ঢাকা ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আইএমএফের সুপারিশ মানলে শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে

ডলারসংকট চলছে। চাহিদামতো এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীদের অনেকেই। শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় শিল্পের বিভিন্ন খাতে রাজস্ব অব্যাহতি হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য আইএমএফের চাপের বিরোধিতা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সর্বস্তরে রাজস্ব বাড়ানোর চাপ বাস্তবায়ন করা হলে দেশের শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রাজস্ব বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষজ্ঞরাও একই মত জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, শিল্পের অনেক খাতেই রাজস্ব (কর, ভ্যাট ও শুল্ক) অব্যাহতি কমানো ও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর এতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বেড়ে যাবে। 

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে শিল্প খাতে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমানো বা প্রত্যাহার করা হলে পণ্য আমদানিতে আগের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে। শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ডলারসংকটের কারণে এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বিপাকে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে রাজস্ব আরও বাড়ানো হলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশের ব্যবসায়ীরা কী চান তা এফবিসিসিআই থেকে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকেও আলাদাভাবে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমি আশা করি বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি। সরকার এ শর্ত মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করে। এখন কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমাতে হবে। আর এতে শিল্প উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অনেক শিল্প লোকসানে পড়ার ঝুঁকিতে আছে।’

এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন বেশ জোরালোভাবেই। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে রাজস্ব ছাড় সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছে বাজেটে শিল্প খাতে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে রাজস্ব ছাড় কমানো হলেও অন্য কোনোভাবে যেন শিল্প রক্ষায় সুবিধা বহাল রাখা হয়। এনবিআর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সামনে রেখে এখন বাজেট চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, আসন্ন বাজেট নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে এনবিআরের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আইএমএফ থেকে কর, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এনবিআর চেষ্টা করেছে এ প্রস্তাব না মানতে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে এনবিআরকে এ পরামর্শ মানতে হচ্ছে। 

বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা পাচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য। ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০০৮-এর ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া আছে। আসন্ন বাজেটে রেফ্রিজারেটর, এসি, মোবাইল ফোন ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যের ভ্যাট সুবিধা কমানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত জুসের ওপর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর উৎপাদক পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে তা ২ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ। বর্তমানে এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে পুরোপুরি ভ্যাট অব্যাহতি আছে। এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ করা হতে পারে। রেফ্রিজারেটর ও মোবাইল ফোনসেটের ক্ষেত্রে ২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হতে পারে। জুসের মতো পানীয়ের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট হার ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হবে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো হবে। 

জুস প্রস্তুতকারকদের বার্ষিক বিক্রি বা টার্নওভারের ওপরও ন্যূনতম করের হার বাড়নো হচ্ছে। 

রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট করের পরিবর্তে ১২ শতাংশ হারে কর সুবিধা আছে। পরিবেশবান্ধব কারখানা হলে এই হার ১০ শতাংশ। বিরাজমান এসব সুবিধা কমাতে চাপ দিয়েছে আইএমএফ। তবে কোন খাতে কতটা কমানো হবে, তা চূড়ান্ত করে সরকারের ওপর মহলকে জানিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্যাট অব্যাহতি দাবি করলেও আমলে না এনে রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য বা ঝুট স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও বাজারজাতকরণের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন করলে এলাকাভেদে ১০ বছর পর্যন্ত ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ কর অব্যাহতির সুবিধা পায়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্পেও কর অবকাশ সুবিধা আছে। এসব ক্ষেত্রে নতুন করে রাজস্ব সুবিধা কমানোর হিসাব কষছে এনবিআর। শিল্প খাতের পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় ৩৯ ধরনের ভৌত অবকাঠামো খাতে নির্মাণের পর ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতেও বড় ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা আছে। যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়, বিদেশি ঋণের সুদ, শেয়ার হস্তান্তরের ফলে মূলধনি মুনাফার ওপর অর্জিত আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ ফি, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফি এবং বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর ছাড় আছে। আসছে বাজেটে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

