সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে ছাত্রনেতারা। তবে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে একমত হয়েছেন তারা, প্রয়োজনে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্ত্বরে ডায়ালোগ ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এক পলিসি ডায়ালগে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতাদের বক্তব্যে তা ওঠে আসে।
ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পারস্পরিক সহাবস্থান ও ট্যাগিং কালচার বন্ধের প্রসঙ্গে টেনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সংসদের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গণঅভূত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকার প্রশ্নটাই লজ্জার। শিক্ষাঙ্গণে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা থাকলে আজ এই আলোচনা সভা করা লাগত না। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির জন্য সর্বপ্রথম ট্যাগিং কালচার বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখেছি, বিশ্বজিৎকে হিন্দু শাখার কর্মী বলে কীভাবে নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। আবরারকে কীভাবে ট্যাগিং দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আবার প্রশ্ন ওঠবে। তবে সেক্ষেত্রে ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদারতা, পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।’
ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রসঙ্গ টেনে ডাকসুর সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে ভয়টা রয়েছে সে বিষয়ে আমাদের ভেবে দেখা উচিত। বিগত সময়ে ছাত্রলীগ যে র্যাগিং কালচার চালু রেখেছিল তার ট্রমা এখনো কাটেনি। গত দেড় দকেক ফোন চেক করে করে মারধর করার রাজনীতি থেকে আমরা বেড়ে ওঠেছি। আমিই নিজের তার ভুক্তভোগী। দমননীতি, গেস্টরুম কালচার, মাদার সংগঠনের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়ার যে প্রবণতা সে জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বিতার্কিক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, ‘আমরা পূর্বের ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখেছি এবং এর ভয়াবহতার শিকার আমরা নিজেও। শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির বদলে সেটা শিক্ষার্থীদের দমনপীড়নের প্লাটফর্ম হয়ে ওঠেছিল। আমরা চাই গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে জবাবদিহিতার জায়গা নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির চর্চা হোক। সেই সঙ্গে আবাসিক হল ও একাডেমিক এরিয়ায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বলতে এর সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। যেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না করে বরং এটিকে শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। সেই জন্য সবার আগে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টায় আসতে হবে। ক্যাম্পাসে সিআর ইলেকশনের গঠনগত কাঠামো নির্ধারন ও সিআর'স কাউন্সিল গঠন করার মাধ্যমে ডাকসু করার আগে যদি আমরা এটা করতে পারি তাহলে একটা ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব এবং এই প্লাটফর্মকে এমনভাবে সাজানো উচিত যাতে কেউ প্রশ্ন না তুলতে পারে যে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এমন ছাত্ররাজনীতি আমরা চাইনা যে ছাত্র রাজনীতিতে মাদার পার্টি তার ছাত্র সংগঠনের প্রেসক্রিপশন লিখে দিবে। এই পলিসিতে কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের সেই পলিসি থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হওয়া উচিত।’
ডায়ালগ ফর ডেমোক্রিসির আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ আরমান সভাপতিত্বে ও মোস্তফা মুশফিকে সঞ্চলনায় এতে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম এ এস ওয়াজেদ, মহিউদ্দীন মুজাহিদ মাহি ও আদনান মোস্তারি। এছাড়া সংলাপে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
আরিফ জাওয়াদ/মাহফুজ/এমএ/