বিভিন্ন অনুষদে বিভাগভিত্তিক তীব্র সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি)। চলমান এই সেশনজট নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন তারা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ছয়টি ব্যাচ (১৮ থেকে ২৩) একসঙ্গে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যায়নরত রয়েছে।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসে এক সেমিস্টার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সময় লাগছে ৮ থেকে ৯ মাস। ফলে চার বছরের স্নাতক শেষ করতে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগছে।
অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে কোর্স শেষ না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করতে হচ্ছে। ফলে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও সেশনজটের ফলে পরিবহন সংকট, আবাসিক সংকটসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, একাডেমিক রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরীক্ষা নিতে না পারায় সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সংকট, বিভিন্ন বিভাগে ক্লাসরুম সংকটের কারণেও বেড়েছে সেশনজট। করোনা মহামারিপরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার ঘোষণা দেয়। তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন না ঘটনার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকটাই হতাশ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা অনেকটাই অসন্তোষ প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি। তারা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যায় পড়ছেন। অধিক সময় ধরে একই সেমিস্টারে থাকার কারণে তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘সেশনজট নিরসনের জন্য আমরা করোনার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। জট সৃষ্টির মুখ্য কারণ হচ্ছে শিক্ষক সংকট এবং অপর্যাপ্ত ক্লাস রুম। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে জমা দেওয়ার প্রতি দায়িত্বহীনতা সেশনজটে ভূমিকা রাখছে। কিছুসংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন, যারা নির্দিষ্ট সময়ে খাতা মূল্যায়ন করে জমা দেন না। ফলে একটি বা দুইটি কোর্সের ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণ রেজাল্ট প্রকাশ করতে দেরি হয়ে যায়। এর প্রভাব পরবর্তী ব্যাচগুলোতেও পড়ছে।’
কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদের ডিন অধ্যাপক মেহেদি ইসলাম বলেন, ‘করোনার আগের ব্যাচগুলো অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের এগিয়ে নিতে চার মাসের সেমিস্টার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যে একাডেমিক রুটিন দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো কয়েকদিনের গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে। করোনার ক্ষতি সহজেই নিরসন করা সম্ভব নয়। তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টায় আছি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করা যায়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেশনজট কাটানোর জন্য বর্তমান প্রশাসন সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে।’