আইএমএফ থেকে এনবিআরকে জানানো হয়েছে, দেশে আমদানি পণ্যের ৪৪ শতাংশের ওপর শুল্ক-কর আরোপ নেই। এ ছাড়া কিছু সরকারি প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কূটনীতিক এবং বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে। এনবিআর থেকে এরই মধ্যে এসব খাতে রাজস্ব সুবিধা কমিয়ে বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ভিআইপি বন্দিদের ঈদ: খেয়েছেন বাড়ির খাবার, পেয়েছেন স্বজনদের সান্নিধ্য

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
ভিআইপি বন্দিদের ঈদ: খেয়েছেন বাড়ির খাবার, পেয়েছেন স্বজনদের সান্নিধ্য
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীসহ সারা দেশের কারাগারগুলোতে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন প্রায় ৭০ হাজার বন্দি। ঈদে রাজনৈতিক বন্দিদের পাশাপাশি সাধারণ বন্দিদেরও সময় কেটেছে স্বজনদের সান্নিধ্যে ও বাড়ি থেকে আনা খাবার খেয়ে।

নিয়মানুযায়ী ঈদের দিন থেকে তিন দিনের যেকোনো এক দিন বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা ও বাড়ির খাবার খাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন্দিরা নিজেদের  সেলে সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের দিনের খাবারেও থাকে বৈচিত্র্য। নামাজের পর দেওয়া হয় সেমাই, পায়েস ও মুড়ি। দুপুরে পোলাও, গরু বা খাসি, মুরগির রোস্ট, মিষ্টি, কোমল পানীয় ও সালাদ। অন্যদিকে রাতের খাবারে সাদা ভাত, মাছ, বুটের ডাল ও ডিম থাকে। তবে অনেকে এবার বাসা থেকে আনা খাবার খেয়েছেন। ঈদের জন্য বন্দিরা এক দিন সুযোগ পেয়েছেন স্বজনদের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতেরও।

কারা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, অর্থ আত্মসাৎ, পাচার, হত্যাসহ নানা মামলায় দেশের কারাগুলোতে ভিআইপি বন্দি রয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের কারাগারে রয়েছেন ১৩০ ভিআইপি বন্দি। 

এ ছাড়া বিশেষ বন্দিরা ঈদের দিন টিভি দেখে, বই পড়ে ও গল্প করে সময় কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছে কারা সূত্র। অনেকের পরিবার তাদের সঙ্গে দেখা করেছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, ঈদের দিন কয়েদিদের পোশাক পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। কারাগারের দেওয়া নির্দিষ্ট পোশাকেই তাদের ঈদ উদযাপন করতে হয়। তবে বিচারের অপেক্ষায় বা সাজা হয়নি এমন বন্দিরা বাসা থেকে ঈদের পোশাক এনে পরতে পারেন। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। 

কারাগারে পরিবারের কেউ বন্দি থাকলে আট-দশটা সাধারণ পরিবারের মতো তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। সাক্ষাতের জন্য কারাগারের সামনে অপেক্ষা করা সবার গল্প একই। ঈদের দিনে সাক্ষাতের জন্য প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন কারাগারে। তবে অনেক সময় সিরিয়াল পেতে তাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

সরেজমিনে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনদের ও বন্দির মাঝে রয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টনী। বেষ্টনীর ফাঁকা দিয়ে চোখে দেখা ও কথা বলার সুযোগ থাকে। একজন বন্দির সঙ্গে স্বজনরা সাক্ষাতের সময় পান আধা ঘণ্টা। স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সময় অনেক বন্দিকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। ঈদের দিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া আয়েশা (ছদ্মনাম) খবরের কাগজকে বলেন,  হত্যা মামলায় তার ভাইয়ের ১২ বছরের সাজা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানরা তার খবর নেয় না। বোন হয়ে ভাইয়ের বিপদে তো বসে থাকতে পারি না। রক্তের টানে আসছি, এক নজর দেখার জন্য।

ধানমন্ডি থেকে আসা একজন ভিআইপি বন্দির আত্মীয় জানান, তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি তার আত্মীয়র সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।     

কারা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৯৩৭ এবং নারী ১ হাজার ৯২৯ জন। কিন্তু কারাগারগুলোতে বর্তমানে মোট বন্দি আছেন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া এখন বিশেষ বন্দিদের চাপ বাড়ছে।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল-ফরহাদ গতকাল মঙ্গলবার খবরের কাগজকে বলেন, ঈদে এক দিন বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বাসার খাবার খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের জন্য তাদের স্বজনরা বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এলে সেগুলো পরীক্ষা করে বন্দিদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও  আয়োজন ছিল। বন্দিরা আনন্দময় পরিবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।

