
প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার আশায় যেকোনো পুরুষই তার ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিষয়টি মাথায় রেখে তাকে খুশি করার চেষ্টা করে। এই বিষয়টির ব্যত্যয় ঘটেনি পক্ষীকূলের মধ্যেও। ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়া পাখিদের মধ্যে অন্যতম, যে কিনা স্ত্রী প্যারোটিয়াকে আকৃষ্ট করতে তার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে।
পুরুষ প্যারোটিয়া স্ত্রী প্যারোটিয়াকে প্রেম নিবেদনের আগে পূর্বপরিকল্পনা করে। যাতে স্ত্রী প্যারোটিয়া তাকে প্রত্যাখ্যান করতে না পারে। পুরুষ প্যারোটিয়া স্ত্রী প্যারোটিয়াকে আমন্ত্রণের আগে নির্ধারিত স্থান নিখুঁতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। এরপর নিজেকে প্রস্তুত করে সুমধুর কণ্ঠে প্রেয়সীকে ডাকে। স্ত্রী প্যারোটিয়া আসার পর পুরুষ প্যারোটিয়া প্রথমেই তাকে মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন করে। এরপর অসাধারণ কলাকৌশলে নৃত্য প্রদর্শন করে।
ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়া আরফাক প্যারোটিয়া নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Parotia Sefilata। এটি প্যারাডাইস প্রজাতির একটি আকর্ষণীয় উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান পাখি। ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়া Paradisaeidae পরিবারভুক্ত, যা ‘Birds of Paradise’ নামে পরিচিত। এই পরিবারের পাখিরা তাদের সৌন্দর্য, রং এবং বিবাহ প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত।
এটি ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া অঞ্চলের ভোগেলকপ উপদ্বীপের আরফাক পর্বতমালার কুয়াশাচ্ছন্ন গভীর পাহাড়ি অরণ্যে পাওয়া যায়। এখানে খাদ্য সহজলভ্য। এখানে প্রচুর মস, ফার্ন ও গাছ রয়েছে। ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়া সাধারণত ১২০০-২০০০ মিটার উচ্চতায় বসবাস করে।
ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়া সাধারণত সর্বভুক পাখি অর্থাৎ সব ধরনের খাবার খায়। এরা প্রধানত বিভিন্ন ধরনের ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ ও মাকড়সা খায়।
প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় ও অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী পুরুষ প্যারোটিয়া আকৃতিতে ৩৩ সেমি হয়। এর পুরো শরীর গাঢ় চকচকে কালো রঙে আবৃত থাকে, যা সূর্যের আলোয় ঝলমল করে। বুকের সামনে সোনালি-সবুজ রঙের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। চোখের গাঢ় নীল রং যে কাউকেই আকৃষ্ট করে। মাথার দুই পাশে থাকে তারের মতো সরু মোট ছয়টি অ্যান্টেনা, যা সে নৃত্য শিল্পকর্মে ব্যবহার করে।
অন্যদিকে স্ত্রী প্যারোটিয়া পুরুষ প্যারোটিয়ার তুলনায় ফ্যাকাশে রঙের হয়ে থাকি। বাদামি রঙের ওপর গাঢ় দাগ যুক্ত, যা তাকে আত্মগোপন করতে সাহায্য করে।
ওয়েস্টার্ন প্যারোটিয়ার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রেমের নৃত্য। পুরুষ পাখিরা স্ত্রী পাখিদের মন জয় করতে এক নিখুঁত নৃত্য প্রদর্শন করে। তারা বনভূমির একটি ছোট অংশ পরিষ্কার করে ‘নাচের মঞ্চ’ তৈরি করে এবং সেই খোলা স্থানে স্ত্রী পাখি এলে শুরু হয় মূল নৃত্য।
নাচের সময় পুরুষ পাখি নিজের পালক ফুলিয়ে তোলে, উজ্জ্বল বক্ষের পালক উন্মুক্ত করে, মাথার পালক ছড়িয়ে দেয় এবং ধীরে ধীরে একটি গোলাকার ভঙ্গিমায় চলাফেরা করে- যা একটি রোমান্টিক টুটু স্কার্টের মতো দেখায়। সেই সঙ্গে সে মাঝে মাঝে মাথা নিচু করে চোখের নীল ঝলক এবং গলার রঙিন পালক দেখিয়ে আকর্ষণ বাড়ায়। এই জটিল ও সুনির্দিষ্ট নৃত্যের মাধ্যমে স্ত্রী পাখিকে প্রভাবিত করে।
মোহময় রূপের অধিকারী হওয়ায় পাখিটি প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বিবর্তনের এক বিস্ময়কর উদাহরণ। তবে বন উজাড়, পাখি শিকার ইত্যাদি কারণে এর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। প্রকৃতির এসব অনন্য সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তারেক