কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরও হাঁসফাঁস অবস্থা। তীব্র খরতাপে স্বস্তি নেই কোথাও। অনাবৃষ্টি, খরতাপে ফলমূল, ফসলি জমি, সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
শুক্রবার (১৯) এপ্রিল বেলা ৩টায় জেলায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি ও সন্ধ্যা ৬টায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। যা চলতি মৌসুমে এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা চারদিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলমান তাপদাহে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে হিটস্টোক প্রতিরোধে জেলাব্যাপী মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
৭০ বছর বয়সী আব্দুল ওহাব। টানা ৩৫ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এই তীব্র গরম আর রোদে এখনো পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। অল্পতে হাঁপিয়ে উঠছি। কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম ও শরীরে পানির ছিটা নিতে হচ্ছে। গরমে তেমন কেউই বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে যাত্রীও কম হচ্ছে।’
কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরও হাঁসফাঁস অবস্থা। তীব্র খরতাপে স্বস্তি নেই কোথাও। অনাবৃষ্টি, খরতাপে ফলমূল, ফসলি জমি, সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
আজ বেলা ৩টায় জেলায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি, বুধবার (১৭ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। যা ছিল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
চলমান তাপদাহে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে হিটস্টোক প্রতিরোধে জেলাব্যাপী মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী আরও কিছুদিন তীব্র দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চাষীদের পরামর্শ দিয়েছে।’
বেশ কয়েকজন পান চাষি বলেন, ‘রোদের কারণে ক্ষতির মুখে পান গাছ। শুকিয়ে যাচ্ছে পানের বরজ। ঝরে পড়ছে পান পাতা। ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চাষিদের।’
জেলার জীবননগর উপজেলার চাষি ইজাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার জমির ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। তীব্র রোদের কারণে কিছু ধান গাছ মারাও গেছে। জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে একদিন পরপর। তাতে অনেক খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া বাগানের আম, কাঁঠাল ও লিচু ঝরে যাচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আজ শুক্রবার (১৯) এপ্রিল বেলা ৩টায় জেলায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি ও সন্ধ্যা ৬টায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
আফজালুল হক/সালমান/