
ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া। ময়মনসিংহ সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এই উপজেলার অবস্থান। এখানকার গ্রামের রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। চাইলেই কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে উপজেলা কিংবা জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারেন না। কেউ অসুস্থ হলে তার শেষ ঠিকানা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এক যুগ আগে এই হাসপাতালটি ৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন উপজেলার দুই লাখের বেশি বাসিন্দা আশায় বুক বেঁধেছিলেন- হয়তো বাড়বে চিকিৎসক, মিলবে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু তা আর হয়নি! উল্টো বেড়েছে ভোগান্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসেন। তবে তাদের সুচিকিৎসার জন্য এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই।
হাসপাতালের অনেকগুলো দরজা প্রতিদিন তালাবদ্ধ থাকে। রোগীদের চিকিৎসা দেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বেশির ভাগ সময় ইনডোর ও আউটডোরে সেবা দেন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার। তখন রোগীদের চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু সেই সংখ্যার অনুপাতে এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৮টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাসুদ রানা ও নুসরাত জাহান নামে দুই চিকিৎসক।
আগে আরও সাতজন চিকিৎসক থাকলেও তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে এ এলাকার রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। হাসপাতালে এসে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা পাইনি। যদি চিকিৎসক না থাকেন, তা হলে হাসপাতাল রেখে লাভ কী?’
উপজেলার প্রত্যন্ত কলসিন্দুর গ্রাম থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মরিয়ম বেগম। ঘরের কাজ করার সময় তার হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। কিন্তু এখানে এসে তিনি দেখতে পেলেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রচুর রোগী চিকিৎসা পাওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা শেষে তিনি চিকিৎসাসেবা পান।
স্থানীয়রা জানান, এই হাসপাতালটি এলাকার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীরা এখানে এসে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
মাহমুদুল হক নামে ওই উপজেলার এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সংকটটি কেবল হাসপাতালের সেবার মানেই প্রভাব ফেলছে না, বরং এটি রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ করে এখানকার সেবার মান উন্নত করা প্রয়োজন। ভাবা যায়, এখানে হাসপাতাল আছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই! আমরা হতভাগ্য বলেই যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত চিকিৎসক সংকট দূর হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফয়সল আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই হাসপাতালের সাতজন চিকিৎসক সংযুক্তিতে আছেন। তাই যারা সেখানে কর্মরত আছেন, তারা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সংযুক্তি আদেশ বাতিল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’