ঢাকা ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১

হোন্ডা উন্মোচন করল জিরো সিরিজের গাড়ি

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
হোন্ডা উন্মোচন করল জিরো সিরিজের গাড়ি
হোন্ডার জিরো সিরিজের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘হোন্ডা জিরো সেলুন’ ও ‘হোন্ডা জিরো এসইউভি’

প্রযুক্তি ও গাড়ি শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল জাপানি অটোমোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোন্ডা। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো (সিইএস) ২০২৫-এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন ‘হোন্ডা জিরো’ সিরিজের দুটি আকর্ষণীয় প্রোটোটাইপ উন্মোচন করেছে। এগুলো হলো ‘হোন্ডা জিরো সেলুন’ ও ‘হোন্ডা জিরো এসইউভি’। এ দুটি মডেল ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে আসবে।

এই গাড়িগুলোতে হোন্ডার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ‘আসিমো ওএস (ASIMO OS)’ ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই নতুন প্রজন্মের গাড়িগুলোর চালিকাশক্তি। হোন্ডার বিখ্যাত হিউম্যানয়েড রোবট ‘আসিমো’ নামে এই অপারেটিং সিস্টেমের নামকরণ করা হয়েছে।

এই সিরিজের প্রধান আকর্ষণ হোন্ডা জিরো স্যালুন। স্পোর্টি ডিজাইনের এই মডেলের রয়েছে প্রশস্ত ইন্টেরিয়র। হোন্ডার ডেডিকেটেড ইভি প্ল্যাটফর্মে তৈরি এই গাড়ি লেভেল থ্রি অটোমেটেড ড্রাইভিং ফিচারসহ ‘আইজ-অফ’ (eyes-off)’ প্রযুক্তি রয়েছে। এর ফলে ড্রাইভিং হবে আরও নিরাপদ। আসিমো ওএস এবং উন্নত স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের পার্সোনালাইজড ড্রাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা দেবে।

অন্যদিকে, হোন্ডা জিরো এসইউভি ‘স্পেস-হাব’ ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত। এসইউভিকে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নমনীয় স্থান হিসেবে নতুন করে কল্পনা করা হয়েছে এই মডেলে। প্রশস্ত কেবিন, চমৎকার দৃশ্যমানতা ও ব্যবহারযোগ্যতার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। রোবোটিক্স থেকে অনুপ্রাণিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই এসইউভিকে দেবে আরও উন্নত স্থিতিশীলতা।

হোন্ডা জিরো সেলুন গত বছর একই আয়োজনে প্রকাশ করা একটি কনসেপ্ট কারের হালনাগাদ সংস্করণ। উভয় মডেলকেই প্রোটোটাইপ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

উভয় মডেলে ব্যবহৃত আসিমো ওএস উন্নত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং, ইনফোটেইনমেন্ট ও অন্যান্য সিস্টেমকে সমন্বয় করবে। ওভার দ্য এয়ার আপডেটের মাধ্যমে ডিজিটাল অভিজ্ঞতা, ডায়নামিক ড্রাইভিং ও পারসোনালাইজড পরিষেবাগুলোর মতো সুবিধা আরও উন্নত করা যাবে।

স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিংয়ের জন্য হোন্ডার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে লেভেল ৩ প্রযুক্তির আরও উন্নতি ও আনসুপারভাইজড লার্নিং ও বিহেভিয়ারে মডেলিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তির ব্যবহার। এর মাধ্যমে সুরক্ষা ও ড্রাইভার সহায়তা আরও বাড়বে এবং সব পরিস্থিতিতে ‘আইজ অফ’ ড্রাইভিং সম্ভব হবে।

গাড়ির পাশাপাশি হোন্ডা এনার্জি সার্ভিস উন্নয়নে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইভি চার্জিং নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও স্মার্ট হোম এনার্জি সলিউশন। হোন্ডা জিরো সিরিজের গাড়িগুলো ভার্চুয়াল পাওয়ার প্লান্ট হিসেবে কাজ করবে। হোন্ডা জিরো সিরিজের গাড়িগুলো ভার্চুয়াল পাওয়ার প্লান্ট হিসেবে কাজ করবে। এগুলো ঘরোয়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে কার্যকর করার পাশাপাশি গ্রিডের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। উত্তর আমেরিকায় ২০২৬ সালে এই সিরিজের উৎপাদন শুরু হবে এবং পরে জাপান ও ইউরোপেও এটি পাওয়া যাবে।

জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্কুটারের

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ এএম
জনপ্রিয়তা বাড়ছে স্কুটারের
বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে স্কুটারের জনপ্রিয়তা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে স্কুটারের জনপ্রিয়তা। এক সময় স্কুটারকে নারীদের বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন নারী-পুরুষনির্বিশেষে স্কুটার ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। শহুরে জীবনে যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো, সহজ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও জ্বালানিসাশ্রয়ী হওয়ায় স্কুটারের ব্যবহার বাড়ছে।

কেন স্কুটারের চাহিদা বাড়ছে? 
স্কুটারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হালকা ওজন ও সহজ ব্যবহার। স্কুটারে স্বয়ংক্রিয় গিয়ার সিস্টেম থাকায় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় এটি চালানো সহজ। পার্কিংয়ের জন্য স্কুটারের কম জায়গা লাগে। এতে জ্বালানি খরচও কম।

নগরায়ণের কারণে ব্যক্তিগত পরিবহনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে স্কুটার সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিরাপদ ও আরামদায়ক হিসেবে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার কাছে স্কুটারের চাহিদা বাড়ছে।

এ ছাড়া স্কুটারের ডিজাইন ও ফ্যাশনেবল লুক তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। নারী চালকদের মধ্যেও স্কুটারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এটি মোটরসাইকেলের তুলনায় সহজতর ও নিরাপদ। 

কাদের মধ্যে স্কুটারের চাহিদা বেশি?