বিশেষ বন্দিদের বিষয়ে জানতে চাইলে জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, ঈদে সাধারণ বন্দি, ভিআইপিসহ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়েছে।

দুদিন আগেই সরকার পতনের আশঙ্কা করেন শেখ হাসিনা ‘নো ওয়ান স্টে হিয়ার’

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
‘নো ওয়ান স্টে হিয়ার’
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে গভীর রাতে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। ঘুম যখন ভাঙল তখনো সূর্য ওঠেনি। বিছানায় মাথার কাছে থাকা মোবাইল হাতে নিতেই চোখে পড়ল হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজটি। একটা ছোট বাক্য। ‘নো ওয়ান স্টে হিয়ার’। এক লাইনের এই টেক্সট মেসেজের প্রেরক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুঝতে তার কোনো অসুবিধা হলো না শেখ হাসিনার এই বার্তার অর্থ। চার শব্দের এই মেসেজটি ছিল তার সর্বশেষ নির্দেশ। তিনি দ্রুতই দেশ ছাড়তে বলছেন। আগের দিন, ৩ আগস্ট পারিবারিক মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের একই বার্তা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার নিজেই মোবাইলে টেক্সট করে সেই নির্দেশ দিলেন স্বজনদের। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক আত্মীয় সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনদের। তাদের একজন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশ ত্যাগ করতে না পারলে এখন তাকে জেলে থাকতে হতো।’

তিনি জানান, বিদেশে থাকা এই ব্যক্তি ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ও সাবেক এমপি। শেখ হাসিনার দাদা শেখ লুৎফুর রহমানের পক্ষের আত্মীয় তিনি। মোবাইলে নির্দেশ পাওয়ার দিনই গত বছরের ৪ আগস্ট কারফিউয়ের মধ্যে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।

এই আত্মীয় তাকে আরও জানান, শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের এই বার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন শাসকদল আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কিংবা তার সরকারের অন্য কাউকে দেশ ছাড়তে বলেননি তিনি।

স্বজনদের অধিকাংশের বিদেশে নিরাপদ অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই থেকে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। পরে শেখ রেহানা লন্ডন চলে যান। রেহানার ছেলে-মেয়েরা আগে থেকেই সেখানে রয়েছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। হত্যা, গুম, দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের অনেকেই এখন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা, যাদের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র রাজনীতিক রয়েছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বজন বা আত্মীয়দের মধ্যে প্রায় সবাই দেশত্যাগ করে নিরাপদে বিভিন্ন দেশে চলে যেতে পেরেছেন। সরকার পতনের আগে তাদের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ। অবশ্য স্বজনদের একটি বড় অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্যের গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। তার নাম সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। তিনি শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে। গত বছরের অক্টোবরে তিনি গ্রেপ্তার হন। মঈন আবদুল্লাহর সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানা গেছে। বরিশালে মঈন আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, উপদেষ্টা হাসান আরিফের পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি (মঈন) গ্রেপ্তার হবেন না বলে ধারণা করেছিলেন। 

অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওই সদস্য জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ আগস্ট বিকেলেই বুঝতে পারেন তার সরকার আর টিকছে না। নিজের বংশের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের কাছে সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তাদের বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো নয়। জীবন বাঁচাতে সবাইকে দেশ ছাড়তে হবে। এই নির্দেশ বংশের সবাইকে জানিয়ে দিন।’

শেখ হাসিনার এই নির্দেশ পাওয়ার পর ৩ আগস্ট থেকে এক এক করে আত্মীয়-স্বজনরা দেশ ছাড়তে শুরু করেন। সাবেক এই এমপি দাবি করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের দুই দিন আগে ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন। ঢাকা বিমানবন্দরে থাকতেই তাপসকে শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এরপর ফজলে নূর তাপস বিমানবন্দর থেকেই সিঙ্গাপুরে ফিরে যান। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে ৩ আগস্ট নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছিলেন শেখ হাসিনা। এই কমিটির বৈঠকে সেদিন তিন বাহিনীর প্রধানরাও ছিলেন। ওই দিন তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। সেই সঙ্গে পরোক্ষভাবে তাকে পদত্যাগের অনুরোধ করে বলা হয়, সেনা সদস্যরা জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে পারবেন না। 

