বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শহিদ আবু সাঈদ হত্যা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ৭১ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বেরোবির মিডিয়া সেন্টারে অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লঘু শাস্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই আলটিমেটাম দেয় তারা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব রহমত আলী, সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আশিকুর রহমান, শিক্ষার্থী সাকিব, হাবিব প্রমুখ।
এ সময় সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘যেখানে রেগিং করলে ১ সেমিস্টার বা ২ সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়, সেখানে আবু সাঈদকে যারা প্রকাশ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের ১ সেমিস্টার বা ২ সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা এই বিচার মানি না।
আমাদের দাবি, প্রশাসন এই বিচার পুনঃমূল্যায়ন করুক এবং যারা আবু সাঈদ হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।’
মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব রহমত আলী বলেন, ‘যারা প্রকাশ্যে আমাদের ভাইদের ওপরে হামলা চালিয়েছে, প্রশাসন এখনো তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেনি। আমরা প্রশাসনের পদক্ষেপকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭১ জনের বিরুদ্ধে যে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে, তা প্রহসন। কারণ অস্ত্রধারীরা ১/২ সেমিস্টার পরে এসে আমাদের ওপর সরাসরি গুলি চালাবে। অবিলম্বে এই শাস্তি পুনঃমূল্যায়ন করে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। তিন দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনের সামনে স্থায়ী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ৫ জানুয়ারি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. শওকাত আলী গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে যোগ দিয়েই ১০৭তম সিন্ডিকেট সভায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁজে বের করে তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেন।
কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত বছর ২৮ অক্টোবর ১০৮তম সভায় ৭১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টার বহিষ্কার ও ২৩ জনকে ১ সেমিস্টার করে বহিষ্কার এবং ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী।
তবে সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরেও বেশ কয়জন শিক্ষকসহ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জড়িত থাকার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হলেও তাদের বিষয়ে কোনো কমিটি গঠন কিংবা সিদ্ধান্ত হয়নি।