কর্মজীবী নারীরা যানজট এড়িয়ে অফিসে যাতায়াত ও ব্যক্তিগত কাজে বেছে নিচ্ছেন স্কুটার। যানজটপূর্ণ শহরে এটি তাদের দৈনন্দিন যাতায়াতে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যেও স্কুটারের জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর বাহন হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর চাহিদা বাড়ছে।

বর্তমানে অনলাইন ডেলিভারি সেবায় স্কুটারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি ও ই-কমার্স ডেলিভারি কর্মীদের জন্য এটি একটি আদর্শ বাহন হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত ও সহজে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পৌঁছে দিতে পারছেন। শহরের অলিগলি ও যানজটপূর্ণ রাস্তায় দ্রুত পণ্য পৌঁছে দিতে স্কুটারের বিকল্প নেই।

মোটরসাইকেলের তুলনায় স্কুটারের গঠন ও স্বয়ংক্রিয় গিয়ার এটিকে আরও বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক করে তুলেছে। তাই যারা মোটরসাইকেলের চেয়ে নিরাপদ ভ্রমণ পছন্দ করেন, তারাও এখন স্কুটারের দিকে ঝুঁকছেন।

শহুরে জীবনে যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। এই যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য স্কুটার একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, স্কুটারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা শহুরে পরিবহন ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বাংলাদেশের বাজারে কোন ধরনের স্কুটার পাওয়া যায়?
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ৫০ সিসি থেকে ১৬০ সিসি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষমতার স্কুটার পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৮০ সিসি থেকে ১২৫ সিসির স্কুটারগুলো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্র্যান্ডভেদে স্কুটারের দাম পড়বে ৮০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। রানার, হিরো, টিভিএস, ইয়ামাহা, হোন্ডা, সুজুকি ও ভেসপাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুটার এখানে পাওয়া যায়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের স্কুটারগুলো বিভিন্ন মডেল ও ডিজাইনে উপলভ্য। 

কমিউটার স্কুটার
কমিউটার স্কুটার সাধারণত দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী হয়ে থাকে। এগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, হালকা ও জ্বালানি খরচ কম। এ ধরনের স্কুটার অফিসগামী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়।
জনপ্রিয় মডেল: ইয়ামাহা রে জেডআর, সুজুকি আ্যাকসেস ও হোন্ডা ডিও। 

ইলেকট্রিক স্কুটার
পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ইলেকট্রিক স্কুটার, যেগুলোয় ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এ ধরনের  বাহনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হয়ে থাকে। শহরের ছোট দূরত্বে চলাচলের জন্য পরিবেশসচেতন ব্যক্তিরা ইলেকট্রিক স্কুটারের দিকে ঝুঁকছেন।
জনপ্রিয় মডেল: হিরো ইলেকট্রিক অপটিমা, ওয়ালটন টাকাইন। 

স্পোর্টি স্কুটার
তরুণ প্রজন্মের কাছে স্কুটার ফ্যাশন ও ব্যক্তিত্বের একটি অংশ হয়ে উঠছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাজারে এসেছে স্পোর্টি স্কুটার। আধুনিক ডিজাইন, বেশি গতি ও স্টাইলিশ লুকের জন্য এই স্কুটারগুলো তরুণ এবং ফ্যাশনপ্রিয় চালকদের মধ্যে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
শক্তিশালী ইঞ্জিন ও উন্নত ট্রান্সমিশন থাকার কারণে স্পোর্টি স্কুটারগুলো সাধারণ স্কুটারের চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারে। আধুনিক হেডলাইট, টেললাইট, অ্যালয় হুইল ও বিভিন্ন রঙের ব্যবহার এই স্কুটারগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। উচ্চ গতিতে চলার জন্য উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম ও আরামদায়ক রাইডের জন্য উন্নত সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়। আধুনিক তথ্য প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল কনসোল বা ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেল থাকে।জনপ্রিয় মডেল:  ইয়ামাহা অ্যরোক্ম ১৫৫, এপ্রিলা এসআর ১৫০।

হেভি ডিউটি স্কুটার  
দেশে হেভি ডিউটি স্কুটারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শক্তিশালী ইঞ্জিন ও ভারী জিনিস বহনের সুবিধার কারণে পেশাদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে এসব স্কুটার দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  

হেভি ডিউটি স্কুটারগুলোয় সাধারণত ১২৫ সিসি বা তার চেয়েও শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে স্কুটারগুলো কেবল দৈনন্দিন যাতায়াতেই নয়, ভারী পণ্য পরিবহনের কাজেও সমান কার্যকর। এসব স্কুটারে স্থিতিশীল চেসিস, উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম ও বড় লোড ক্যারিয়ার যুক্ত থাকে, যা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিশেষভাবে সহায়ক হয়। 
জনপ্রিয় মডেল: হোন্ডা অ্যাকটিভা ১২৫, টিভিএস জুপিটার।

ছোট আকারের স্কুটার  
আকারে ছোট, হালকা ও সহজ নিয়ন্ত্রণযোগ্য হওয়ায় ছোট আকারের স্কুটার নতুন চালক ও নারীদের জন্য আদর্শ পরিবহন মাধ্যম হয়ে উঠেছে।    
ছোট আকারের স্কুটারগুলো সাধারণত আকারে কমপ্যাক্ট হয়। ফলে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে চালানো কিংবা পার্কিং করা সহজ হয়। স্কুটারগুলোর স্টাইলিশ ডিজাইন, জ্বালানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় আসন নতুন চালকদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।  ছোট আকারের স্কুটারগুলো শিক্ষার্থী, গৃহিণী কিংবা অফিসগামী নারী চালকরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
জনপ্রিয় মডেল: সুজুকি লেটস, হিরো প্লেজার।

