সিলেটে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রক্টর, রেজিস্টারের পদত্যাগসহ ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভিসিসহ প্রায় ৫০ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এরপর সোমবারও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সোমবার দুপুর ১২টায় দিকে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রশাসনিক ভবনে সভা করেন। বিকেল ৪টার সভা শেষ করে শিক্ষার্থীরা জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। আন্দোলন চলবে। এরপর আজ সকাল থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরেও একটি ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। যার প্রেক্ষিতে ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। ২৪ অক্টোবর সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এছাড়া প্রশাসন বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যা অপমানজনক। প্রক্টর ও রেজিস্টার অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা সব একাডেমি কার্যক্রম বর্জন করেছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম ইসলাম জানান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ আট দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমি কার্যক্রম বর্জন অব্যাহত থাকবে। সোমবার এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ সদস্যের শিক্ষার্থী দলের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও ফলপ্রসূ হয়নি।
শিক্ষার্থীদের আট দফা হলো-
(১) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্টার ও জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তাকে সবার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
(২) ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আরও জোরালো করতে হবে।
(৩) ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ভিসির রাজনৈতিক ব্যানারে সম্ভাষণকারীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
(৪) ২৪ অক্টোবর ২০২৪ রাতের সংঘর্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সম্পূর্ণ বিষয় যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে।
(৫) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্য ও সঠিক বিবৃতি প্রদান করতে হবে।
(৬) শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে ফেলকৃত বিষয়ের ইমপ্রুভ পরীক্ষা নিতে হবে। শুধু রিক্যারির (একটি বিষয়ে দুবার ফেল) মাধ্যমে ইয়ার ড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
(৭) অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরে পাস নিশ্চিত করতে হবে।
(৮) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সার্বক্ষণিক (২৪/৭) খোলা রাখতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের টানানো দুটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় কিছু বহিরাগত এতে যোগ দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে প্রক্টোরসহ মোট ১০ জন আহত হন। এর পর থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে আসছে শিক্ষার্থীর।
শাকিলা ববি/জোবাইদা/অমিয়/