‘নারী যেন ইতিহাস থেকে হারিয়ে না যায়। প্রয়োজনে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হবে। একই সঙ্গে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে।’
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটোরিয়ামে বেগম রোকেয়ার স্মরণে নারীমুক্তি কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নারী ও নারীমুক্তি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বিনির্মাণে নারীরা হারিয়ে যান। অনেক সময় নাটক-সিনেমাতেও নারীদের ভূমিকা ছোট করা হয়।’
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় এবং বেঁচে যাওয়ার পেছনে নারীর অবদান রয়েছে। একইভাবে গণ-অভ্যুত্থানেও নারীদের কিন্তু ভূমিকা রয়েছে। নানানভাবে এই গণ-অভ্যুত্থানে সামনে এবং পেছন থেকে লড়াই করেছেন নারীরা। নারীর শক্তি থেকেই কিন্তু আমরা গণ-অভ্যুত্থানে শক্তি পাই। তাই এই শক্তিকে আমরা কোনোভাবেই দুর্বল করতে পারি না। প্রয়োজনে এই নারীশক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে দলগুলোতে সংস্কার আনতে হবে এমন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতি, শ্রেণি, ধর্ম ও লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। এখানে যেকোনো একটি থেকে বৈষম্য বাদ দিলে বৈষম্য শেষ হবে না। রাজনৈতিক দলে সংস্কার করে সেখানে সব জাতি, শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা হলেই সেটি জাতীয়ভাবে রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘ইতিহাস সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের এবং মুক্তিযুদ্ধের কয়জন নারীর কথা আমাদের স্মরণে রয়েছে। অনেক অনেক দশক পর কিন্তু আমরা বীরাঙ্গনাদের খোঁজ পেয়েছি। তাদের বেশ কয়েকজন বেঁচেও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কিন্তু আমরা একটি দেশ পেয়েছি।’
ইতিহাস রচনায় নারীদের গুরুত্ব দিতে হবে- এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ বলেন, ‘ইতিহাসে একটা দেশে যুদ্ধ দিয়ে শুরু এবং যুদ্ধ দিয়েই কি শেষ হয়! যদি ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস লেখা হয়, হয়তো ইতিহাস লেখার ধারাবাহিকতায় নারীরা বাদ পড়ে যাবেন। তাই আমাদের উচিত হবে ইতিহাস লেখার পুরুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে মানুষকেন্দ্রিক ইতিহাস লেখার দিকে অগ্রসর হওয়া।’
এ সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. তাসনূভা জাবীন, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, নাট্যকর্মী ও শিক্ষক মহসিনা আক্তার ও স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু প্রমুখ।
আরিফ জাওয়াদ/সুমন/অমিয়/