স্কুটার ব্যবহারের মাসিক খরচ কেমন?
স্কুটার সাধারণত প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার মাইলেজ দেয়। ফলে জ্বালানি খরচ মোটরসাইকেলের তুলনায় সাশ্রয়ী হয়। মাসিক খরচ নির্ভর করে দৈনিক ব্যবহারের ওপর। এ ছাড়া স্কুটারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তুলনামূলক কম।

বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় ১৩০ টাকা। প্রতি কিলোমিটার খরচ হয় ২.৮০ থেকে ৩.৫০ টাকা পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার চললে প্রতি মাসে জ্বালানির জন্য খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা। 

ইঞ্জিনকে সচল রাখতে ও পারফরম্যান্স ঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। এর খরচ স্কুটারের মডেল ও ব্যবহৃত অয়েলের গ্রেডের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ১ হাজার কিলোমিটার চললে একবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। এতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়। টায়ার ও ব্রেক প্যাড বছরে এক থেকে দুবার পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। 

টায়ারের প্রেশার, ব্রেক চেক ও স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তনের মতো ছোটখাটো সার্ভিসিং প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফ্রি সার্ভিসিং সেবা দিয়ে থাকে।

মোটরযান আইন অনুযায়ী, রাস্তায় স্কুটার চালাতে হলে বিমা করানো বাধ্যতামূলক। বাৎসরিক প্রিমিয়াম দিতে হয়। রোড ট্যাক্স বাৎসরিক বা দ্বিবার্ষিক হতে পারে, যা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।

বৈদ্যুতিক স্কুটার
যারা বৈদ্যুতিক স্কুটার ব্যবহার করেন, তাদের জন্য জ্বালানি খরচ আরও কম। প্রতি চার্জে স্কুটার ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার চলে। বৈদ্যুতিক স্কুটারের প্রতি কিলোমিটার খরচ প্রায় ১ টাকা।

ভারতের প্রথম সৌরচালিত গাড়ি বাজারে

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২০ এএম
ভারতের প্রথম সৌরচালিত গাড়ি বাজারে
ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম সৌরশক্তি চালিত গাড়ি ‘ইভা’। ছবি: সংগৃহীত

ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম সৌরশক্তি চালিত গাড়ি বাজারে নিয়ে এসেছে। গাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইভা’। গত শনিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভারত মোবিলিটি গ্লোবাল এক্সপো-২০২৫’-এ উন্মোচন করা হয়েছে গাড়িটি। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভাইভ মোবিলিটি গাড়িটি প্রস্তুত করেছে।

গাড়ির দাম ও মডেল
ভারতীয় মুদ্রায় ইভার দাম পড়বে ৩ লাখ ২৫ হাজার রুপি থেকে ৬ লাখ রুপি পর্যন্ত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা থেকে ৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। তিনটি মডেলে পাওয়া যাবে গাড়িটি। এগুলো মধ্যে রয়েছে নোভা (৯ কিলোওয়াট আওয়ার), স্টেলা (১২ দশমিক ৬ কিলোওয়াট আওয়ার) ও ভেগা (১৮ কিলোওয়াট আওয়ার)।

চার্জিং সুবিধা ও ব্যাটারি সক্ষমতা
এই গাড়ি সম্পূর্ণ সৌরশক্তিতে চলে। এর ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হলে সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। এসি চালু থাকলেও একই দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব। মূল ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে ব্যাকআপ ব্যাটারি সক্রিয় হবে। এর সাহায্যে আরও ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সূর্যের আলো কম থাকলে গ্রাহকরা চার্জারের সাহায্যেও গাড়িটি চার্জ করতে পারবেন।

ওয়ারেন্টি ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
ভাইভ মোবিলিটি গ্রাহকদের জন্য ইভার প্রতিটি মডেলের ক্ষেত্রে তিন বছরের ওয়ারেন্টি ও ব্যাটারির জন্য পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি দেবে।

মেলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভাইভ মোবিলিটির প্রধান নির্বাহী নীলেশ বাজাজ বলেন, ‘ইভা শুধু একটি গাড়ি নয়, বরং ভারতের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য এটি একটি বিপ্লব। ভাইভ মোবিলিটি ও ভারতের অটোমোবাইল সব সময়ই আবিষ্কার, স্থায়িত্ব এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পক্ষে। ইভা ভারতকে সেই ধারণাই তুলে ধরছে। টেকসই যানবাহনের পথে এটি আমাদের বড় একটি পদক্ষেপ।’

ভাইভ মোবিলিটির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সৌরভ মেহতা জানান, ‘সৌর প্যানেলের সঙ্গে বৈদ্যুতিক মোটরের সংযোগ করা বেশ জটিল একটি বিষয়। এই প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণার পর আমরা সফল হয়েছি। ইভার প্রতিটি মডেলের হার্ডওয়্যার মজবুত ও সফটওয়্যার যথেষ্ট উন্নত।’

গতি ও ব্যবহারযোগ্যতা
গাড়িটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিবেগ তুলতে সক্ষম। শহুরে চলাচলের জন্য এটি আদর্শ পরিবহন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশেই তৈরি হচ্ছে

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশেই তৈরি হচ্ছে
বছরে ৮ লাখের মতো মোটরসাইকেল উৎপাদন হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

