ওই এজেন্সি মালিক ছাড়া পান। ফলে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তারা আবার আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে হয়তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকেই আমাদের একটাই লক্ষ্য, যেন সব নিবন্ধিত হজযাত্রী নির্বিঘ্নে হজে যেতে পারেন। সে জন্য আমরা শুরু থেকেই সবকিছু নজরে রাখছি। এবার সব প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ায় আমাদের মনিটরিং করতে সুবিধা হচ্ছে। তাই যখন যার ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাকে আমরা নোটিশ করছি। পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নিতে সবাইকে চিঠির মাধ্যমে নোটিশ করা হচ্ছে। যাতে তারা না মানলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’ 

পবিত্র হজ পালন করতে শনিবার (১ জুন) রাত আড়াইটা পর্যন্ত সৌদি পৌঁছেছেন ৫৩ হাজার ১৮০ জন হজযাত্রী। মোট ১৩৬টি ফ্লাইটে তারা দেশটিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ৪৯ হাজার ৪৩৩ জন। আবেদন করা শতভাগ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে প্রকাশিত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজবিষয়ক বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইনস, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক এ তথ্য জানিয়েছে।

হেল্প ডেস্কের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত মোট ১৩৬টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৬৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ৪৩টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। গতকাল পর্যন্ত মোট ফ্লাইটের ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ ফ্লাইট আর মোট হজযাত্রীর মধ্যে ৬৪ শতাংশ সৌদি পৌঁছেছেন। হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত আটজন মারা গেছেন। 

উল্লেখ্য, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। হজের শেষ ফ্লাইট যাবে ১২ জুন। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২০ জুন, আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২২ জুলাই।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শীর্ষ দশে বাংলাদেশ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংকটে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় ঢুকল বাংলাদেশের নাম।

শুক্রবার (৩১ মে) জার্মানির বন থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক খাদ্যসংকট প্রতিবেদন বা গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪-এ এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালের পরিস্থিতি বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিয়ে ওই তালিকা করা হয়েছে। অবশ্য এই প্রতিবেদনের কোনো কোনো সূচকে ২০২৪ সালের বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক তথ্য থাকলেও বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অ্যাগেইনস্ট ফুড ক্রাইসিস’ নামের সংগঠন ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

বৈশ্বিক খাদ্যসংকট প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংকটে থাকা সূচকে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকার অষ্টম স্থানে নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের। এই সূচকের সারসক্ষেপে বলা হয়েছে, ৫৯টি দেশের প্রায় ১৭৬ মিলিয়ন মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। যাদের মধ্য কিছু মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকার ১০টি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কঙ্গো, দ্বিতীয় নাইজেরিয়া, তৃতীয় সুদান, চতুর্থ আফগানিস্তান, পঞ্চম ইথিওপিয়া, ষষ্ঠ ইয়েমেন, সপ্তম সিরিয়া, অষ্টম বাংলাদেশ, নবম পাকিস্তান ও দশম মায়ানমার। 

প্রতিবেদনে সূচকের নানা ধরনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় অবনতি হয়েছে তুলনামূলক ১২টি দেশে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রয়োজন সুদানে। ১৭টি দেশে খাদ্যনিরাপত্তা তুলনামূলক উন্নত হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ ও ২০২৩ তুলনামূলক পার্থক্যে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন কম দেখা যায়। তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়া বেশিসংখ্যক ভুক্তভোগী ৩৯টি দেশের ৩৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ। যাদের জরুরি অবস্থার সম্মুখীন থাকা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সুদান এবং আফগানিস্তানের। ৪১টি দেশে প্রায় ১৬৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনোভাবে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে ৪০টি দেশে প্রায় ২৯২ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে। 

প্রতিবেদনের ২০২৪-এর আউটলুকে বলা হয়,  বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ বা ৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ ২০২৪ সালে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিকে আছে আফগানিস্তান, মায়ানমার ও পাকিস্তানের ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বিশেষ করে জ্বালানি এবং সারের উচ্চ খরচ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও সাপ্লাই চেইনসহ উচ্চ খাদ্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ভুক্তভোগী মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি বর্ষা থেকে বন্যা, চরম আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় একটি বহুবর্ষজীবী উদ্বেগ। এ ছাড়া সংঘর্ষের আশঙ্কা মায়ানমার বা আফগানিস্তানে বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। 

