ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উচ্চফলনশীল বাউ মিষ্টিআলু-৫ উদ্ভাবন

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬ এএম
আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
উচ্চফলনশীল বাউ মিষ্টিআলু-৫ উদ্ভাবন
খেতে বাউ মিষ্টিআলু-৫-এর ভালো ফলন। একজন কৃষক ও গবেষক আলু পর্যবেক্ষণ করছেন। বাসস

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন উচ্চফলনশীল বাউ মিষ্টিআলু-৫। এটি স্থানীয় জাতের তুলনায় তিন গুণ বেশি ফলনশীল এবং লাভজনক। প্রতিটি গাছে ১-১.৫ কেজি আলু ধরে। ৯০ দিনে ফলন পাওয়া যায়। এক হেক্টর জমিতে ৩০ টন ফলন হতে পারে। নতুন জাতটি চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এটি পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর চাষ করা যায়।

শর্করার চাহিদা পূরণে পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টিআলু ভাতের বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিআলুর চাষ হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, বি, সি ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকায় এটি পুষ্টির অন্যতম ভালো উৎস। কিন্তু স্থানীয় জাতের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়া, বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় মিষ্টিআলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, মিষ্টিআলুর গড় উৎপাদন বাড়াতে এবং কৃষকদের লাভের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন ‘বাউ মিষ্টিআলু-৫’। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ মিষ্টিআলুর উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী নতুন জাত বাউ মিষ্টিআলু-৫ উদ্ভাবন করেছেন।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান জানান, বাউ মিষ্টিআলু-৫ একটি উচ্চফলনশীল জাত। এটি সাধারণ আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল, যার প্রতিটি গাছে এক থেকে দেড় কেজি আলু ধরে। চারা রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এ আলু সারা বছরই চাষ করার উপযোগী। বাউ মিষ্টিআলু-৫-এর প্রতিটি গাছ থেকে ১০০ দিনেরও বেশি বয়সে সর্বোচ্চ ফলন দেয়। সাধারণ আলু প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন ফলন দিলেও বাউ মিষ্টিআলু দেয় ৩০ টনের বেশি ফলন।

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনায় বাউ মিষ্টিআলু-৫-এর চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। আলু চাষ করে অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছে চাষিরা। 

ময়মনসিংহ সদর উপোজলার কৃষক হাসান বলেন, ‘এ জাতের আলু চাষ করে গড়ে আমরা প্রতি ১০ বর্গমিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছি। অন্যান্য স্থানীয় জাতের প্রতি গাছে ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম আলু ধরলেও এ জাতের আলুতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পেয়েছি।’

আরেকজন আলুচাষি বলেন, ‘আগে আমরা অনেক জমিতে আলু চাষ করতাম। তবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও বাজারে দাম কম পাওয়ায় চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বর্তমানে আবার এ নতুন জাতের আলু চাষ শুরু করেছি। একই উৎপাদন খরচে এর ফলন বেশি হওয়া আশা করছি লাভবান হতে পারব।’

ফুলপুরের কৃষক মনু মিয়া বলেন, ‘ফুলপুরে এ প্রথম বাউ মিষ্টিআলু-৫ নামের নতুন জাতের মিষ্টিআলু চাষে সফলতা পেয়েছি। প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ৬-৭টি আলু পর্যন্ত পেয়েছি।’

মিষ্টিআলুর জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা দলের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুন মোদক বলেন, ‘ক্রিম, বেগুনি ও কমলা- এ তিনটি রঙে আলুগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কমলা রঙের আলু গাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। বেগুনি রঙের আলু পুড়িয়ে খেলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়। বিশেষ করে পোড়ানোর পর এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণ ক্রিম রঙের আলুগুলো সবজি হিসেবে রান্না করা যায়। আবার পুড়িয়েও খাওয়া যায়।’

প্রধান গবেষক অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান আরও বলেন, ‘বাউ মিষ্টিআলু-৫ কমবেশি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) এর ফলন ভালো হয়। মিষ্টিআলু আমিষ, জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে ও পটাশিয়ামের জোগান দিতে সক্ষম। উপযুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে বাউ মিষ্টিআলু-৫-এর উৎপাদন প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ৪০ টন হওয়া সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে রোগ সংক্রমণ, ইঁদুরের উৎপাতসহ কিছু প্রতিকূলতা থেকেই যায়। এমন অবস্থায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৩ টন পাওয়া গেছে। দেশে প্রচলিত মিষ্টিআলুর জাতীয় গড় উৎপাদন ১০ টনের মতো। সে হিসাবে এ আলুর উৎপাদন তিন গুণের বেশি। এ জাতের চারা রোপণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো নভেম্বরের শেষের সময়টা। মার্চের শেষের দিকে এ মিষ্টিআলু উত্তোলন করলে ফলন সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়।’ সূত্র: বাসস

