ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৭০০ টন লিচু ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৭০০ টন লিচু ফলনের সম্ভাবনা
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী লিচুর মুকুল এসেছে। ছবি: খবরের কাগজ

লিচুর জন্য পরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ২৮১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। 

ঠাকুরগাঁওয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচুর মুকুল। জেলায় বেশি চাষ হয় চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু। এখানকার আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রচুর লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। অন্য বছরে তুলনায় এবার লিচুর মুকুল বেশি এসেছে বলে দাবি বাগান মালিকদের। গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন চাষিরা। 

গোবিন্দনগর মুন্সিরহাট গ্রামের লিচুবাগান মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর মুকুল অনেক বেশি এসেছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে এ বছর লিচুর উৎপাদন অনেক বাড়বে। আমরা দিন-রাত পরিচর্যা করছি। ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হব। প্রতিবছর লিচুর মুকুল আসার সময় আমাদের সেচ দিতে হয়। এতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। তবে এবার মৌসুমের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমাদের সেচ-খরচ কমেছে।’ 

অপর লিচুবাগান মালিক রানা ইসলাম বলেন, ‘দিন দিন শ্রমিক খরচ এবং কীটনাশক খরচ বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা লিচুর দাম পাই না। আমাদের জেলায় লিচু থেকে অন্য পণ্য তৈরি করা যায়- এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে আমরা লাভবান হব। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, আমাদের জেলায় সরকার যেন লিচুকেন্দ্রিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।’ 

ঠাকুরগাঁওয়ের লিচুবাগান মালিক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের লিচু সুমিষ্ট এবং অনেক বড় হয়। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আমাদের এখান থেকে লিচু সরবরাহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে এসে পাইকারি দরে বাগানের সব লিচু কিনে নেন।’ 

লিচুর মৌসুমে বাগানগুলোতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। লিচুবাগানে কাজ করা শ্রমিক শরীফ ইসলাম বলেন, ‘লিচুর মৌসুমে আমাদের অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়।  আমরা লিচুর বাগান পাহারা দিই। পরবর্তী সময়ে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহের কাজ করি। এতে আমাদের সংসার চলে।’ 

চট্টগ্রাম থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, ‘গত বছরে লিচুর মৌসুমে হরতাল-অবরোধ থাকায় ঠাকুরগাঁও থেকে লিচু নিয়ে যেতে সমস্যা হয়েছে। যানবাহনের ভাড়া বাড়ায় লাভও হয়নি। এ বছর ৫টি লিচুবাগান কিনেছি। ভালো করে পরিচর্যা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার লাভ হবে বলে আশা করছি।’ 

জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শামীমা নাজনীন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ২৮১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আশা করছি জেলায় এবার ১ হাজার ৭০০ টন লিচু উৎপাদিত হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা বাগান মালিকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।’

নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক কমল ২ শতাংশ

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১৮ এএম
নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক কমল ২ শতাংশ
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদপত্রশিল্পের মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক হার ২ শতাংশ কমানো হয়েছে। 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার দিন সোমবার (২ জুন) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

আইআরডির আদেশে বলা হয়েছে, সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশকদের পক্ষ থেকে আমদানি করা নিউজপ্রিন্ট কাগজের শুল্ক কর হবে ৩ শতাংশ। তবে এই শুল্কহার কার্যকর হবে তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যৌথভাবে নির্ধারিত বার্ষিক এনটাইটেলমেন্ট বা কোটা অনুযায়ী কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে। এই শুল্কছাড়ের সুবিধা পেতে হলে আমদানি করা নিউজপ্রিন্ট প্রস্থে অনূর্ধ্ব ২৮ ইঞ্চি হতে হবে।

এর আগে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনটি প্রস্তাব করেন। সেগুলো হলো, নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করা; আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং সংবাদপত্রশিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট কর অবলোপন করা বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নির্ধারণ করা। 

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শুধু নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক ২ শতাংশ কমানো হয়েছে। বাকি দুই প্রস্তাবের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ নিয়ে বাজেট বক্তব্যেও কিছু বলেননি অর্থ উপদেষ্টা। 

প্রাক-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদপত্রশিল্পের ওপর সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট কর আরোপ করা হয়, কিন্তু কিছু শিল্প খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর রয়েছে। তাই সংবাদপত্রশিল্পে এত বেশি করপোরেট কর বসানোর কোনো যুক্তি নেই। করপোরেট কর না থাকলেই ভালো, আর যদি থাকেও, তা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। 