এক সময়ে আমদানি করে দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা মেটানো হতো। এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। বিশ্বের নামকরা হোন্ডা, হিরো, ইয়ামাহা, সুজুকি, টিভিএস, বাজাজসহ বিভিন্ন কোম্পানি এ দেশেই গুণগতমানসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। চাহিদার ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বছরে ৮ লাখের মতো মোটরসাইকেল উৎপাদন হচ্ছে। বিক্রিও এর কাছাকাছি চলে এসেছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে এই শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। হাতছানি দিচ্ছে এই শিল্পের সম্ভাবনা। 

আগে মোটরসাইকেলের চাহিদা পূরণ করতে জাপান ও ভারতের আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হতো। এতে অনেক ডলারও ব্যয় হতো। কিন্তু মাত্র পাঁচ থেকে সাত বছরে আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মানুষের কাজের সুযোগ। বর্তমানে জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহা, ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, টিভিএস ও হিরো এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানার অটোমোবাইলসও মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আগের চেয়ে দামও কমেছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হোন্ডা কোম্পানির শোরুমের নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এক লাখ টাকার মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির মোটরসাইকেল পাওয়ায় যাচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কম আয়ের ক্রেতারা। নিবন্ধন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ সুযোগ নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। কারণ তারা উচ্চমূল্যের বাইক আমদানি করছেন। ধনীরা তা কিনে নিচ্ছেন। বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, মোটরসাইকেল ব্যক্তিগত গাড়ি হওয়ায় এর নিবন্ধন খরচ বেশি।

বিক্রেতারা বলেন, সরকার গত ৯ জানুয়ারি অন্য পণ্যের মতো মোটরসাইকেল উৎপাদনকারীদের করপোরেট কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে নতুন চালানে আসা মোটরসাইকেলের দাম আরও বেশি পড়তে পারে।

দেশে এসিআই মটরসসহ অনেক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। তারা বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে নিজেদের কারখানায় মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলিং (সংযোজন) করে। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে দেশে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ডলারসংকটের কারণে অন্য পণ্যের মতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে সমস্যায় পড়েন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এতে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমে যায়। ফলে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশের খরচও বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলো বাড়তি খরচ সামাল দিতে মোটরসাইকেলের দাম বাড়াতে শুরু করে। পাশাপাশি দেশে যেসব প্রস্তুতকৃত (আমদানি করা) মোটরসাইকেল আসত, সেগুলোর আমদানিতেও প্রভাব পড়েছে। ব্র্যান্ডভেদে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দাম বেড়েছে। বিক্রি কমেছে ১৫০ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) নিচের মোটরসাইকেলের। দাম বেড়েছে ১৫০ সিসি বা তার বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেলের। বর্তমানে দেশের মোট বাজারের অর্ধেকের বেশি ১৫০ সিসি বা তার বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেলের দখলে।

এসিআই মটরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফা হ আনসারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু যুবসম্প্রদায়ের সংখ্যা আনুপাতিকহারে অন্য দেশের তুলনায় বেশি। এ জন্য মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, এতে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। সময়ও কম লাগে। এ জন্য গত বছর মোটরসাইকেল বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মোটরসাইকেল খাতের বড় সমস্যা হলো উচ্চ শুল্কহার। এটা অর্থনীতির জন্য সুবিধাজনক নয়। তাই আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। এটা করা হলে মানুষ কম দামে মোটরসাইকেল কিনতে পারবে। বর্তমানে দেশেই বছরে প্রায় ৫ লাখ মোটরসাইকেল বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। আমরা যারা দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করছি, তারা সবাই পার্টস আমদানি করে দেশে অ্যাসেম্বলিং করি। আমদানি করা মোটরসাইকেলে উৎপাদন খরচ প্রায় একই পড়ে। বিদেশি প্রকৌশলী ও টেকনেশিয়ানের সহযোগিতায় দেশেই ভালো কোয়ালিটির মোটরসাইকেল উৎপাদন হচ্ছে। 

মোটরসাইকেলস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমএমইএবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মোটরসাইকেল হচ্ছে প্রধান পরিবহন। যেখানে ক্রেতারা তুলনামূলক স্বল্প আয়ের। কিন্তু উচ্চমাত্রার ফি আরোপ করায় গ্রামের মানুষের জন্য অনেক বেশি বোঝা হয়ে যাবে। বাড়তি অর্থ জোগাড় করা তাদের জন্য কঠিন। তাই ফি কমানো দরকার। এতে বাইকের নিবন্ধন বাড়বে। ফলে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণ হবে। কারণ উচ্চ করহারের কারণে নিবন্ধনও কম হচ্ছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব মোটরসাইকেল শিল্পেও পড়েছে। 

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। সরকার বর্তমানে মোটরসাইকেল রপ্তানিতে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। উৎপাদন খরচ কমানোর ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। মোটরসাইকেলশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০১৮ অনুসারে, বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ১০ লাখ ইউনিট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে স্থানীয় মার্কেটে বিক্রি কমে গেছে। বর্তমানে ৮ লাখে এসেছে। 
রপ্তানিও হচ্ছে মোটরসাইকেল: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া প্ল্যান্ট থেকে বিদেশে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করেছে হোন্ডা কোম্পানি। অর্থনৈতিকসংকটের এই সময়ে হোন্ডার মোটরসাইকেল রপ্তানি দেশের জন্য আশীর্বাদ বলা যায়। কারণ ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএইচএল) গঠন করা হয়েছে। দেশে আরও বেশি বড় কারখানা গড়ে উঠলে, উৎপাদন বেশি হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

