![আগের দরই আছে চালের বাজারে](uploads/2024/04/18/1713424748.CTG-Rice-market.jpg)
চট্টগ্রামে একমাস আগে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছিল। রোজার মাসে চালের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকা ও সামনে বোরো মৌসুম থাকায় নতুন করে আর পণ্যটির দাম বাড়েনি। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে আগের বাড়তি দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে আমনের মৌসুমে চালের দাম কমার আশা দিলেও সে কথা রাখতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। যদিও বরাবরের মতো এবারও বোরো মৌসুমে বস্তাপ্রতি চালে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমার আশ্বাস দিচ্ছেন চট্টগ্রামের চাল ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা চাইলেই ভরা মৌসুমে চালের দাম ক্রেতার নাগালে রাখা সম্ভব বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
গত জানুয়ারি মাসে আমনের ভরা মৌসুমে বস্তাপ্রতি চালে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আমনে মৌসুম শেষ ও ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে বস্তাপ্রতি চালে নতুন করে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সে সময় মোটা সেদ্ধ চালের বস্তায় নতুন করে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা, স্বর্ণা চালে ১৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪৫০ টাকা, নুরজাহান চালে ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা, মিনিকেট চালে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, জিরাশাইল সেদ্ধ চালে ১৬০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৪৬০ টাকা ও নাজিরশাইল সেদ্ধ চালের বস্তায় ১০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে মিনিকেট আতপ চালে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, পাইজামে ১৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, বেতি ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা ও কাটারি আতপ চাল ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকায়। বর্তমানে সেই বাড়তি দামটাই স্থির রয়েছে চট্টগ্রামে চালের পাইকারি বাজারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়তলীর এক চাল ব্যবসায়ী খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোজায় চালের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। তাই চালের বাজারে নতুন করে আর দাম বাড়েনি। সামনে বোরোর মৌসুম আসছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার সম্ভাবনা আছে। তবে সরকার ছয় ধরনের তথ্য দিয়ে মিলারদের চাল বাজারজাত করতে নির্দেশ দিয়েছে। মিলাররা সেটা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। এ নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চালের বাজার আগের বাড়তি দরেই স্থির রয়েছে। নতুন করে আর দাম বাড়েনি। তার ওপর সামনে বোরো মৌসুম আসছে। কৃষকরা সামনে ধান কাটা শুরু করবেন। তখন বাজারে চালের সরবরাহ আরও বাড়বে, দামটা কমতির দিকে থাকবে। ভরা মৌসুমে সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি দুসপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কমে আসবে।’
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ভরা আমনের মৌসুমে ক্রেতারা ন্যায্যদামে চাল কিনতে পারেনি। ওই মৌসুম শেষ হতে না হতেই সরকার ধান সংগ্রহ এবং কৃষকের ধানের দাম বাড়ানোর অজুহাতে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে চাল বিক্রির চিত্র আমরা দেখেছি। সামনে বোরো মৌসুম। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে। কাজেই এই সময়টাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে কৃষক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যন্ত সমানভাবে নজরদারি চালাতে হবে। সরকার চালের বস্তায় ছয় ধরনের তথ্য থাকার বিষয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না দেখতে হবে। তাহলে কেউ চালের দামে কারসাজি করার সুযোগ আর পাবে না।’
চালের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে বস্তার ওপর ছয়টি তথ্য লেখা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্র জারি করে সরকার।
সরকারের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ধান বা চালের জাতের নাম, উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, নিট ওজন এবং মিলগেট মূল্যের উল্লেখ। তবে সব মেনে নিলেও উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেট মূল্যে আপত্তি রয়েছে চট্টগ্রামের মিলারদের।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ১৪ এপ্রিল থেকে আমরা চালের বাজারে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি। সেখানে দেখেছি বস্তার ওপর তথ্য দেওয়ার বিষয়ে সরকারের যে নির্দেশনা ছিল মিলাররা তা এখনো বাস্তবায়ন করেননি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নগরের বিভিন্ন বাজার তদারকি করছি। কোনো অনিয়ম বা কারসাজির প্রমাণ পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’