মায়ানমারে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি বছরের জুন-আগস্ট মাসে। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা আশানুরূপ উন্নতি হতে পারে। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য চলতি বছরের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণ করা যায়নি। তবে দেশের জন্য ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পূর্বাভাস, কম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণ এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা বেসরকারি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া দেশের ২০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা রয়েছে বলে একাধিক সংস্থার তথ্য রয়েছে।

আসন্ন বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ সর্বোচ্চ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
আসন্ন বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ সর্বোচ্চ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাজেটে বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে। ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় এখন বাজেটের সর্বোচ্চ একক খাত। এটি এখন মোট বাজেটের সাড়ে ১৯ শতাংশ। প্রতিবছর বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়ছেই। এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সুদ পরিশোধে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ ব্যয় হবে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে। বাকি ১০ শতাংশ বিদেশি ঋণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৮২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা বিদেশি ঋণ।

সূত্র জানায়, ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ধরা হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে।

মেগা প্রকল্পসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে, তার পরিমাণ সাত বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন যে ঋণ করছে, তার একটি বড় অংশও যাচ্ছে সেই ঋণ পরিশোধের পেছনে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ যদি ঋণ পরিশোধে চলে যায়, তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ কমে যাব। এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হলে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিকল্প নেই। 

বাজেটে ঘাটতি পূরণের জন্য দুই উৎস থেকে ঋণ করে সরকার। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ এবং অপরটি বিদেশি ঋণ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আবার ব্যাংকব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয় সরকার। আর বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থা ও দ্বিপক্ষীয় দেশ থেকে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়। প্রতিবছর বাজেটে এই দুই উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব ঋণের বিপরীতে চড়া সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে সুদের পেছনে ব্যয় ২০ শতাংশ চলে যায়। 

আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নিচ্ছে। আর বহুপক্ষীয় দেশের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়া হয়। 

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের সার্বিক মোট ঋণ ছিল ৫১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এটি ১০০ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সুদ এবং আসল পরিশোধের পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। এটি সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়ে আসছে সরকারকে। 

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঋণের বোঝা যেভাবে বাড়ছে তার বিপরীতে সুদ পরিশোধে বাজেটের বড় একটি অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে। এটি সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুদ পরিশোধের চাপ কমাতে হলে সরকারকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ তথা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। তা না হলে সরকার কঠিন চাপের মুখে পড়বে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘আমাদের দরকার প্রচুর বিনিয়োগ। এর জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে যে পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়ার প্রয়োজন, তা জোগান নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। সে জন্যই ঋণ নিতে বাধ্য হয়।’

ঘাটতি বাজেট নিয়ে বিতর্ক
ঘাটতি না উদ্বৃত্ত বাজেট- এ বিতর্ক বহু পুরোনো। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বর্তমানে ঘাটতি বাজেট করা হয়। বাংলাদেশ শুরু থেকে এ নিয়ম অনুসরণ করে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করে আসছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অর্থসচিব প্রয়াত ড. আকবর আলি খান রচিত ‘বাংলাদেশে বাজেট অর্থনীতি ও রাজনীতি’ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘ইতিহাস বলে বেশির ভাগ সময়ই রাজাদের অর্থাভাব ছিল। আয় ও বেশি ব্যয়ের ফলে আর্থিক অনটনের সমস্যা দেখা যেত।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন ঘাটতি বাজেট করা হয়। বাংলাদেশে বাজেট ঘাটতি সহনীয় থাকলেও করোনার অভিঘাতে তা বেড়ে যায়। এ ছাড়া আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, যে কারণে বাজেট অর্থায়নে ধার বা ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।’

বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘাটতির প্রভাব নিয়ে তর্ক আছে। যারা এর বিপক্ষে, তাদের মতে, বাজেট ঘাটতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বোঝা সৃষ্টি করে। কারণ ঋণের প্রতিটি টাকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শোধ করতে হবে।

তাদের মতে, অর্থনীতিকে চাঙা করতে হলে কর হার কমিয়ে বেসরকারি খাতকে সুবিধা দিতে হবে, যাতে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়।
অন্যদিকে যারা ঘাটতি বাজেটের পক্ষে তাদের মতে, ঘাটতি হলেই মূল্যস্ফীতি হবে না। বরং ব্যয় বেশি করলে উৎপাদন কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। ফলে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

ড. আকবর আলি খান তার বইতে লিখেছেন, ‘বাজেট ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই ঘাটতি শুধু দায় সৃষ্টি করে না। ঘাটতি দিয়ে যদি অবকাঠামো খাতে ব্যয় করা হয়, তা হলে আয়ও সৃষ্টি করতে পারে।’