ওই আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছিলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, আপনাদের জন্য কিছু করা যায় কি না। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করব।’ বৈঠকে চেয়ারম্যান অগ্রিম কর ও আগাম কর (এটি) কমানোর আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু নিউজপ্রিন্ট আমদানির শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয় বাজেটে।

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় কিছুই বলা হয়নি

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১১ এএম
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় কিছুই বলা হয়নি
মোস্তফা কে মুজেরি

এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়- এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের নীতি কাঠামো এবং সংস্কার উদ্যোগ 
নেওয়া দরকার, সেখানে ঘাটতি রয়ে গেছে। বর্তমান ব্যবস্থায় বৈষম্য কমানোর পরিবর্তে তা আরও বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের দিকেও আমাদের নিয়ে যেতে পারছে না। বৈষম্যহীন এবং টেকসই কাঠামো গড়ে তোলার জন্য আমাদের কিছু কৌশলগত উদ্যোগ বা সংস্কার উদ্যোগ দরকার, যার মাধ্যমে বিদ্যমান কাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারব এবং কাঙ্ক্ষিত কাঠামোর দিকে এগিয়ে যেতে পারব। এর জন্য যে কৌশলগত সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এবারের বাজেটে অন্তত দু-একটা ক্ষেত্রে এই ধরনের কৌশলগত সংস্কারের সূচনাটা হতে পারত। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের সংস্কার উদ্যোগকে বেগবান করা যেত। কিন্তু এবারের বাজেটে এই ধরনের কোনো সংস্কার উদ্যোগের পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এটা অনেক সহজ হতো। যা রাজনৈতিক সরকারের জন্য কঠিন হয়। কারণ তাদের অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশ থাকে। গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষার বিষয় থাকে। এই সরকারের তেমন কোনো চাপ নেই। ফলে তারা সহজেই সংস্কার উদ্যোগগুলোতে মনোযোগ দিতে পারত। এটা তাদের সামনে একটা সুযোগও ছিল। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে নাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো তো এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সফলতার মুখ দেখে নাই। যদিও বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু এটা অর্জন করার ক্ষেত্রে যে সমন্বিত নীতি কাঠামো দরকার, সেটা নেই। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এই লক্ষ্যমাত্রা তখনই অর্জন করা সম্ভব হবে যদি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হয়। বর্তমানে বিনিয়োগ তলানিতে রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা দরকার। এক্ষেত্রে এবারের বাজেটে এই বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। শুধুমাত্র বিনিয়োগ সম্মেলন করে বা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে হবে।

বাজেটে যদি এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথ নকশা থাকতো তাহলে একদিকে বিনিয়োগ বাড়তো অন্যদিকে বাজেটে যে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও অর্জন করা যেত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এবারের বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে তেমন কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টিও সেখানে নেই। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক 

বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হয়নি: ডিসিসিআই

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১৪ এএম
বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হয়নি: ডিসিসিআই
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই)

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সার্বিকভাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হয়নি। কারণ, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

তাসকীন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বেশি মাত্রায় ব্যাংকনির্ভর হওয়া একটি নেতিবাচক দিক। এবারের বাজেটে ব্যবসায় গতি আনার জন্য তেমন কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ সময় তাসকীন আহমেদ আরও বলেন, ‘বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতি কিছুটা মন্থর হয়ে যাবে। এ ছাড়া আর্থিক খাত থেকে অধিক হারে ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে করমুক্ত পণ্যের ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপকে আমরা সঠিক মনে করছি না। এতে ব্যবসার কার্যকরী মূলধন কমে যাবে।’

প্রতিক্রিয়ায় তাসকীন আহমেদ আরও বলেন, ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রে আয়সীমায় ৫ শতাংশের সীমা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে দেশের ৫০ শতাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বাড়তি করের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি।

এ সময় অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় এই খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে বলেও মনে করছে ঢাকা চেম্বার।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আরও বলেন, ‘বাজেটে এলএনজিসহ ব্যবসার কাঁচামাল আমদানিতে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। এর ফলে আমাদের হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে। আমাদের বেসরকারি খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। তবে বাজেটে ব্যবসাবান্ধব তেমন কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। এসএমই খাতে আমাদের দেশের সর্বমোট শ্রমশক্তির ৫০ শতাংশ ও ৮০ লাখের বেশি মানুষ জড়িত। অথচ বাজেটে এই খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।’

স্টার্টআপ খাত নিয়ে তাসকীন আহমেদ বলেন, এই খাতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে অনলাইন ব্যবসার লেনদেনে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে অনলাইনে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাজেট ব্যয়ের দিক থেকে গতানুগতিক, আয়ের দিক থেকে সাহসী