চট্টগ্রামে লাম্পি স্কিন ডিজিজ  আতঙ্কে খামারিরা

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:১৫ এএম
চট্টগ্রামে লাম্পি স্কিন ডিজিজ  আতঙ্কে খামারিরা
খবরের কাগজ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অসংখ্য খামারি গবাদি পশু মোটাতাজা করছেন। গত বছর লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গরু ও বাছুরের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে এ রোগের প্রকোপ কিছুটা কম হলেও বর্তমানে পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। কোরবানিযোগ্য পশুর শরীরে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাধারণত এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। অস্বাভাবিক গরম ও মশা-মাছির বংশবিস্তারের ফলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর ওঠে। এরপর শরীরের কয়েক জায়গায় ছোট ছোট গুটি উঠতে শুরু করে, যা একপর্যায়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়া শুরু হয় এবং গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে লোম উঠে যায় ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপর এ রোগের প্রভাব পড়ায় গবাদি পশু মারাও যায়।

সাতকানিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে গবাদি পশুর মধ্যে এলএসডি ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমাদের কাছে এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই।’ 

যশোরে কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে খামারি অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৪২ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
যশোরে কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে খামারি অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং
‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা।রবিবার (১ জেুন) যশোরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কার্যালয়ে।খবরের কাগজ

‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ এবং ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিগুলো কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে একদিকে যেমন উৎপাদন বহু গুণ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

রবিবার (১ জুন) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) যশোর অঞ্চলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। 
কর্মশালায় বলা হয়, ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ হচ্ছে একটি আধুনিক কৃষি পরিকল্পনা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে মাটি, আবহাওয়া, পানির প্রাপ্যতা এবং স্থানীয় কৃষি বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে কোন অঞ্চল কোন ফসল চাষে উপযুক্ত, তা নির্ধারণ করা যায়। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হন।

অন্যদিকে ‘খামারি মোবাইল অ্যাপ’ একটি স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, যা কৃষকদের সরাসরি কৃষি তথ্য, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সারের সুপারিশ, ফসল বিমা ও নিকটবর্তী বাজারমূল্যের তথ্য দেয়। এ অ্যাপ কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে বাস্তব সময়ের সহায়তা প্রদান করে। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলমগীর বিশ্বাস কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণেই কৃষি আজ আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) আয়োজিত এই কর্মশালায় ডিএই যশোর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের খামারি মোবাইল অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং সিস্টেমবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ক্রপ জোনিং প্রকল্প, বিএআরসির সদস্য পরিচালক (শস্য) ও কো-অর্ডিনেটর ড. আবদুছ ছালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএই খামারবাড়ি ঢাকার অতিরিক্ত পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন।

কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্রপ জোনিং প্রকল্পের ক্রপ এক্সপার্ট ড. আজিজ জিলানী চৌধুরী। আর ক্রপ জোনিং সিস্টেমের ওপর বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন ক্রপ জোনিং প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবিদ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া খামারি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের বিস্তারিত তুলে ধরেন ক্রপ জোনিং প্রকল্প পরিচালক (কম্পিউটার ও জিআইএস ইউনিট) হাসান হামিদুর রহমান। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের কৃষিতে টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

যশোরে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৩২ এএম
যশোরে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক
যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া এলাকা খেত ধান কাটছেন কৃষিশ্রমিকরা। খবরের কাগজ

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকা কেশবপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ না হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার ধান উৎপাদন কম হয়েছে। তবে এ উপজেলার শতাধিক জলাবদ্ধ বিলের পানি নিষ্কাশন করে যে বোরো আবাদ করা হয়েছে, সেসব খেতে শেষ মুহূর্তে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে ওইসব কৃষক খুশি। এর মধ্যে ‘ভারতীয় রড মিনিকেট’ নামে ধান আবাদকালে একই সময়ে সব ধানের শীষ বের না হওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েন কৃষক। আর যারা জলাবদ্ধতার কারণে বোরো ধান চাষ করতে পারেননি, তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। 

