![এবার খেসারি, ছোলা, অ্যাংকর ডালের দামেও লাফ](uploads/2024/02/27/1709050196.Dal.jpg)
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, রমজানে খাদ্যপণ্যের সংকট হবে না। যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। তারপরও অন্যান্য পণ্যের মতো ইফতারের আইটেম তৈরির কাজে ব্যবহৃত খেসারি, অ্যাংকর ও ছোলার ডালের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ তৈরিতে এসব ডাল ও বেসন লাগে। রমজান মাস শুরুর আগেই সপ্তাহের ব্যবধানে এসব ডালের কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। খেসারির ডালে ৫ টাকা, অ্যাংকরে ১০ টাকা, ছোলার ডালে ৫ টাকা বেড়েছে। পাইকারি মোকামে তেমন না বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে বেড়ে গেছে দাম। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বেশি হলে এসব পণ্যের দাম আর বাড়বে না। বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
রমজানে ছোটখাটো বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অভিজাত বাড়ি, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ইফতারের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হিসেবে পেঁয়াজু, বেগুনির চাহিদা বেড়ে যায়। ইফতারের এসব আইটেমে খেসারি, অ্যাংকর ও ছোলার ডালের বেসন ব্যবহার করা হয়। এ জন্য দামও বাড়তে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি খেসারির ডালের দাম ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে। ৭০ টাকার অ্যাংকর ৮০ টাকা ও ১০৫ টাকা ছোলার ডাল ১১০ টাকা কেজি দরে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে।
দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ারসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, মসুর ডালের দাম বাড়েনি। আগের মতোই মানভেদে ১১০-১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুগ ডালের দাম মাসখানেক আগেই কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে খেসারি ডালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা, অ্যাংকরের ডাল ১০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকা ও ছোলার ডালে ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্য বাজারেও এসব ডালের দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার মায়ের দোয়া স্টোরের শাহ আলম বলেন, গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে পাইকারিতে খেসারির ডালের দাম বাড়তে শুরু করে। এ জন্য খুচরা বাজারেও বাড়ছে। আগে ১০৫ টাকা বিক্রি করা হলেও এখন ১১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাড়তি দামের ব্যাপারে কৃষি মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের বলেন, মসুর ডাল ও মুগ ডালের দাম বাড়েনি। আগের মতোই মুগ ডাল ১৬০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১০৫ টাকা। তবে অ্যাংকর ডালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও এখন ৮০ টাকা। যা গত বছরের রমজানে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজু ও বেগুনির কাজে অনেক বেসন লাগে। এটা ডাল থেকে করা হয়। তাই বাড়ছে চাহিদা, দামও বাড়ছে।
আমদানিকারকরা বলছেন, রোজায় ছোলার চাহিদা বেশি থাকে। খেসারি ও অ্যাংকর ডালের চাহিদাও বাড়ে। সে জন্য ব্যবসায়ীরা সাধারণত রোজাকেন্দ্রিক এসব পণ্য আমদানিও করেন বেশি। কিন্তু ডলারের দাম বেশি থাকায় এবার আমদানি খরচ বেড়েছে। ছোলা ও বিভিন্ন পদের ডালের দামে ডলারের বিনিময় হারের প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমদানি খরচ বেশি। এ জন্য এবারের রমজানে অ্যাংকরের দাম বাড়তি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার বাড়েনি। এখন কাস্টমার কমে গেছে। মৌলভীবাজারে খেসারি ৯০ টাকা কেজি, অ্যাংকর ৬১-৬২ টাকা ও ছোলার ডাল ৯৬ টাকা। আশা করি, বাজার যে অবস্থায় আছে, রমজানের মধ্যে সেভাবেই থাকবে। সরবরাহ বাড়াতে হবে। নতুন করে দাম বাড়বে না।’
চাহিদার কাছাকাছি দেশে মসুর ডাল উৎপাদন হলেও অন্য ডাল হয় না। এ জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের ডাল ও ছোলার মতো ডালজাতীয় পণ্য ১৩-১৪ লাখ টন আমদানি করতে হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি করা হচ্ছে। করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বাজারে ডালজাতীয় পণ্যের দাম মোটামুটি কম ছিল। যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বছরের ব্যবধানে অনেক দাম বেড়েছে। সরবরাহ থাকলেও রমজান শুরুর আগেই সপ্তাহের ব্যবধানে ডালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গেছে।