![বিশ্ববাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম](uploads/2024/04/02/1712041809.china.jpg)
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সোমবার (১ মার্চ) আবারও বেড়েছে। ওপেক প্লাসের উৎপাদন কমানোর শঙ্কা, রাশিয়ার তেল পরিশোধনাগারগুলোতে হামলা এবং চীনের উৎপাদন কর্মকাণ্ড শক্তিশালী হওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে এমন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে আদর্শ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সোমবার ২৪ সেন্ট বেড়েছে। এ দিন জ্বালানি তেলের দাম দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৭ ডলার ২৪ সেন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম গত সপ্তাহে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধির পরে সোমবার প্রতি ব্যারেলে ২৮ সেন্ট বেড়েছে। এ দিন জ্বালানি তেলের দাম আগের তুলনায় দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৮৩ ডলার ৪৫ সেন্টে পৌঁছেছে।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক) ও তাদের মিত্ররা, যারা ওপেক প্লাস নামে পরিচিত একটি গ্রুপ, তাদের জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমানোর সময়সীমা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় গত মাসের মাঝামাঝি থেকে ব্রেন্টের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলারের ওপরে ছিল এবং এভাবে মার্চে টানা তৃতীয় মাসে উভয় বেঞ্চমার্কেই (ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুড) জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক বেশি ছিল। অন্যদিকে জুন মাসের শেষের দিকে উৎপাদন কমানোর জন্য ওপেক ও তার মিত্রদের সম্মতি, উত্তর গোলার্ধে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গ্রীষ্মকালীন সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।
রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক গত শুক্রবার বলেছেন, তাদের তেল কোম্পানিগুলো অন্য ওপেক প্লাস সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সমানভাবে উৎপাদন হ্রাস কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) রপ্তানির পরিবর্তে উৎপাদন কমানোর দিকে মনোনিবেশ করবে।
খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের ড্রোন হামলা রাশিয়ার বেশ কয়েকটি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগারকে অকার্যকর করে দিয়েছে, যা রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিকে কমিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এনার্জি অ্যাসপেক্টসের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ভারী ফিডস্টক (জৈব জ্বালানি তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উৎস) সরবরাহের ওপর প্রভাব ফেলছে, যা ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শক্তিশালী চাহিদার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
পরামর্শ সংস্থাটি আরও জানায়, আক্রমণের কারণে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা দৈনিক প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল (বিপিডি) কমে গেছে। এই হামলা দেশটির জ্বালানি তেল রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে, যা চীনা ও ভারতীয় শোধনাগারগুলোতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইউরোপে তেলের চাহিদা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল ছিল। ফেব্রুয়ারিতে বছরের হিসাবে দৈনিক ১ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে দৈনিক জ্বালানি তেলের চাহিদা ২ লাখ ব্যারেল সংকুচিত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
রয়টার্স জানায়, ইউরোপের দৃঢ় চাহিদা, মার্কিন সরবরাহ বৃদ্ধিতে শিথিলতা এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওপেক প্লাসের উৎপাদন কমানোর সম্ভাব্য সম্প্রসারণ, চীনের দীর্ঘস্থায়ী দুর্বল চাহিদা থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন জ্বালানি বিভাগের স্বাধীন পরিসংখ্যান সংস্থা এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন ডিসেম্বরের রেকর্ড শীর্ষ অবস্থা থেকে জানুয়ারিতে ৬ শতাংশ কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ব্রেন্টের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার হবে বলে আমাদের পূর্বাভাসের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। অর্থাৎ এই সময়ের দাম পূর্বাভাসের তুলনায় আরও বাড়তে পারে।