![চট্টগ্রামে ব্রয়লার মুরগির বাজার চড়া](uploads/2024/02/27/1709019588.Pic-Ctg(25.2.24)-(4).jpg)
চট্টগ্রামে দফায় দফায় বাড়ছে মুরগির দাম। ২০ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৪৫ টাকা। বাচ্চার সরবরাহ কম ও খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন চট্টগ্রামের মুরগি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পবিত্র শবে বরাত ও রোজার মাসকে পুঁজি করে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর।
চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রামে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১৬৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে গত ৯ ফেব্রুয়ারি কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৯০ টাকায়। গত সপ্তাহে কেজিতে নতুন করে আরও ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২০৫ টাকায়। বর্তমানে আরও ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ঠেকেছে ২১০ টাকা কেজি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, আজকের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ২১০ টাকায়।
মহানগরের কর্ণফুলী বাজারে মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ জসিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ফার্মগুলো বাচ্চা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তাই খামারিরা জোগান দিতে পারছেন না। বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ আছে। দাম বাড়লে সমস্যা আমাদেরই হয়। সব জায়গায় জবাবদিহি করতে হয়। আমাদেরই বা কী করার আছে?’
খবরের কাগজ মুরগির খামারি ও ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে। খামারিরা জানান, বাচ্চার সরবরাহ কম। তার ওপর দামও অনেক বেশি। বর্তমানে প্রতিটি ব্রয়লার বাচ্চা ৫৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খাবারের দাম বেড়েছে। গত বছর প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) খাবার (ফিড) ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি মুরগিতে উৎপাদন খরচ হয় ১৩০ টাকা। খামার থেকে প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাজেই খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ২১০ টাকা হওয়াটা অস্বাভাবিক বলে জানান খামারিরা। তবে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বাচ্চার দাম বাড়েনি। পাশাপাশি খামারিদের চাহিদা অনুসারে বাচ্চা সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ফিডের দাম তো নতুন করে বাড়েনি।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার মুরগির খামারি লিটন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ লিটন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার খামারে দুই হাজার বাচ্চা আছে। ৫৫ টাকায় প্রতি পিস বাচ্চা কিনেছি। খাবারের দামও বেড়েছে। মুরগির দাম ওঠানামা করে। আমরা এখন ১৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি করছি। খুচরায় ২১০ টাকা বিক্রি হওয়া মানেই দামে কারসাজি চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকার খামারি মোহাম্মদ সাইফুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে মুরগির ব্যবসা করছি। বর্তমানে বাচ্চাসংকটের কারণে আমার তিনটি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। খাবারের দাম কমলে ও বাচ্চার সরবরাহ বাড়লে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা আরও বাড়তে।’
লোহাগাড়ার পোলট্রি খামারি জসিম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, এক দিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা এখন বাজারে নেই। খামারিরা ইচ্ছা করলেও বাচ্চা কিনতে পারছেন না। তার খামারেও ব্রয়লারের শেড খালি পড়ে আছে উল্লেখ করে বলেন, কিছু অখ্যাত কোম্পানি এক দিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি করছে প্রতিটি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তাও সীমিত আকারে। অনেক খামারের শেড খালি পড়ে আছে।
আসন্ন রমজানে মুরগির অভাব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় কোম্পানিগুলো নিজেরাই মুরগি পালন করছে। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে তারাই ব্যবসা করবে। বর্তমানে এক দিন বয়সী একটি বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। একটি পূর্ণবয়স্ক মুরগি বাজারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত দুই কেজি খাবার খায়। প্রতি কেজি ৭২ টাকা ধরলে দাম পড়ে ১৪৪ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে পরিচর্যা ও ওষুধ খরচ। যে কারণে খামারির খুব একটা লাভ হয় না। এখানে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে।
সীতাকুণ্ডের ছকিনা পোলট্রির স্বত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে হ্যাচারিগুলো নির্দিষ্ট কিছু চুক্তিবদ্ধ ফার্মকে বাচ্চা সরবরাহ করছে। এর বাইরে তারা অন্য খামারিকে দিচ্ছে না। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক খামার। উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে বাজারদরে।
নাহার অ্যাগ্রোর কর্মকর্তা মোহাম্মদ রানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা বাচ্চা ৪৯ টাকায় বিক্রি করছি। খাবার (ফিড) বিক্রি করছি ৭২ টাকা কেজি। খাবারের দাম নতুন করে বাড়েনি। পর্যাপ্ত পরিমাণে বাচ্চার সরবরাহ দিচ্ছি। খুচরায় মুরগির দাম বাড়ার কথা না। কেন বাড়ছে, সেটি বলতে পারছি না।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবির খবরের কাগজকে জানান, চাহিদা ও জোগানের ওপর মুরগির দাম নির্ভর করে। বর্তমানে চাহিদা বাড়ছে, তাই দামও বাড়ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ফিডের দামও। তবে দাম বাড়লেও তাতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। সরকার এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম বেঁধে দিলেও ফিডের দাম সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই লাভের টাকা বাচ্চা ও ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটেই চলে যায়।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সামনে শবে বরাত। এরপর আসছে রোজা। গত বছরও এ সময়ে মুরগির দাম বেড়ে গিয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কাজেই বারবার এটিই প্রমাণিত হচ্ছে, সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। প্রশাসনের অভিযান বা নজরদারি দৃশ্যমান নয়। ফলে যে যার মতো করে দাম নিচ্ছেন। সরকারের উচিত ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছি। কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে আমরা ছাড় দেব না। পাশাপাশি অভিযোগ জানালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’