![সিলেটে গাছ বাঁচাতে ওয়াকওয়ে অরক্ষিত](uploads/2024/04/19/1713496434.Sylhet-Tree.jpg)
‘অউ গাতেদি দিলাম ধুমা, হউ গাতেদি যায়, যার লাগি দিলাম ধুমা, তারে খায় মশায়’, সিলেটি এই প্রবাদের অর্থ হলো, ‘একজনের জন্য কাজ করলাম, কিন্তু লাভ হলো অন্যজনের। যার জন্য কাজ করলাম সে এখন ক্ষতির সম্মুখীন।’ আঞ্চলিক এই প্রবাদের সঙ্গে মিল রয়েছে সিলেট নগরীর সাগরদীঘিরপাড়ের ওয়াকওয়ে প্রকল্পের।
নির্মাণাধীন এই ওয়াকওয়ের কাজ গাছ রক্ষার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই ছড়ারপাড়ের গার্ডওয়াল দিতে পারছে না সিলেট সিটি করপোরেশন। এদিকে গত ৬ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিতে সাগরদীঘিরপাড় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মালনী ছড়া ভরে গেছে পানিতে। গত মঙ্গলবার থেকে সিলেটে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই ছড়ার পানির স্রোতে এখন এই এলাকার প্রধান সড়ক ধসে যাওয়ার উপক্রম।
সিলেট সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন বিভাগের অনুমোদন থাকার পরও সাগরদীঘিরপাড় সড়কের পাশের গাছ কাটতে আপত্তি জানাচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। এজন্য সাগরদীঘিরপাড় ওয়াকওয়ের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ গাছ না কাটলে ছড়ার গার্ডওয়াল দেওয়া যাবে না। এদিকে অসম্পূর্ণ গার্ডওয়ালের কারণে এখন ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে সাগরদীঘিরপাড় এলাকার সড়ক।
পাহাড়, টিলা, সবুজ চা-বাগানে বেষ্টিত সিলেট নগরীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছড়া। দীর্ঘদিন ধরে দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছিল ছড়াগুলো। তাই এই দখল-দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে ও নগরীর শোভা বর্ধন ও জলাবদ্ধতা দূর করতে সিসিকের পক্ষ থেকে ছড়াগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূলত সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এই সুপ্রশস্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই ওয়াকওয়ে প্রকল্পের বেশ কয়েকটি কাজ এখনো বাকি আছে। সেগুলো সম্পন্ন করছেন সিসিকের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ধাপে নগরীর সাগরদীঘিরপাড় এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য মালনী ছড়ারপাড়ে থাকা গাছ রক্ষা করে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী অনেক গাছ অক্ষত রেখে প্রথম দফার কাজ শেষ হয়। প্রথম ধাপের কাজে ওই এলাকার ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়ের শ্মশান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। এই অংশে ওয়াকওয়ে নির্মাণে পড়েছে ২৩টি গাছ। এরমধ্যে ৩টি পড়েছে ওয়াকওয়ের মধ্যে। তাই ওয়াকওয়েতে থাকা গাছ অক্ষত রাখা হয়েছে। আর বাকি গাছগুলো রক্ষায় ওয়াকওয়ে কিছুটা বাঁকানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় ধাপের কাজে মণিপুরি শ্মশান থেকে বর্ণমালা পয়েন্ট পর্যন্ত ৩৮টি গাছ অক্ষত রেখে ওয়াকওয়ে নির্মাণের নকশা করা হয়। তবে ওয়াকওয়ে ও সড়কের উন্নয়নের স্বার্থে আটটি গাছ কাটা জরুরি হয়ে পড়ে।
তাই সিসিক কর্তৃপক্ষ এই আটটি গাছ কাটার অনুমতি চান সিলেট বন বিভাগের কাছে। সিসিকের আবেদন অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী আটটি গাছ কাটার অনুমতি দেয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান’র প্রধান সমন্বয়ক আশরাফুল কবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাগরদীঘিরপাড় ওয়াকওয়ে তৈরি করতে এখন উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে গাছও বাঁচানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে সড়ক ধসের শঙ্কায় আছে। এই উভয় সংকট তৈরি হয়েছে অপরিপক্ব পরিকল্পনার জন্য।’
এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওয়াকওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা এখানে আবারও গাছ লাগাব। কিন্তু তারপর এই কাজ করতে অনেক বাধা আসছে। এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছড়ার পানি বাড়ছে, তাই গাছের জন্য ওয়াকওয়ের যেসব জায়গায় গার্ডওয়াল করা যাচ্ছে না সেসব জায়গা সংলগ্ন সড়ক ধসের শঙ্কা আছে। তাই আমরা চাই এই ওয়াকওয়ের কাজ দ্রুত শেষ করতে, তা না হলে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভাঙলে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষকে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে।