![জয়পুরহাটে কমেছে সবজির দাম](uploads/2024/04/18/1713425314.Jaypurhat-cucumber.jpg)
খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটের হাটবাজারগুলোতে সরবরাহ বেশি থাকায় বেগুন, শসা, করলাসহ অন্যান্য সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। বাজারে সবজিগুলোর দাম এখন এতই কম যে বিক্রি করে হাটের খাজনা ও ভ্যান ভাড়া উঠছে না কৃষকদের। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
জেলা শহরের নতুনহাট সবজির পাইকারি বাজারে নিজেদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ফসলের দাম কিছুটা পাওয়া গেলেও বেগুন, শসা, করলার বাজার দর এখন খুবই নিম্নমুখী। কথা হয় সবজি বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার ধারকী চৌধুরীপাড়ার মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ১৫ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন। নতুনহাটে এক মণ শসা বিক্রি করেন ১০০ টাকায়। কেজি হিসাবে যার দাম পড়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা।
হাটে শসার প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মণ পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। দোগাছী ইউনিয়নের চকভারুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘শসা বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। শ্রমিকের মজুরি, পরিচর্যা ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। কিন্ত এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত শসা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায়।’
বর্তমানে শসা বাজারে নিয়ে গেলে ভ্যান ভাড়াও উঠছে না বলে মন্তব্য করেন কৃষক আবদুল লতিফ। পাঁচবিবি উপজেলার কাঁশড়া গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে আসা কৃষক দিলিপ কুমার জানান, এবার ২৫ শতাংশ জমিতে উন্নতমানের নবাব জাতের করলা চাষ করেছেন। সেই করলা ৫০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। কেজি হিসাবে যার দাম পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সেই করলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
সদর উপজেলার চকমোহন গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এক মণ বেগুন পাইকারি বিক্রি করেন ৮০ টাকা। যা কেজি হিসাবে পড়ে ২ টাকা। বাড়ি থেকে হাটে আসার জন্য ৬০ টাকা ভ্যান ভাড়া এবং হাটের খাজনা দিতে হয়েছে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে এই বেগুন এখন ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নিজের শ্রমের কোনো দামই নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে পটোলও প্রতি মণ ৫৬০ টাকা বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা লোকসান গুনছেন বলে জানান বিষ্ণুপুর গ্রামের পটোল চাষি এনামুল হক। গতকাল বুধবার সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ টাকা কেজির বেগুন ২০ টাকা, ১০০ টাকা কেজির পটোল ৬০ টাকা, ৭০ টাকা কেজির করলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতিটি লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ৬০ টাকা কেজি গাজর ৩০ টাকা, ৮০ টাকার টমেটো ২০ টাকা, ৭০ টাকার ঢেঁড়শ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ৮০ টাকার বরবটি ৬০ টাকা, ৫০ টাকার পেঁপে ৪০ টাকা, ৮০ টাকার কাঁকরোল ৬০ টাকা, ৭০ টাকার লতিরাজ কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ৪০ টাকার মিষ্টি লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ১০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজির দাম কমছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে শাকসবজি চাষের প্রস্তুতি শেষ করেন জেলার কৃষকরা। জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে আগাম জাতের সবজিও রয়েছে। এতে সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। জয়পুরহাট জেলার হাটবাজারগুলোতে করলা, শসা ও বেগুনের অতিরিক্ত সরবরাহ থাকার কারণে দাম কমেছে বলে মন্তব্য করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন। সূত্র: বাসস