কৃষকরা জানান, দেশের মধ্যে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনের উদ্বৃত্ত উপজেলা হিসেবে কেশবপুরের খ্যাতি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখানকার প্রধান নদনদী পলিতে ভরাট হওয়ায় ২০ বছর ধরে ৭ ইউনিয়নের শতাধিক বিলে প্রায় প্রতিবছরই বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ বছরও একই অবস্থায় ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়নি। এর মধ্যে বছরের একমাত্র ফসল বোরো আবাদের জন্য কৃষকরা আগেভাগেই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শতাধিক বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়ে আবাদ করেন। বিলের ধানখেতের মাঠগুলো সোনালি রঙের আভায় এক অপরূপ গড়ে ওঠে। সেচ, আগাছা পরিষ্কারসহ সব কাজ সম্পন্ন করে এখন অধিকাংশের ধান ঘরে তোলা হয়েছে। তবে এখনো মাড়াইয়ের কাজ অল্পকিছু বাকি আছে। 

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৭৯০ হেক্টর। জলাবদ্ধতার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০ হেক্টর কম জমিতে ধানের চাষ হয়। পুরো উপজেলায় এবার হাইব্রিড, উফশী জাতের ব্রি-২৮, ব্রি-৫০, ব্রি-৬৩, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৮ ও ব্রি-ধান-১০০ এবং ভারতীয় রড মিনিকেট ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড-৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও উফশী-৮ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমি। 

সূত্র আরও জানায়, উপজেলায় ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছিল ৮৫ হাজার ৯৯৮ টন। কিন্তু ২ হাজার ৫০ হেক্টর কম জমিতে চাষ না হওয়ায় ৩৩ কোটি ৫৭ হাজার টাকার ধান উৎপাদন হয়নি। উপজেলার বাগডাঙ্গা, পাঁজিয়া, কালীচরণপুর, বিলখুকশিয়া, কাটাখালী, মনোহরনগর, নারায়ণপুরসহ ৫০ বিলে জলাবদ্ধতার কারণে এবার বোরো আবাদ হয়নি।

জলাবদ্ধ এলাকার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম, মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, তাদের গরালিয়া বিলের জমি ঘের মালিক সেলিমুজ্জামান আসাদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে। ঘেরমালিক মাছ চাষের জন্য প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ঘের ভরাট করে। আবার ইরি-বোরো মৌসুমে শ্যালোমেশিন দিয়ে ঘেরের পানি নিষ্কাশন করলে কৃষকরা ধান আবাদ করে। জলাবদ্ধতার কারণে বিলের দেড় হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। দেউলি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, তাদের বাগদা-দেউলি বিলের এক হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়নি। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কিরণ্ময় সরকার বলেন, ‘নদী ভরাটে সব বিলের পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধানের কম আবাদ হয়। ফলে এবারের ফলন অনুযায়ী ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার ধান কম উৎপাদন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবাদ করা এলাকার কৃষকের চাহিদামতো সার ও বীজের কোনো ঘাটতি ছিল না। আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। এ জন্য এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়।’

মাশরুম চাষে শাহীনের সাফল্য

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:২৫ এএম
আপডেট: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৩২ এএম
মাশরুম চাষে শাহীনের সাফল্য
নিজের খামার অজূফা মাশরুম সেন্টারে শাহীন মোল্লা। খবরের কাগজ

নরসিংদীর সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের শাহীন মোল্লা মালয়েশিয়া থেকে ফিরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথমে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। নিজের মায়ের নামে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ গড়ে তোলেন। এখান থেকে দেশ-বিদেশে মাশরুম সরবরাহ করছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। নারী-পুরুষ মিলে কাজ করছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। আছে ঢাকায় শোরুমও। শাহীনের সাফল্য দেখে তরুণরা আগ্রহী হচ্ছেন। সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চান তিনি।

শাহীন মোল্লা প্রায় এক যুগ আগে মালয়েশিয়ায় গিয়ে জাপানি এক বন্ধুর কাছ থেকে মাশরুমের চাষ শিখেছিলেন। পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে, সংসারের টানাপোড়েন সামলাতে না পেরে খালি হাতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তবে হাল না ছেড়ে, জাপানি বন্ধুর শেখানো দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নরসিংদীতে মাশরুম চাষে  মনোযোগ দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ নামে একটি মাশরুম খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। এখান তৈরি হচ্ছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন এখানে এসে মাশরুম চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন।

ওমর ফারুক নামে এক তরুণ জানান, তিনি পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। চলতি পথে উদ্যোক্তা শাহীন মোল্লার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি বলেন, ‘শাহীন ভাইয়ের মাশরুম চাষ দেখে আমারও আগ্রহ জন্মায়।’ এর পর তিনি প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ৩ হাজার বীজের একটি মাশরুম প্রকল্প শুরু করেন। মাঝে মধ্যে কাঁঠালিয়া গ্রামে গিয়ে ‘অজূফা মাশরুম সেন্টার’ থেকে পরামর্শ নেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার উৎপাদিত মাশরুম বিক্রিতে শাহীন ভাই সব সময় সহায়তা করেন।’

