![উচ্চশিক্ষায় ঋণসহায়তা](uploads/2024/02/26/1708925722.cam--jabe.jpg)
দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকটের কারণে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অকালে ঝরে যায়। এসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে দেশি-বিদেশি বেশকিছু বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণসহায়তা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করে আজ অনেক শিক্ষার্থী বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ঋণ দিয়ে তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে ও উচ্চশিক্ষায় সহায়তা করছে। উচ্চশিক্ষায় ঋণসহায়তা নিয়ে লিখেছেন মাহমুদ কবীর।
যাচাই করে ঋণসহায়তা নিন
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এসএসসির পর উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণসহায়তা দিয়ে থাকে। আপনি যদি মেধাবী হন এবং আর্থিক অনটনের জন্য পড়াশোনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তবে শিক্ষা ঋণসহায়তা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। একই সঙ্গে কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ ঋণসহায়তা দেয়, কীভাবে দেয়, কোন পদ্ধতিতে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং কত বছরের জন্য আপনাকে এ ঋণ দেওয়া হবে- এসব বিষয় সচেতনভাবে জেনে নেবেন। একই সঙ্গে কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের ঋণ আপনার জন্য মানানসই তা ভালোভাবে যাচাই করে নেবেন।
শিক্ষা ঋণসহায়তা নিয়ে যে কেবল দেশে পড়াশোনা করতে পারা যায় এমনটা নয়। বিদেশে পড়তে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণসহায়তা নেওয়া যায়। তাই শিক্ষা ঋণসহায়তা নিয়ে কেবল দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরাই নয় সামর্থ্যবান মেধাবীরাও দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন ঘটাতে পারেন।
যেসব ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ঋণসহায়তা দিয়ে থাকে সেগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এইচএসবিসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি, ইবিএল ব্যাংক এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
আবেদন করার যোগ্যতা: ঋণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থী ঋণ পরিশোধে সক্ষম এটা প্রমাণিত হলেই ঋণ নিতে পারবেন। যেসব শিক্ষার্থীর বাবা-মা সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তারাও এসব ব্যাংক থেকে ঋণসহায়তা নিতে পারবেন। ঋণসহায়তা নিতে অবশ্যই অভিভাবকের আয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী শর্তের বিনিময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণসহায়তা নিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডকুমেন্ট যেমন- আয়ের উৎস ও প্রমাণপত্র, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ফর্ম অথবা ডকুমেন্ট এবং যে ছাত্রছাত্রীর জন্য ঋণ নেওয়া হবে তাদের সম্মতিপত্র জমা দিতে হবে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার অফার লেটারের ফটোকপি, সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের ফটোকপি, লিগ্যাল গার্ডিয়ানের সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং গ্যারান্টি দিতে হবে। স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রী গ্যারান্টার হবে এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী গ্যারান্টার হবে। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার জমা করা তথ্য ও ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে খুব স্বল্প সময়ে আপনার সন্তানের জন্য শিক্ষা ঋণ দেবে।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে এনবিএল স্টুডেন্ট লোন নামে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণসহায়তা দিচ্ছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সলভেন্সি পারপাসে এই ঋণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণসহায়তা দেওয়া হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বাবা-মা, অভিভাবক, লিগ্যাল গার্ডিয়ান ও শিক্ষার্থী নিজে এই ঋণসহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সুদে ঋণসহায়তা দেওয়া হয়।
এইচএসবিসি: দেশে এবং দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার বা প্রফেশনাল ডিগ্রির জন্য এইচএসবিসি ব্যাংক ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ দেয়। ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে অভিভাবকের মাসিক আয়ের ওপর। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় লোন করা ব্যক্তির মাসিক আয়ের চার গুণ বেশি পরিমাণ ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
প্রাইম ব্যাংক: ব্যাংকটি মূলত ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকের আয় অনুযায়ী ঋণ দিয়ে থাকে। এই স্কিম থেকে আগ্রহীরা সাধারণত এক থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এটির পরিশোধকাল সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত হয় এবং শতকরা ১৫ ভাগ সুদ দিতে হয়।
উত্তরা ব্যাংক: এ ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে এবং সুদের হার ১২ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংক: ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে এবং সুদের হার ৯ শতাংশ।
ইবিএল ব্যাংক: এ ব্যাংক ১ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে এবং সুদের হার ৯ শতাংশ।
এনসিসি ব্যাংক: এনসিসি ব্যাংক ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে এবং সুদের হার ১২.৫ শতাংশ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যেতে পারে। ঋণ পরিশোদের সময় এক থেকে চার বছর পর্যন্ত।
কলি