২০২১ সাল থেকে মোটরসাইকেল, এসি, রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যন্ত্রপাতি আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং আয়ের ওপর ১০ শতাংশ কর দেওয়ার সুবিধা পাচ্ছিল। এই সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকার কথা ছিল। গত ৯ জানুয়ারি নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেই সুবিধা বাতিল করে ২০ শতাংশ করেছে। এর ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। নতুন গাড়ি কিনে সড়কে নামাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধন ফি খুবই বেশি। তাই এটি না কমালে মোটরসাইকেলের দাম আরও বেড়ে যাবে।

সাক্ষাৎকার দেশেই তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের মোটরসাইকেল

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
দেশেই তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের মোটরসাইকেল
এসিআই মোটরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফা হ আনসারী। ছবি: খবরের কাগজ

একসময় আমদানি করা মোটরসাইকেল দিয়েই দেশে চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু গত এক দশকে পাল্টে গেছে চিত্র। বর্তমানে চাহিদার ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেলই দেশে উৎপাদন হচ্ছে। এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমস্যাও কিছু রয়েছে। এ শিল্পের পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে এসিআই মোটরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফা হ আনসারীর সঙ্গে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. ফা হ আনসারী: আমাদের দেশের মোটরসাইকেল শিল্পের কারখানার কথা শুনলে আপনি জেনে খুশি হবেন যে, চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। তার কারণ হলো আমাদের দেশে যে ইয়াং জেনারেশন আছে তারা কৃষিতে বিনিয়োগ করছে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা হচ্ছে। কাজের গতি বাড়াতে তারা বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলকে বেছে নিচ্ছেন। তাই এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। 

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল শিল্প বিকাশে প্রধান বাঁধা কি বলে আপনি মনে করেন ?
ড. ফা হ আনসারী: আমাদের দেশে শিল্প বিকাশে প্রধান বাধা হচ্ছে সরকার যে কমিটমেন্ট করে তা ঠিক রাখে না। ফলে আমরা যে বিনিয়োগ করি মাঝপথে বিপাকে পড়ি। এতে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, বিদেশি কোম্পানিও নিরুৎসাহিত হয়ে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যায়। 

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়নে কোন ধরনের কর কাঠামো দরকার?
ড. ফা হ আনসারী: আমাদের দেশে এ শিল্পে বেশি করে কর আরোপ করা হয়েছে। ট্যাক্স ২০ শতাংশ হলেও করপোরেট ট্যাক্স সাড়ে ২৭ শতাংশ। একই সঙ্গে কলকারখানা করার জন্য আগে থেকে যে ৫ শতাংশ ট্যাক্স ফেরত পেতাম এক এসআরও জারি করে হঠাৎ করে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার মানে আমরা হোঁচট খাচ্ছি। ফলে আমাদের জন্য মোটরসাইকেল শিল্প চ্যালেঞ্জ -এর মুখে পড়বে। কারণ মোটরসাইকেলের খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিক্রি কমে যাবে। কোনো লাভ থাকবে না। ফলে যারা ভবিষ্যতে বিনিয়োগে আসার পরিকল্পনা করবে তারা এ অবস্থা দেখে পিছিয়ে যাবে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্পের শুরু ও এর বিকাশ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. ফা হ আনসারী: আমাদের দেশে অটোমোবাইল বিশেষ করে মোটরসাইকেল শিল্পে ভালোই বিকাশ ঘটেছে। পাঁচ বছর আগে সরকার এই শিল্পের উন্নয়নে ভালোভাবে উদ্যোগ নেয়। তখন বলা হয়েছিল ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদন হবে। কিন্তু বর্তমানে গতি কমে গেছে। ৮ লাখ হবে। আমরা হোঁচট খাচ্ছি। এভাবে হোঁচট খেলে অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। গতিটা কমে যাবে। ফলে গ্রাহকদের বেশি দামে মোটরসাইকেল কিনতে হবে। 

খবরের কাগজ: বর্তমানে অটোমোবাইল শিল্প কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং এর প্রতিকার কীভাবে হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ড. ফা হ আনসারী: আমি মনে করি সরকারের পলিসি (নীতি) থাকতে হবে অপরিবর্তিত। কারণ আমরা যারা ৫ থেকে ৭ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছিলাম, সরকার যে কমিটমেন্ট করেছিল তা ঠিক রাখতে হবে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল নিয়ে যেসব প্রোপাগান্ডা ছিল তা দূর করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য ইয়াং জেনারেশনের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে দেশের মোটরসাইকেল শিল্প বিকাশ ঘটবে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্পের বর্তমান বাজার কত এবং এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার কেমন?
ড. ফা হ আনসারী: বছরে ৬ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রবৃদ্ধি গত দেড় বছর থেকে কমে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ হলো ডলারের ঊর্ধ্বগতি। এর কারণে মোটরসাইকেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ডলারের কারণেই আমরা যারা মেনুফ্যাকচার (উৎপাদন) করছি বা আমদানি করছি তাতে অনেক দাম বেড়ে গেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমাদের দেশে যাদের পুঁজি কম তারা আগ্রহ হারাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

খবরের কাগজ: দেশীয় এবং আমদানি করা গাড়ির মধ্যে কোনটির বাজার শেয়ার বেশি?
ড. ফা হ আনসারী: দেশি মোটরসাইকেলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমদানিও হচ্ছে। তবে দেশে উৎপাদন বলতে যা বুঝি তা হচ্ছে খুচরা যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন আমদানি করে দেশে ফ্রেম তৈরি করে তাতে অ্যাসেমব্লিং (সংযোজন) করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কিন্তু উন্নত মানের মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে। এগুলো দেশের মাটিতে ও সড়কে যথেষ্ট সহনশীল। 

