প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও ফেসবুক, ইউটিউব দেখে গয়না তৈরি শেখেন। ৫ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে হাতে গয়না বানানোর কাজ শুরু করেন হৃদি রায়। বর্তমানে তিনি একজন সফল ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা।
হৃদি রায়ের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে । মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে স্নাতক পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছেন হাতে তৈরি গয়নার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গয়না মহল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি শুরু করেন গয়না মহলের কার্যক্রম। শ্রীমঙ্গল সদরের সবুজবাগ এলাকায় নিজের বাসায় শুরু করেন গয়না মহলের যাত্রা।
গয়না তৈরির পাশাপাশি হ্যান্ডপেইন্টের কাজও শুরু করেন। প্রথমদিকে শুধু গয়না বানাতেন। তাতে পোষাতো না। তখন শাড়ি, পাঞ্জাবি, জামা ইত্যাদিতে পেইন্টের কাজ শুরু করেন।
গয়না বানানোর জন্য হৃদি বিভিন্ন রঙের কাপড়, পুতি, লেইস, উল, কড়ি, সুতা, সুই, গাম ইত্যাদি ব্যবহার করেন।
হৃদির গয়না মহলের তৈরি গয়না ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গলের তরুণীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গয়না মহল নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রয়েছে একটি গ্রুপ।
প্রিয়াংকা বিশ্বাস নামে গয়না মহলের একজন ক্রেতা বলেন, ‘বর্তমানে যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের সাজসজ্জায় প্রধান চাহিদা থাকে হাতে তৈরি গয়না। আমরা যারা মফস্বলে থাকি আমাদের জন্য এসব হাতে বানানো গয়না পরা সবসময় হয়ে ওঠে না। কারণ এসব গয়নার বেশির ভাগ দোকান বড় বড় শহরে অবস্থিত, গয়না মহল থাকায় আমাদের খুব সুবিধা হয়েছে। এখানে কম দামে বিভিন্ন ডিজাইনের কানের দুল, চোকার, বালা, মালা সব কিছুই পাওয়া যায়।’
গয়না মহলের আরেক ক্রেতা রুপা রায় বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ হাতে বানানো গয়না। বিশেষ দিবসগুলো ছাড়া পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে গয়না মহলের গয়না আমাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে।’
সরেজমিন সবুজবাগে দেখা গেছে, নিজের বাসার একটি কক্ষেই গয়না তৈরি ও বিক্রি করছেন হৃদি। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে হাতে বানানো গয়নার প্রচুর চাহিদা ছিল কিন্তু জোগান ছিল না। সেই চাহিদা পূরণের জন্য আমি হাতে গয়না তৈরির কাজ শুরু করি। পড়াশোনার সঙ্গে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলাও আমার লক্ষ্য ছিল।’
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তাকে দেখতাম তারা নিজেদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। তাই আমিও তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে যে কাজটা পারি সেটা নিয়ে একটা প্ল্যাফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করি। আমার প্রাথমিক পুঁজি ছিল ৫ হাজার টাকা। এই পুঁজি দিয়ে প্রথমে গয়না তৈরির কাজ শুরু করি। তারপর গয়না তৈরির পাশাপাশি আস্তে আস্তে হ্যান্ডপেইন্টের কাজও শুরু করি।’
হৃদি আরও বলেন, ‘যদি আত্মবিশ্বাস রাখা যায় তবে সব চ্যালেঞ্জেই মোকাবিলা করা সম্ভব। আমি এই কাজটাকে আরও অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। গত তিন বছরে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার গয়না বিক্রি করেছি। আমার তৈরি করা বিভিন্ন পণ্যের দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে ক্রেতারা যদি কাস্টমাইজ করে কোনো গয়না নিতে চান সেক্ষেত্রে দাম একটু বেশি পড়ে।
বাংলাদেশ স্মার্ট ওমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিতালী দাশ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মফস্বলের প্রান্তিক পর্যায়ে এ রকম অনেক ছোট ছোট ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা আছেন। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা এগোতে পারছেন না। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি তাদের নিয়মিত ট্রেনিং এবং কিছু ঋণ সুবিধা দেয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা বড় অবদান রাখতে পারবেন।’