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:০২ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:১৮ এএম
বাজেট ব্যয়ের দিক থেকে গতানুগতিক, আয়ের দিক থেকে সাহসী
ড. জাহিদ হোসেন

অর্থায়নের সীমাবদ্ধতার মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। এদিক থেকে বাজেট গতানুগতিক। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা আদায় করা সম্ভব হবে না। আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারের সেই সক্ষমতাও তৈরি হবে না। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আদায় ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর ৪ লাখ আদায় করতে করতে পারব কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। সেখানে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা আদায় কীভাবে সম্ভব? আর রাজস্ব আদায় না হলে সরকারের ঘাটতি বেড়ে যাবে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাজেট ঘাটতি হিসেবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা সহনীয় আছে। এটা অর্থায়নযোগ্য।

তবে এর বেশি হলে অর্থনীতিতে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ, সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সব খাতে চাপ অনেক বেড়ে যাবে। এটা সহ্য করা কঠিন হয়ে যাবে। আয়করে অব্যাহতির ক্ষেত্রে যাকে ধরা যায় না, তাকেও ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, যাকে ছোঁয়া যায় না তাকেও ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে অব্যাহতি ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে। আর দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমদানি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তারা উদ্যোক্তারা যে সুরক্ষা পেত, সে ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট দুটোই কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। 

তবে এ ক্ষেত্রে দেশীয় উদ্যোক্তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেন, সেটাই দেখার বিষয়। ঘাটতি পূরণে ব্যাংকঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যেই থাকতে হবে। আশা করছি, আগামী অর্থবছর আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও কিছুটা বাড়বে। আর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই যদি সরকার ঋণ নেয়, তাহলে সুদের হারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সরকার যদি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নেয়, তাহলে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর ব্যক্তি খাতে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। শেয়ারবাজারকে চাঙা করতে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক। 

এ ছাড়া বিনিয়োগের জন্য যে কাঠামোগত সংস্কার দরকার, সেই বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্যাংক খাতের ক্ষয় বন্ধ করা গেলেও এখনো স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোই বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নতুন কোনো পথনকশা নেই। বাজেট বক্তৃতায় বলা উচিত ছিল, তারা চলে যাওয়ার আগে কোন কোন সংস্কার শেষ হবে। কয়টা ব্যাংককে নিষ্পত্তি করে দিয়ে যাবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কাঠামোগত সমস্যাগুলো আছে, সংস্কারের মাধ্যমে সেই বাধাগুলো দূর করার ক্ষেত্রেও তেমন কোনো পদক্ষেপের কথা বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়নি। এটা অবশ্যই থাকা উচিত ছিল। 

সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক

ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণেই নির্ভরতা বাড়ছে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:২৫ এএম
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণেই নির্ভরতা বাড়ছে
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকঋণেই বেশি নির্ভর করার পরিকল্পনা করেছে। এই খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে, যা মোট ঘাটতির ৪৮ শতাংশ। 

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করছি। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের চেয়ে কিছুটা কম হলেও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।  

বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার দুইভাবে ঋণ নেয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায় ব্যাংকগুলোর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। 

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা বলছেন, বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়লে একদিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যায়, যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়। তারপরও আগামী বাজেটে সরকার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণেই নির্ভর করতে চাইছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যাংক থেকে যদি সরকার ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাহলে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া, ব্যাংকের আমানত বাড়ানোর হারও খুব বেশি না। গত মার্চ শেষে ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। যদি আগামী অর্থবছরে সেটা বেড়ে ১ লাখ ৫০ বা ৫৫ হাজার কোটি টাকাও হয়, এর মধ্য থেকে সরকারই যদি ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয় তাহলে বেসরকারি খাতে দেওয়ার মতো ঋণের অঙ্কটা খুব বেশি থাকে না। যেহেতু সরকারি ঋণ ঝুঁকিবিহীন এবং রিটার্নও ভালো- এমন বাস্তবতায় ব্যাংকাররা বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে খুব বেশি আগ্রহী হবেন না- এটাই স্বাভাবিক। সেদিক থেকে বেসরকারি খাতের ঋণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি রাজস্ব আয়ের ঘাটতি অর্জিত না হয় এবং সরকার ব্যয় কমাতে না পারে সে ক্ষেত্রে ঘাটতি আরও বেশি হবে। তখন ব্যাংকঋণের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতে ঋণ আরও সংকুচিত হবে।’ 

প্রতিবারই অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়া বাড়ে। বিশেষ করে জুন মাসে। চলতি অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গত ২১ মে পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। ফলে সামগ্রিকভাবে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।