এদিকে পুলিশের ওপর ভরসা থাকলেও শেখ হাসিনা নিশ্চিত হন ছাত্রদের আন্দোলন দমন করা এখন সম্ভব নয়। তার নেতৃত্বাধীন সরকার আর টিকতে পারছে না। এরপর নিজের বংশের লোকজন এবং নিকটাত্মীয়দের দেশ ছাড়তে মোবাইলে মেসেজ পাঠান তিনি।

দেশ ছাড়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানেন বলে স্বীকার করেন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী তার নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি।

তার মতে, শেখ হাসিনা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং তখনকার পরবর্তী পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করেছিলেন। এ কারণে জীবন বাঁচাতে আত্মীয়-স্বজনদের ওই মেসেজ পাঠিয়ে দ্রুত দেশ ছাড়তে বলেন তিনি।

সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে দাম মেলেনি চামড়ার

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১১:১৩ এএম
সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে দাম মেলেনি চামড়ার
ছবি: খবরের কাগজ

আমাদের দেশে কোরবানির চামড়া বিক্রির অর্থ সাধারণত মাদ্রাসার জন্য ব্যয় করা হয়। তবে প্রতি বছর এখানেও থাবা বসায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকে আশায় ছিলেন এবার হয়তো প্রতিবারের চিরচেনা চিত্র পাল্টাবে। কিন্তু এবারও সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার ন্যায্য দাম জোটেনি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ চামড়া সংগ্রহকারীরা। 

দেশে চামড়া সংরক্ষণের জন্য শুধু লবণ মাখিয়ে রাখা হয়। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়েই চামড়া সংরক্ষণের আধুনিক কোনো পদ্ধতি নেই। কোরবানির পর সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার গুণগত মানও কমতে থাকে। এ সুযোগ নিয়ে ট্যানারির মালিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় পার করেন। ফলে চামড়া নষ্ট হতে থাকে। বাধ্য হয়েই চামড়া সংগ্রহকারীরা কম দামে ট্যানারির মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। অনেকের চামড়া বিক্রি করে পরিবহন খরচও উঠে না। তাই নষ্ট করে ফেলেন। অনেকে মনের দুঃখে চামড়া পুঁতে ফেলেন। এবারও সারা দেশে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিতে বিগত দিনের নৈরাজ্য দেখা দেয়। যদিও এবার সরকার অনেক আগে থেকেই তৎপর ছিল। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে চামড়াকে মুক্ত করতে এরই মধ্যে কাঁচা চামড়া ও ব্লু ওয়েট রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো এ বছরও পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়নি। এবারও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে। বর্তমান সরকার তেমন কিছুই করতে পারেনি। চামড়া সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা থাকলে সিন্ডিকেটের কবল থেকে চামড়ার বাজার মুক্ত করা সম্ভব। 

ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে অবস্থা এবার সবচেয়ে খারাপ। ঢাকার অনেক এলাকায় এসব চামড়া বিনামূল্যে দান করা হয়েছে, কোথাও বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫-৩০ টাকায়। 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, “ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে সরকারি মূল্য মানা হচ্ছে না। এটা আমরা নিজেরাও লক্ষ্য করেছি। কিন্তু, আমরা সে অনুযায়ী সঠিক অ্যাকশন নেওয়ার চেষ্টা করব। এ বছরের শিক্ষা নিয়ে সামনের বছর কাজে লাগানো হবে।” তিনি খবরের কাগজকে বলেন, “ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চামড়ার বাজারের নির্ভশীলতা কাটাতে এরই মধ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। 

বাজারে গরু কম ছিল:
বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার আগে ভারত থেকে গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ এবং মায়ানমার থেকে গড়ে ৫ লাখ পশু দেশের বাজারে এনে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এবার ভারত এবং মায়ানমার থেকে পশু আসেনি বলা যায়। মূলত দেশের পশুর ওপর নির্ভরশীল ছিল কোরবানির বাজার। 

