![ইফতারে জনপ্রিয় ‘পাতলা খিচুড়ি’](uploads/2024/04/04/1712207366.Moulvibazar.jpg)
দেশের অন্য জেলার মতো মৌলভীবাজারেও রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তেমনি পবিত্র রমজানের ইফতারেও রয়েছে এ জেলার আলাদা ঐতিহ্য। রমজানের ইফতারে বাহারি আইটেম না হলে যেন জেলাবাসীর চলেই না। আর এই উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ল্যাটকা (পাতলা) খিচুড়ি, যা ‘পাতলা খিচুড়ি’ নামে পরিচিত। রোজাদাররা খিচুড়ি ছাড়া যেন প্রশান্তি পান না। এ কারণে প্রত্যেক ঘরে ঘরে, বাণিজ্যিকভাবে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় তৈরি হয় পাতলা খিচুড়ি। এটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত।
শহরের কয়েকজন প্রবীণ নাগরিক ও হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিলেট অঞ্চলের সর্বত্র পাতলা খিচুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইফতারিতে এই খিচুড়ি ছাড়া কল্পনাই করা দায়। এটা ছাড়া যেন ইফতারি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে এ পদের রয়েছে বিশেষ কদর।
জানা গেছে, ‘পাতলা খিচুড়ি’ খুবই পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় খাবার। এটি এই অঞ্চলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে তৈরি হয়। এমন কি রমজানে হোটেলগুলোতে নিয়মিত পাওয়া যায় এটি। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এর প্রধান উপাদান চাল, ডাল, তেল, লবণ ও বিভিন্ন মসলা। তবে বাণিজ্যিকভাবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বাদের ভিন্নতা আনতে সুগন্ধি চাল ও তিন-চার রকমের ডাল ব্যবহার করা হয়।
প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে পাতলা খিচুড়ি ইফতারিতে থাকবেই। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মূলত সারা দিন রোজা রেখে নরম কিছু খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, শরীরে প্রশান্তি আসে। এই অঞ্চলের মানুষ পাতলা খিচুড়ি ইফতারিতে বাধ্যতামূলক রাখেন।’
চাকরিজীবী শাম্মী আক্তার বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে আমি খিচুড়ি দিয়ে ইফতারি করি। নরম সুস্বাদু এ খাবার আমার পরিবারের সবার পছন্দের। তেলের পরিমাণ কম থাকা, নরম ও চাল ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ি একটি পুষ্টিকর খাবার।’
খিচুড়ির স্বাদ নির্ভর করে এর সঠিক রান্নার ওপরে জানিয়ে গৃহিণী হাবিবা ও ইপি বেগম বলেন, ‘খিচুড়ি সঠিকভাবে রান্না হলে এর সুঘ্রাণে চারদিকে ভেসে বেড়ায়। মোট কথা এটি জনপ্রিয় রেসিপি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, চাহিদা ভালো থাকায় ইফতারে খিচুড়ির বিক্রিও খুব ভালো। সম্প্রতি শহরের বড় বড় হোটেলগুলোতে দেখা গেছে, বিশাল আকারের লালশালু মোড়া ডেকচিতে করে হোটেলের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে খিচুড়ি। প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিভিন্ন হোটেলে ২০ থেকে ৫০ কেজি ‘পাতলা খিচুড়ি’ বিক্রি করতে দেখা যায়।
হোটেল ম্যানেজার ফরিদ মিয়া বলেন, ‘মানুষ বাসাবাড়িতে নানা ধরনের ইফতার তৈরির পাশাপাশি পাতলা খিচুড়িও রান্না করেন। কিন্তু আমাদের হোটেলের খিচুড়ির স্বাদ একটু বেশি হয় বলে অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫০ কেজির মতো খিচুড়ি বিক্রি করি।’
ইফতার-সংস্কৃতির বিষয়ে সংস্কৃতিজন আব্দুল মতিন বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে ইফতারের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। তেমনি এ অঞ্চলে খিচুড়ি না হলে যেন ইফতারিই হয় না। খিচুড়ি লাগবেই।’