চুয়াডাঙ্গার ছোট-বড় আটটি কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড়, দর কষাকষি আর পশু বাছাইয়ের ব্যস্ত জেলার মানুষ। এই ঈদুল আজহা উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় পশু বেচাকেনায় এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রায় দুই লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করা গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। জেলার প্রয়োজন আনুমানিক এক লাখ ২৫ হাজার পশু। ফলে প্রায় ৭৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।
বর্তমানে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার গরু, ১৪৫টি মহিষ, দেড় লাখ ছাগল এবং প্রায় চার হাজার ভেড়া রয়েছে। বড় গরুর চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও মাঝারি গরু এবং ছাগলের বিক্রি বেশ ভালো। মাঝারি আকারের গরু বিক্রি করে অনেকে ভালো লাভও করছেন।
আলমডাঙ্গা পশুরহাট চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক হাট, যেখানে সবচেয়ে বেশি পশু কেনাবেচা হয়। এছাড়া ডুগডুগি, শিয়ালমারি, গোকুলখালি, নয়মাইল ভূলটিয়া-সহ জেলার অন্যান্য হাটগুলোতেও জমজমাট বেচাকেনা চলছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারি পশুহাট পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। তারা হাটের অবকাঠামো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি ও শৌচাগার, যান চলাচলের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও জাল নোট শনাক্তকরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও, যারা হাটজুড়ে নজরদারি এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করছেন।
হাটে বিক্রেতা কালাম আলী বলেন, বড় গরুর ক্রেতা নেই বললেই চলে। একটা গরু বড় করতে প্রচুর খরচ লাগে, কিন্তু হাটে দাম ওঠে না। এতে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।
ছাগল ক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ছাগলের দাম কিছুটা কম। পাশাপাশি পশুও অনেক বেশি এসেছে। দেখে-শুনে দামাদামি করে একটা ছাগল কিনব ভাবছি।
ছাগল বিক্রেতা হাসিবুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করা ছাগল নিয়ে এসেছি। হাটে ভালোই ভিড়, ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দেব।
গরু বিক্রেতা সুমন হোসেন কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বড় গরু লালন-পালন করতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু হাটে তেমন চাহিদা নেই। মাঝারি গরুরই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. শামীমুজ্জামান বলেন, জেলাজুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে আটটি হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। আমাদের টিম প্রত্যেক হাটে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তাৎক্ষণিক চিকিৎসা, নিরাপদ কেনাবেচা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের পরামর্শ দিতেও আমরা প্রস্তুত। এবারের মৌসুমে আমরা এক হাজার কোটি টাকার পশু বাণিজ্য আশা করছি।
মিজানুর রহমান/অমিয়/