কোরবানি কম হয়েছে:
চামড়া খাতের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম পশু কোরবানি হয়েছে। চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এবার ৭৫ লাখ চামড়া পাওয়া যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ১৪০টি ট্যানারিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। রাজধানীর বাইরের চামড়া এখনো এসে পৌঁছায়নি। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি শাহিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি কালো টাকার মালিকরা এবার আত্মগোপনে থাকায় বিশেষ করে বিগত দিনে মতিউরের মতো কালো টাকার মালিকদের সংখ্যা এখন কমেছে। তাই লাখ লাখ টাকা দামের পশু কোরবানি কমেছে। এ ছাড়া এবার দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত দিয়ে পশু আনতে না পারার কারণে বাজারে পশুর সরবরাহ কম ছিল।’ 

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনছেন। তবে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব না। অনেকে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করে বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছেন।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পশু কোরবানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি। সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা কোরবানি দেবেন কোথা থেকে? আগে অনেকে একা একটি পশু কোরবানি দিলেও এবার কয়েকজন মিলে দিয়েছেন। এতে পশুর চামড়া কম পাওয়া গেছে।’ 

নৈরাজ্যের প্রভাব পড়বে চামড়া ব্যবসায়:
কোরবানির পশুর চামড়া মূলত দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার উৎস। অথচ, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। চামড়া সংগ্রহের ব্যর্থ সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা, মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, লবণের সংকট ও নিম্নমানের লবণ এসব মিলিয়ে চামড়ার বিশাল অংশ প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া শিল্প ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রতিবছর যদি কোরবানির চামড়া এ শিল্পের জন্য লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটি আর সম্ভাবনার খাত থাকবে না।’

সারা দেশের চামড়া বিক্রির চিত্র:
চট্টগ্রামে উপযুক্ত দাম পাননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকে রাগে-ক্ষোভে চামড়া ফেলে যান ময়লার ভাগাড়ে। কেউ পুঁতেছেন মাটির নিচে। আবার অনেকে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে দান করেছেন মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদ-পরবর্তী হাটে প্রায় অর্ধ লাখ গরু-ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে দাম নিয়ে হতাশ হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। অনেকে পুঁজি হারাতে বসেছেন। অনেকের খরচের টাকাও ওঠেনি।

আখাউড়ায় সেতু আছে, খাল উধাও!

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১০:২৮ এএম
আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আখাউড়ায় সেতু আছে, খাল উধাও!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বনগজ গ্রামে সেতু থাকলেও খাল দখল করে বসবাস করছেন প্রভাবশালীরা। ছবি: খবরের কাগজ

কাঁচা-পাকা সড়ক পেরিয়ে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে দুটি সেতু। অবাক করার বিষয় হলো, সেতু থাকলেও সংযোগ সড়কসহ উধাও হয়ে গেছে খালটি। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে। খালটি বনগজ খাল হিসেবেই স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশি পরিচিত।

এক সময় খালটি ছিল গ্রামবাসীর প্রাণ। খালের পানি দিয়ে কৃষিকাজ করা হতো। এ ছাড়াও গ্রামের মানুষ খালে গোসল করত। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালীরা খালটি দখল ও ভরাট করে সেই জায়গায় বাড়িঘর নির্মাণ করে। এতে বনগজ গ্রামের মানচিত্র থেকে খালটি একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে। অবাক করার বিষয় হলো, এত বড় একটি খাল দখল হয়ে গেলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার। খালটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কর্দমাক্ত হয়ে যায় গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলো। পানি সরতে না পারায় গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়ের সামনে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বনগজ গ্রামের রমজান খাঁ ও কাজল মিয়ার বাড়িতে দুটি সেতু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর সংযোগ সড়কসহ অদৃশ্য হয়ে গেছে খালটি। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রমজান খাঁ, কাজল মিয়াসহ খালপাড়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী খালটি প্রথমে একটু একটু করে দখল করেন। পরে সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। এমনকি সেতুর সংযোগ সড়কও তারা দখল করে নেন। 

গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকজন চলাচল করার জন্য একটি সেতু ২০১৪ সালে এবং আরেকটি সেতু এর কয়েক বছর আগে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ নির্মাণ করে। খালটি গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে পড়ে। 