খবরের কাগজ: ডলারসংকটের কারণে এখনো অনেকেই ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। গাড়ি আমদানি ও যন্ত্রাংশ কেনায় এর কেমন প্রভাব পড়েছে?
ড. ফা হ আনসারী: এই সমস্যাটা এখনো রয়ে গেছে। একসময় ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা। কয়েক বছরে বাড়তে বাড়তে তা ১২৫ টাকায় উঠেছে। এত পার্থক্যের কারণে মোটরসাইকেলের দামও অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে শিল্প করি। কিন্তু আগে ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থাকলেও এখন ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে হয়ে গেছে। ফলে মোটরসাইকেলের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশে অটোমোবাইল প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না।
ড. ফা হ আনসারী: এ দেশে অবশ্যই অটোমোবাইল প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে অটোমোবাইল শিল্প স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে। আমরা অনেকেই চ্যাসিস বানাচ্ছি। ফ্রেম বানাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে রং করছি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আরও পার্টস বানাব। এ ক্ষেত্রে ভালো উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটেছে। 

খবরের কাগজ: স্থানীয় অটোমোবাইল নির্মাতারা কোন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং তা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ?
ড. ফা হ আনসারী: বাংলাদেশে উন্নত মানের মোটরসাইকেল উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদেশি ব্র্যান্ড। এসব কারখানায় বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান কাজ করছেন। কাজেই ভারত বা জাপানে যে মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশে যে মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারপরও আমাদের দেশের ছেলেরা বিদেশে যাচ্ছে। অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে ফিরে এসে তা কাজে লাগাচ্ছে। তাই বিদেশি মোটরসাইকেল ও দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেলের কোয়ালিটির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। 

খবরের কাগজ: বাংলাদেশের অটোমোবাইল বাজারে কোন ধরনের গাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
ড. ফা হ আনসারী: উচ্চ সিসির চাহিদা বেশি, বিশেষ করে ১৫০ সিসির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মার্কেট লিডার হচ্ছে এসিআইয়ের ইয়ামাহা মোটরসাইকেল। বাংলাদেশে ইয়ামাহার কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার মোটরসাইকেল। বাংলাদেশে ইয়ামাহার কারখানাটি ইয়ামাহা জাপানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নির্মিত। উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে গুণগতমান নিশ্চিত করতে নেওয়া হয় তাদের গুণগতমান ও প্রযুক্তিগত সহায়তা। এ জন্য ইয়ামাহার চাহিদা বেশি। দাম বেশি হলেও মানুষ বেশি সিসির দিকে ঝুঁকছে। এ দেশে ইয়াংরা সেদিকেই বেশি যাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল রপ্তানির সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন, এ বিষয়ে সরকারের করণীয় কী?
ড. ফা হ আনসারী: প্রকৃতপক্ষে বিদেশি যে মোটরসাইকেল এ দেশে আসে বিশেষ করে ভারতে উৎপাদন হয়ে এ দেশে আসে। এগুলোর ফ্যাক্টরি বড় আকারের। কিন্তু আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কম। একেকটা কোম্পানির উৎপাদন ৬ থেকে ৭ হাজারের বেশি হয় না। কাজেই স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব না। তারপরও বলব ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বাজার যদি বড় হয়, দেশে বড় করে কারখানা গড়ে ওঠে বেশি করে উৎপাদন হলে তখন বিদেশে রপ্তানি হতে পারে। 

খবরের কাগজ: শিল্পাঞ্চলে (অর্থনৈতিক জোন) অটোমোবাইল শিল্পের জন্য আলাদা কোন ধরনের ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মনে করেন?
ড. ফা হ আনসারী: এখন পর্যন্ত কিছু করা হয়নি। তবে আমরা যদি মনে করি, যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে আমরা বিনিয়োগ করতে চাইলে বেজা জায়গা দেবে। আমরাও ইদানীং ভাবছি চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক জোনে যেতে। 

খবরের কাগজ: এ সেক্টরে সরকারের কী পরিমাণ আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকা উচিত বলে মনে করেন?
ড. ফা হ আনসারী: সরকার বিভিন্নভাবে ঋণ দিয়ে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া নীতিগত সহায়তাও করে থাকে। আমদানিতে ছাড় দেওয়া আছে। কারণ, এই শিল্পে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কাজ করছে। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু আমরা সমস্যায় রয়েছি। তাই আমরা যারা স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করছি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক আরও কমাতে হবে।

/আবরার জাহিন

সাক্ষাৎকার চাই সমন্বিত নীতিমালা

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
চাই সমন্বিত নীতিমালা
আকিজ মোটরসের সিইও শেখ আমিনুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি অটোমোবাইলশিল্প নিয়েও কাজ করছে আকিজ গ্রুপ। এই শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি, সংকট, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে আকিজ মোটরসের সিইও শেখ আমিনুদ্দিনের সঙ্গে।

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল শিল্প সম্পর্কে কিছু বলুন।
শেখ আমিনুদ্দিন: দেশের ১৮ কোটি জনগণের জন্য অটোমোবাইল একটি অপরিহার্য যন্ত্র। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হওয়ায় নতুন গাড়ির চাহিদা কমে গেছে। তবে এই শিল্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আগামী দিনে এর চাহিদা আরো কয়েকগুণ বাড়বে বলে আমি মনে করছি। 

