![চবিতে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার চান শিক্ষার্থীরা](uploads/2024/02/12/1707714288.CU-PIC.jpg)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের বিচারের দাবিতে অষ্টম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা নিজ বিভাগ থেকে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে আর দুদিনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এমনকি দাবি আদায় না হলে সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আগামী মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত কী আসে আমরা তা দেখব। বিচার সুনিশ্চিত না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। আমাদের দাবির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তবে আমরা এখন পর্যন্ত আন্দোলন নিজেদের বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। আমরা সুষ্ঠু বিচার না পেলে তাদের সমর্থন নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে তার নামে যেন মামলা করে এটা আমাদের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে। আমরা আর দুদিন অপেক্ষা করব। এরপর সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তালা ঝুলিয়ে দেব।’
এদিকে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অধ্যাপক ড. জরিন আখতারকে।
তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা আঁখি বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখন কোনো কথা বলতে পারব না। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে আপনারা জানতে পারবেন। বিষয়টি সামষ্টিকভাবে কর্তৃপক্ষ জানাবেন।’
এ বিষয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রাণপণ চেষ্টা করছে প্রতিবেদন জমা দিতে। শনিবার রাত ১০টা অবধি বৈঠক করেছে। তারা প্রতিনিয়ত বৈঠক করে যাচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। প্রতিবেদন জমা দিলে পরশু আমরা আরেকটা কমিটি করে সিন্ডিকেট সিডিউলের দিকে আগানোর চিন্তা ছিল। তারা আজকে জমা দিতে পারেনি। কাল বা পরশুর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কি না এই প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘এটা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে কীভাবে বলব? তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরদিনই আমরা অধিকতর তদন্ত কমিটি যারা শাস্তি দেবেন তাদের সঙ্গে বসে শাস্তির ব্যবস্থা করব। আমরা এ ব্যাপারে কোনো ছাড়ই দেব না। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শিক্ষক সমাজের লজ্জার বিষয়। অতি দ্রুত আমরা এর একটি সুরাহা করতে পারব।’
এর আগে, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে গত ১ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বরাবর যৌন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর থিসিস করছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, থিসিস চলাকালীন সুপারভাইজার (অধ্যাপক) কর্তৃক যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হন তিনি। ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেওয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
তবে অভিযুক্ত অধ্যাপক অভিযোগটি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার ও যথাযথ বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি পর্যালোচনায় এনে অভিযুক্ত অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সেলে তুলে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মাহফুজ শুভ্র/সাদিয়া নাহার/অমিয়/