মাধবদী-খড়িয়া সড়কের পাশে, কাঁঠালিয়া গ্রামে অবস্থিত ‘অজূফা মাশরুম সেন্টারে’ বর্তমানে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মী চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারীকর্মীরা স্পন ও বীজ তৈরি এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন বলে জানান স্থানীয় শ্রমিকরা। শাহীনের সহকারী হিসেবে স্ত্রীকেও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি এখন শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দেওয়াসহ সার্বিক তদারকির পাশাপাশি বীজ রোপণের কাজ করছেন।

শাহীন বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে বিদেশ থেকে ফিরে মাশরুম চাষ শুরু করি। শুরুতে বিক্রি ও জনবল সংকটে অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন আমার উৎপাদিত মাশরুম দেশ-বিদেশে যাচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক মাশরুম চাষি তৈরি করেছি। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও বীজ সরবরাহ করে সহযোগিতা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। 

বছরজুড়ে আমার সেন্টার থেকে মাশরুম বাজারজাত করছি। বাড়ির নিচতলায় অফিস রয়েছে, আর ঢাকায় রয়েছে শোরুম। আমি মাশরুম দিয়ে স্যুপ, আচারসহ নানা ধরনের অর্গানিক পণ্য তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছি।’

কোরবানির পশু বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে খামারিরা

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:১১ এএম
আপডেট: ০১ জুন ২০২৫, ১০:১১ এএম
কোরবানির পশু বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে খামারিরা
ছবি: খবরের কাগজ

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিপুলসংখ্যক গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ পশু মজুত থাকলেও বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে খামারিরা। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাইকার না আসায় লোকসানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলবে। অনুমোদন ছাড়া কোথাও অস্থায়ী হাট বসলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আনোয়ারুল হক জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০টি ষাঁড়, বলদ ও গাভি, প্রায় ৪ লাখ ছাগল, ৩ হাজার ৮৭৫টি মহিষ ও ৬৭ হাজার ৩০৩টি ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার গবাদিপশুর সংখ্যা ৪৩ হাজার বেশি। তিনি আরও জানান, জেলার কোরবানির চাহিদা ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৪১টি। অতিরিক্ত ৩ লাখ ৯৬ হাজার  ৬৬৩টি পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে। এসব পশুর বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, জেলার খামারিরা এখন দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণ করে ভালো আয় করছেন। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রান্তিক খামারিদের পাশাপাশি অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলেছেন। জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়। এখানকার পশুগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। তবে খামারিরা বলছেন, খাদ্য, ওষুধসহ সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তারা কোরবানির হাটে ন্যায্য দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

সদর উপজেলার শিলান্দা গ্রামের খামারি মজনু সরকার বলেন, ‘এ বছর তিনটি শাহীওয়াল জাতের গরু পালন করছি। ঈদের বাকি মাত্র কয়েক দিন, কিন্তু এখনো কোনো ক্রেতা পাইনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’ পাশের এলাকার বিদেশফেরত মনির হোসেন বলেন, ‘অনেক গরু লালন করেছি। কিন্তু বড় হাটে তোলার ব্যবস্থা নেই। এখনো কোনো ব্যাপারী আসেনি। গরুগুলোর পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। ভালো দামে বিক্রি করতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’ রানীগ্রামের খান অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক নিলয় খান বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেছি। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেশি বলতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা দাম কম বলছে।’

এদিকে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসছেন। হাটে পশু আমদানি থাকলেও এখনো বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। অনেকে গরু দেখে যাচ্ছেন, তবে কেউ কেউ পরিস্থিতি বুঝে কিনছেন। স্থানীয়রা বলছেন, আরও কয়েক দিন পর বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে।

হাটে আসা ব্যাপারী আব্দুস সাত্তার, আজগর আলী ও মোতালেব হোসেন বলেন, ‘মহাসড়ক ছাড়া গরু পরিবহনের বিকল্প পথ নেই। মাঝে মাঝে কড্ডা মহাসড়কে ডাকাতি হয়। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া নিরাপদে গরু পরিবহন করা সম্ভব নয়। আমরা ডাকাতির কবলে পড়তে চাই না।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘গত রোজার ঈদে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এবারও যেন ডাকাতি বা চাঁদাবাজি না হয়, সে জন্য জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’ বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের সুপার শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘পশুবাহী যানবাহনের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গণপতি রায় বলেন, ‘অনুমোদিত হাট ছাড়া অন্য কোথাও অস্থায়ী হাট বসালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’