ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। জীবন বাঁচাতে এসব খাবার খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মানহীন, অপুষ্টিকর এসব খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের। ফলে তারা পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব ও ক্যালরি ঘাটতিতে রয়েছে বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা। এতে শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছেন তারা।
জানা যায়, হলগুলোতে প্রতিদিন একই ধরনের খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাজারের নিম্নমানের চাল ও কম দামে নষ্ট হওয়া সবজি কিনে পরিবেশন করা হচ্ছে আবাসিক হলের ডাইনিং ও ক্যাম্পাসে অবস্থিত খাবারের দোকানগুলোতে। এতে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পড়াশোনায় তাদের যেভাবে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, হল ও ক্যাম্পাসের দোকানগুলোর খাবার খেয়ে তার ১০ ভাগও দেওয়া সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে ইবি শিক্ষার্থী সুজন বলেন, ‘এই খাবার মূলত আমরা জীবন বাঁচাতে খাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের খাবারের বিষয়ে নজরদারি করা উচিত। না হলে আমরা শিক্ষা ও গবেষণায় আরও পিছিয়ে যাব। সামান্য মসুর ডালের সঙ্গে পানি ও হলুদ মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে আমাদের।’
আবাসিক হল ছাড়াও ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতেও ঘটছে একই ঘটনা। ফলে পর্যাপ্ত ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতিতে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে যেসব খাবার পরিবেশন করা হয়, এতে প্রয়োজনের এক-তৃতীয়াংশ ক্যালরিও থাকে না বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। এসব খাবারে প্রোটিন ও ফ্যাট নেই বললেই চলে। ফলে স্বাস্থ্য সমস্যা, শারীরিক দুর্বলতা ও জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিতে হয় প্রতিনিয়ত।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, মাছ বা মাংসের টুকরো মাপলেই শিক্ষার্থীরা কতটুকু আমিষ পাচ্ছেন, তা বোঝা যাবে না। মাপতে হবে ওই এক টুকরো মাছ বা মাংসের কাঁটা বা হাঁড় বাদ দিয়ে শাঁসটুকু। একজন ১৯-২৪ বছর বয়সের শিক্ষার্থীর দেহের জন্য দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ ভাগ প্রোটিনজাতীয় খাবার এবং ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ক্যালরি প্রয়োজন। তা হলে একজন শিক্ষার্থীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, পরিশ্রমী হয়ে উঠবে এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে। তা না হলে পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযোগী হওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ইবি শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ের দোকানগুলোতে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া একজন মানুষের শরীরে যে পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালরি দরকার, তা এই খাবার দিয়ে পূরণ হয় না। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ইবি শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস তানজিনা বলেন, ‘হল ও জিয়া মোড়ের খাবারগুলোতে প্রায়ই নানা ধরনের পোকামাকড় পাওয়া যায়। আবার রান্নায় বাজারের সবচেয়ে সস্তা সবজি ব্যবহার করা। এসব খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছি আমরা। এ ছাড়া হলের মানহীন খাবার খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হতে হয়। এসব খেয়ে আমরা শারীরিকভাবে ফিট না থাকায় পড়াশোনাতেও মনোযোগী হতে পারছি না। খাবারের মান স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় নানা ধরনের রোগব্যাধি ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে।’
ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌফিক এলাহী বলেন, ‘একজন মানুষের দেহে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ প্রোটিন প্রয়োজন। অথচ এটা আমরা কোনোভাবেই পূরণ করতে পারছি না। অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেট যতটুকু প্রয়োজন, তার তিনগুণ খাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা এত কম খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা দুঃখজনক। তা ছাড়া এত কম এবং বাজে খাবার খেয়ে পড়াশোনা করা যায় না।’
এদিকে হল ও দোকানগুলোতে প্রায়ই একই ধরনের তরকারি দেওয়া হয়। এতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়তে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে খাদ্যের ক্ষেত্রে যত বৈচিত্র্য থাকবে তত ভালো। একই ধরনের সবজি দিনে একবার থেকে দুইবারের বেশি খাওয়া উচিত নয়।’
এ বিষয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে খাদ্যদ্রব্যের যে মূল্য, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে আপাতত ভাবছে না। আসলে হলগুলোতে যেসব খাবার দেওয়া হয়, তা মানসম্মত হয় না। আমরা যে ইনপুট দেব, শিক্ষার্থীরা সেই অনুযায়ী আউটপুট দেবে। হলগুলোর খাবারের মানের বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রভোস্ট কাউন্সিল বসাব।’