বনগজ গ্রামের চারু মিয়া বলেন, ‘এক যুগ আগেও এ খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করত। বর্ষা মৌসুমে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ খালে জাল দিয়ে মাছ ধরত। বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে তিতাস নদীতে নেমে যেত। এসব এখন ইতিহাস। ২০১৪ সাল থেকে খাল দখল শুরু হয়। দখল করতে করতে খালটি এখন প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে।’

একই গ্রামের রৌশান আলী বলেন, ‘খালটি না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’ 

রুহুল আমীন বলেন, ‘আগে বৃষ্টি হলে খাল দিয়ে সহজেই পানি নেমে যেত। এখন বৃষ্টি হলে গ্রামের স্কুলের সামনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তায় কাদা জমে। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যায় না। গ্রামের শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রশাসনের অবহেলার কারণে এলাকার প্রভাবশালীরা খাল ভরাট করছেন। পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অল্প বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটিতে আবারও পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’ 

নাসিমা বেগম বলেন, ‘খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্কুলের সামনে ও রাস্তায় বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রশাসন খালটি উদ্ধারে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।’

আখাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর এলাকায় সার্ভে টিম পাঠানো হয়েছে। সরকারি জায়গা দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামবাসীর উন্নয়নে প্রশাসন সব সময় কাজ করবে।’

ইউনূস-তারেক বৈঠক: দূরত্বের অবসান হবে তো?

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
ইউনূস-তারেক বৈঠক: দূরত্বের অবসান হবে তো?
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

বেশ কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর অবশেষে সরকার ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যতদূর জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিজেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আর তাকে সহায়তা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ফলে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক।

তবে সম্ভাব্য ওই বৈঠককে কেন্দ্র করে জনমনে প্রত্যাশা যেমন আছে; তেমনি শেষ পর্যন্ত কী হয়, আছে এমন আলোচনাও। বিশিষ্ট সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, দুই নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর মতে, সংঘাতময় পরিস্থিতি ঠেকাতে উভয় নেতা একমত হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। অন্যদিকে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দুই নেতাই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রাখবেন। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘নির্বাচনের দিনক্ষণসহ বিভিন্ন বড় ও ছোটখাটো ইস্যুতে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে কিছুটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। মতবিরোধ সব তো মিটে যাওয়ার কথা নয়। তবে কিছু ব্যাপারে সমঝোতা হবে বলে আমি আশা করি।’ 

যদিও ‘ওয়ান টু ওয়ান’ এ বৈঠকের কোনো তথ্য আপাতত প্রকাশ করা হবে না বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ইতোমধ্যে বৈঠককে কেন্দ্র করে জনমনে একধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই বৈঠকের মধ্য দিয়েই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। তবে সরকার এবং বিএনপি উভয়পক্ষের অনেকের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত কয়েক মাসে ওই দুই অংশের বক্তব্য পাল্টা-বক্তব্যের কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল নবগঠিত এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) দু-একজন নেতার ভূমিকা। সবকিছু মিলিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরে দেশে একধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সরকার ও বিএনপির মধ্যে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন হবে আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো এক দিন। কিন্তু বিএনপি এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট না হয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। পর্যবেক্ষক মহলের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আলোচনা ওঠে, সমঝোতা সম্ভবত হলো না। আর সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে বলেও নানা আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের বলাবলি করেন, সংঘাত হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, এর ফলে রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে বিএনপিই ক্ষমতার কাছাকাছি। কিন্তু সংঘাত-সংঘর্ষ হলে অন্তর্বর্তী সরকারের টিকে থাকা কঠিন হবে, এমনকি উপদেষ্টারা পদত্যাগও করতে পারেন। কিন্তু অমন পরিস্থিতি তৈরি হলে নতুন আরেকটি সরকার গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্রগুলো একমত হতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া তৃতীয় কোনো শক্তি ক্ষমতায় এলে তারাও সঠিক সময়ে নির্বাচন দেবে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অর্থাৎ সব দিক থেকে বিএনপিরই লোকসান হবে। পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে এমন আলোচনাও আছে, সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। কারণ অরাজক পরিস্থিতির সুযোগে তারা ঢুকে পড়বে। যদিও আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর বিষয়ে হাসিনা পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু সব ইস্যুতে তারা আবার একমতও হতে পারছে না। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে বিরোধও এখান থেকেই। 

সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির বিরোধের বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন খালেদা জিয়া। তবে ৭ জুন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি পরিস্থিতি শান্ত রাখার নির্দেশনা দেন। বলেন, ইউনূস সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে লাভ নেই। সূত্রের দাবি, তিনি সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথাও বলেন। এর পরপরই পরিস্থিতি বদলে যায়। ৯ জুন সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কঠোর অবস্থান থেকে সরে যায় বিএনপি। 

বৈঠকের পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। বৈঠকে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। 

বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শেষ পর্যন্ত একটা কম্প্রোমাইজ হবে। ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে। জনমনে স্বস্তি আসবে। এই আলোচনা দেশের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ভালো। বিদ্যমান জটিলতা কমবে।’ তবে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উভয় দলের নেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকা বাঞ্ছনীয়। তা না হলে তৃতীয় পক্ষ আলোচনা ভণ্ডুল করে দিতে পারে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, প্রধান উপদেষ্টা যখন দুই ঘণ্টা সময় দিয়েছেন এবং সব কথা শোনার কথা বলছেন তখন অবশ্যই তিনি সমস্যার সমাধান চান। প্রধান উপদেষ্টা তার পক্ষ থেকে সংকট দূর করার জন্য একটা বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছেন।’

‘যেহেতু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করেছেন। খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের রাজনীতির ওপর আমাদের ভরসা। ইদানীং বিএনপির নেতাদের নানা রকম কথাবার্তায় জনগণ ভরসা পাচ্ছিল না। আমার মনে হয়, মিটিংটা ইতিবাচক হবে। চলমান সংকটও দূরীভূত হবে। মানুষের মনে অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা দূরীভূত হবে। তার জন্য বেগম জিয়া, ড. ইউনূস ও তারেক রহমান- আমরা এই তিনজনকে ধন্যবাদ দেব’ যোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘জনগণ ভয় পাচ্ছিল, বিএনপি আবার আন্দোলনে নামে কি না? তাহলে এটা তো একটা সংঘাত হতো। আশা করছি, দেশে সংঘাত না হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে উভয় নেতা একমত হবেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আশা করি, দুই নেতাই তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রাখবেন। গণ-অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের কথা চিন্তা করবেন। তাদের কথা চিন্তা করেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন এবং সমঝোতায় পৌঁছাবেন। শুধু বিএনপি বা সরকারের স্বার্থে নয়, সমঝোতা দেশের সবার স্বার্থেই হওয়া দরকার। তবে বরফ গলল কি না, তা সময়ই বলে দেবে।’

তিনি বলেন, দেশে কোনো না কোনোভাবে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এপ্রিলের মাসের সীমা অতিক্রম করবে না। প্রধান উপদেষ্টা এখন ক্ষমতার প্রধান। তার বাইরে গিয়েও দেশে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনা ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলের প্রধানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপিপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন না, এটা তো হতে পারে না। দেখা যাক তাদের কথাবার্তায় কী ফল আসে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার কাছাকাছি বিএনপি, অন্য কোনো দল নয়। ফলে দেশের মধ্যে অশান্তি হলে বিএনপির ক্ষতি হবে। নির্বাচনের দিনক্ষণসহ বিভিন্ন ছোটখাটো ইস্যুতে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। মতবিরোধ সব তো মিটে যাওয়ার কথা নয়। তবে কিছু ব্যাপারে সমঝোতা হবে বলে আমি আশা করি।’

‘এপ্রিল থেকে নির্বাচন সরাসরি ডিসেম্বর চলে আসবে তা নয়। তবে মাঝামাঝি কিছু একটা হতে পারে। যেসব উপদেষ্টার ব্যাপারে বিএনপি আপত্তি রয়েছে, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হবে নাকি, নির্বাচনের আগে ব্যক্তির পরিবর্তন হবে নাকি, আকার আরও বাড়বে নাকি- এসব বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব, সেই দূরত্ব কমলেই সবচেয়ে ভালো ফলাফল হবে। উভয় পক্ষ নমনীয় হলেই সবচেয়ে ভালো আউটকাম হবে’ যোগ করেন বিশিষ্ট এই আইনজীবী।