দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হালদা নদীর রাউজান অংশে ভাটার শেষ সময়ে কিছু মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এ ডিমকে ‘নমুনা ডিম’ বলা হয়; যা কিছু কিছু জেলের জালে ধরা পড়ে। নমুনা ডিম ছাড়ার পর মা-মাছরা বৃহৎ পরিসরে ডিম ছাড়ে। তখন হালদা নদীর প্রত্যেকটি স্পটে সব জেলেরাই কমবেশি ডিম পেয়ে থাকেন।
জানা গেছে, এপ্রিল থেকে জুন মাসের যেকোনো সময় এই নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। তবে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জো থাকতে হয়। এবার অমাবস্যার জোতে মা-মাছ ডিম দিয়েছে। গত সোমবার বিকেলে প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। মঙ্গলবার সকালে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা গবেষকরা এই ডিমকে ‘নমুনা ডিম’ হিসেবে শনাক্ত করেছেন।
রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী পাকিরাম দাশ, হরিরঞ্জন দাশ, সন্তোষ দাশ, সুজিত দাশ ও সুনিল দাশ জানান, তারা মইশকরম এলাকার চইল্যাখালিতে সকালে ১১টি নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতিটি নৌকা গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া হালদার মদুনাঘাট এলাকায় জেলেরা এক থেকে দেড় বালতি ডিম পেয়েছেন। তবে উজানে থাকা ৫ থেকে ১০টি স্পটের জেলেরা ডিম পাননি।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি হালদায় রয়েছি। নিচের দুটি স্পটের জেলেরা নমুনা ডিম পেয়েছেন। মাত্র কয়েকটি নৌকার জেলেরা দু-এক বালতি করে ডিম পেয়েছেন। বেশি পরিমাণে ডিম পাওয়া যায়নি। হালদার সব জায়গায় মা-মাছের আনাগোনা রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, বেশি পরিমাণে ডিম পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘হালদা থেকে ডিম সংগ্রহের পর তা ফোটানোর জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পোনা তৈরির জন্য চারটি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে বালুবাহী যান্ত্রিক বোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশা করছি উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে ডিম পাওয়া যাবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এপ্রিল-জুন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার যেমন- পানির তাপমাত্রা, স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদির মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘হালদায় অল্প কিছু মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। এগুলোকে আমরা নমুনা ডিম হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। নমুনা ডিম ছাড়ার অর্থ হলো মা-মাছ ডিম ছাড়ার জন্য প্রস্তুত। প্রতিবছরই মূল ডিম ছাড়ার আগেই মা-মাছগুলো নমুনা ডিম ছাড়ে। এটিই নিয়ম।’