খবরের কাগজ: এই শিল্পের শুরু এবং বিকাশ নিয়ে কিছু বলুন।
শেখ আমিনুদ্দিন: অটোমোবাইল শিল্পের শুরু তো ব্রিটিশ আমল থেকেই। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান আমলে এর বিকাশ ঘটে। সার্বিকভাবে আমাদের দেশে ৮০-এর দশকে এর প্রসার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে অটোমোবাইল শিল্পের বাজার ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে। 

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশে কোনো বাধা আছে কি? 
শেখ আমিনুদ্দিন: এই শিল্পের বিকাশে অন্যতম বাধা হচ্ছে শুল্ক। এখানে আমরা শুধু অ্যাম্বেলিং (তৈরি) করতে পারছি। তাও সম্পূর্ভাবে হচ্ছে না। সরকারের যে নীতিমালা আছে, সেটা মেনে তৈরি করা সম্ভব না। কারণ এখানে শুল্কহারের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে এই শুল্কহারের পরিমাণ অত্যধিক বেশি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে শুল্কহার নাই বললেই চলে। অনেক দেশে আবার ভর্তুকিও দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে ভর্তুকি তো দেয়ই না, উল্টো শুল্কহারও অনেক বেশি। প্রযুক্তির এই যুগে উন্নত বিশ্বে অধিকাংশ যানবাহনই বৈদ্যুতিক। আগামী দিন হবে বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিন। ফলে আমাদের দেশেও এই যানবাহনের ব্যবহার দিনে দিনে বাড়বে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি সরকারের এই অটোমোবাইল খাতের স্টেকহোল্ডার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সমন্বিতভাবে ভালো একটা নীতিমালা তৈরি করা দরকার। 

খবরের কাগজ: সম্প্রতি সরকার অধিকাংশ পণ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে অটোমোবাইল শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
শেখ আমিনুদ্দিন: আমি শুনেছি, সেবার উপরেও ভ্যাট বাড়িয়েছে। অবশ্যই সরকারের টাকার প্রয়োজন। আমরা যদি সরকারকে সঠিকভাবে কর না দিই, তাহলে সরকার দেশটা চালাবে কীভাবে? তবে ভ্যাট বাড়ানোর একটা যৌক্তিক কাঠামো থাকতে হবে। যেমন বিলাসদ্রব্যে অবশ্যই ভ্যাট বেশি বাড়াতে পারে। যদি ডিজেলচালিত যন্ত্রে কর দিতে হয় ৩৭ থেকে ৫৭ শতাংশ তবে বৈদ্যুতিক যানবাহনে কর ৮৯ শতাংশ হওয়া উচিত না। এক্ষেত্রে সরকারকে সমন্বয় করা উচিত। ডিজেল গাড়িকে কম উৎসাহিত করতে এর ওপর একটু বেশি হারে কর আরোপ করতে পারে। বিপরীতে বৈদ্যুতিক যানবাহনে করহার কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। যেহেতু আগামী দিনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার অনেক বাড়বে। আর সেবার ক্ষেত্রে আমি মনে করি ১০ শতাংশ শুল্কহার হলে ভালো হতো। 

খবরের কাগজ: আপনি বলছেন, আগামী দিনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়বে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশেই সেটা উৎপাদনের সুযোগ আছে কি না।
শেখ আমিনুদ্দিন: সুযোগ আছে। তবে, এজন্য এখনই এ খাতের সব স্টক হোল্ডার এবং ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে যথাযথ এবং যুগোপযোগী একটা নীতিমালা করা দরকার। তাহলে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানও এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে স্থানীয়রাও উৎপাদনে আগ্রহী হবেন। 

খবরের কাগজ: আমাদের দেশে অটোমোবাইল শিল্পে কোন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়? আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে এর পার্থক্য কী? 
শেখ আমিনুদ্দিন: বৈদ্যুতিক যান এবং হাইব্রিড একটি উন্নত প্রযুক্তির যান। এখানে আরও বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সামনে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কীভাবে আমরা পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উন্নত প্রযুক্তির হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক যান আমদানি করতে পারি এবং এর ব্যবহারে বিস্তৃতি ঘটাতে পারি। আমরা যদি ভালোভাবে এর সেবা না দিতে পারি, তাহলে অনেক গাড়ি বসে যাবে। যেহেতু আমাদের প্রায় সব যানবাহনই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক মানের যানবাহন আমদানি করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের যানবাহন আমদানি করলাম কিন্তু এসব যানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যদি আন্তর্জাতিক মানের সেবা না দিতে পারি, তাহলে তো কোনো লাভ হবে না। তাই এখনই আন্তর্জাতিক মানের একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। 

খবরের কাগজ: আমাদের দেশে কোন ধরনের যানবাহনের চাহিদা বেশি?
শেখ আমিনুদ্দিন: আমাদের দেশে তো এখনো ডিজেলচালিত যানবাহনের চাহিদাই বেশি। তবে আমি মনে করি অদূর ভবিষ্যতে সবকিছুই বৈদ্যুতিক যানে চলে আসবে। বিদেশে বৈদ্যুতিক বাস, ট্রাক এবং মোটরসাইকেলের ব্যবহার অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশেও এর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক বাসগুলো আমাদের দেশে আসা উচিত। আমাদের দেশে ডিজেলচালিত যে বাস-ট্রাকগুলো চলে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে আমাদের এখানে দুর্ঘটনার হারও বেশি। এখন যদি আমরা বৈদ্যুতিক যানে মনোযোগ দিই এবং আন্তর্জাতিক মানের যানবাহন ব্যবহারে আগ্রহী হই, তাহলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাও অনেক বাড়বে। তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান যাচাই-বাছাই করেই আমদানি করতে হবে। 

বর্তমানে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হওয়ায় নতুন গাড়ি বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। তবে সারা বিশ্বে ইঞ্জিনচালিত মোটরসাইকেলের ব্যবহার অর্ধেকে নেমে গেছে। এর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। ২০১৬-১৭ সালে আমরা মাত্র ১০টি বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল আমদানি করে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন অনেকেই খেলনা মোটরসাইকেল বলে আমাদের সমালোচনা করেছিলেন। আকিজ গ্রুপের জন্য এটা কোনো ভালো পদক্ষেপ নয় বলেও অনেকে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এখন আমরা প্রতি মাসেই অনেক বেশি পরিমাণে মোটরসাইকেল বিক্রি করছি। দিনে দিনে এর চাহিদা অনেক বেশি বাড়ছে। 

খবরের কাগজ: আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে দেশেই যদি বৈদ্যুতিক-যানবাহনের উৎপাদন এবং বাজারজাত বাড়াতে চান, তাহলে সরকারের কোন ধরনের নীতি সহায়তা দরকার?
শেখ আমিনুদ্দিন: বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরির জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। এজন্য দেশেই প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশ উৎপাদন করব। এর জন্য যেসব উপকরণ দরকার সেখানে ডিউটি কমিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এই ধরনের কারখানা তৈরি করা হবে, তাদের প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দর কমিয়ে দিতে পারে। সরকার যদি এসব সহায়তা দেয়, তাহলে অনেক উদ্যোক্তাই এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। ফলে দেশেই বৈদ্যুতিক যানবাহনের উৎপাদন এবং ব্যবহার বাড়বে। এতে গ্রাহকরা অনেক কম দামেই এসব যান কিনতে পারবেন। তবে সরকারকে অবশ্যই আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। সরকারের শুল্ক নীতিমালা এবং প্রণোদনা যতদিন পর্যন্ত যুগোপযোগী না হবে ততদিন পর্যন্ত উৎপাদনকারীরা এই খাতে বিনিয়োগে আসবে না। কেননা এই খাতে বিনিয়োগে যারা আসবে তাদের যদি সরকার সুযোগ-সুবিধা না দেয় তাহলে এই অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশ ঘটবে না। 

এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়নি। সরকার যদি ডিজেল গাড়িতে ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে দেয় ঠিক সেই পরিমাণ ই-ভিতে ছাড় দিতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা অসমতাও নিশ্চিত হয়। কিছু সুযোগ সুবিধা দিলেই এই শিল্পটি ভবিষ্যতে বিকশিত হবে। একদিন যদি ঢাকা শহরে তেল ছাড়া গাড়ি চলে তাহলে কত টাকার সাশ্রয় হবে- এটা একটু চিন্তা করে দেখবেন। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য খাতের অনেক খরচ কমে যাবে। এটাকে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে। কারণ, সারা পৃথিবীতেই আজ বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। 

খবরের কাগজ: আকিজ ছাড়া আর কোন কোন কোম্পানি বৈদ্যুতিক যান নিয়ে কাজ করছে?
শেখ আমিনুদ্দিন: আমরাই প্রথমদিকে বৈদ্যুতিক ভ্যান আমদানি করেছি। এবং আমরা খুব ভালো সাড়াও পেয়েছি। বৈদ্যুতিক যানের ক্ষেত্রে থ্রি হুইলার বা আমরা যেটাকে সিএনজি বলতাম, সেটা যেমন আমাদের পরিবেশের জন্য উপকার করেছে, ঠিক একই জিনিস পেট্রলের পরিবর্তে আমরা বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার আমদানি করেছি। এখানেই আমরা সেগুলো সংযোজন করছি।

এখন নতুন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানই এই বৈদ্যুতিক যান নিয়ে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে আরও অনেক কোম্পানি এই খাতে এগিয়ে আসবে। তারা সংযোজনের পাশাপাশি উৎপাদনও করবে। আমরা ২০১৭ সালে বৈদ্যুতিক যানের একটা মাত্র মোটরসাইকেলের মডেল নিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন আমাদের প্রায় সাত থেকে আটটি মডেল রয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন আমরা মোটরসাইকেলের পাশাপাশি থ্রি-হুইলার, পিকআপ ভ্যানসহ আরও কিছু যান আমদানি করছি। আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে আশা করছি। 

খবরের কাগজ: বৈদ্যুতিক যানের ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন?
শেখ আমিনুদ্দিন: খুবই নগণ্য। তবে বাজারে যে ইজিবাইক চালু রয়েছে, সেগুলোর কথা ভিন্ন। তবে সত্যিকার অর্থে যেটাকে বৈদ্যুতিক যানবাহন বলি সেটা বাংলাদেশে একেবারেই নগণ্য। 

খবরের কাগজ: অটোমোবাইল শিল্পের রপ্তানির কোনো সম্ভাবনা আছে কি না।
শেখ আমিনুদ্দিন: স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন না হলেও আমাদের এখানে সংযোজনের মাধ্যমে রপ্তানির সুযোগ আছে। আমরা এখানে রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ করি। এটা পৃথিবীর অনেক দেশেই করে থাকে। আমরাও সে অনুযায়ী, অনেককেই বলেছি। তোমরা আমাদের দেশে সংযোজনে করে উন্নত বিশ্বে সেগুলো রপ্তানি করলে সেখানে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির চিন্তাভাবনা করছি। এই ব্যাপারে চলতি বছরই কাজ শুরু করবো বলে আশা করছি।

বর্তমানে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হওয়ায় নতুন গাড়ি বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। তবে সারা বিশ্বে ইঞ্জিনচালিত মোটরসাইকেলের ব্যবহার অর্ধেকে নেমে গেছে। এর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।